দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৬)
, ২৯ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৬ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৯ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

বিখ্যাত ছাহাবী হযরত সুহাইব রুমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেয়ার কারণে কাফির, মুশরিকরা উনার উপর অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। যে অত্যাচারের কোন সীমা ছিল না। অতঃপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যাওয়ার জন্য পবিত্র মদীনা শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা শুরু করেন। তিনি যখন মক্কা শরীফ ছেড়ে রওয়ানা দিলেন তখন কতিপয় কাফির-মুশরিকেরা পথিমধ্যে উনার পিছু নিল এবং নানা কথা বলে উনার গতিরোধ করতে চাইলো। এমতাবস্থায় হযরত সুহাইব রুমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তীর-বর্শাফলক ভালভাবে ঠিক করে নিলেন এবং কাফিরদেরকে শাসিয়ে বলতে লাগলেন- ‘তোমরাতো ভালভাবেই জান যে, আমি তোমাদের চেয়ে পাকা তীরন্দাজ! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! যতক্ষণ পর্যন্ত আমার তীরদানীর মধ্যে একটি তীরও অবশিষ্ট থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার নিকট ভিড়তে পারবে না। তীর শেষ হয়ে গেলে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নিকট তরবারী আছে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আমার সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে পারবে না। অতএব তোমাদের মধ্যে যার ইচ্ছা সে আমার সাথে লড়াইয়ে নামুক কিংবা যদি বাহুতে শক্তি থাকে তাহলেও আমার সাথে লড়াই করুক। আর যদি দুনিয়াবী সম্পদ কামনায় তোমরা এতটুকু চাও যে, আমার সম্পদের ঠিকানা তোমাদেরকে বলে দিই, তাতেও প্রস্তুত আছি।’ ইতোমধ্যে যেহেতু কাফিররা হযরত সুহাইব রুমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত হুংকারে ঘাবড়ে গেছে তাই সম্পদের প্রস্তাব শুনে সাথে সাথে রাজি হয়ে সমস্বরে বলে উঠলো- আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আপনার সম্পদের কথাই আমাদেরকে বাতলিয়ে দিন। হযরত সুহাইব রুমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অতঃপর কাফির দুর্বৃত্তদেরকে উনার মাল-সম্পদের ঠিকানা বলে দিয়ে নিরাপদে পবিত্র মদীনা শরীফের দিকে রওয়ানা হলেন। যখন তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে গিয়ে পৌঁছলেন এবং ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করলেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরপর দু’বার ইরশাদ মুবারক করলেন- ‘হে আবু ইয়াহ্ইয়া! আপনার সওদা-কারবার সফলকাম হয়েছে, সফলকাম হয়েছে’। সুবহানাল্লাহ!
হযরত সুহাইব রুমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানী কুওওয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল:
হযরত সুহাইব রুমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত হুংকারে জানবাজী রাখার সাথে সাথে কাফিরদেরকে নিজের ধন-সম্পদের ঠিকানাও দিয়ে দিলেন। যা অতি উত্তম সওদা বলে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রশংসাবাক্য মুবারক উচ্চারণ করেছেন। শুধু এতটুকুই নয় এই ঈমানদীপ্ত হিকমতপূর্ণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “যারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টির পথে নিজেদের জীবনকে বিসর্জন করে দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হয় না। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু, মেহেরবান।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-২০৭)
দ্বীন ইসলামের জন্য জান-মাল কুরবানী করতে সদা প্রস্তুত থেকে হযরত সুহাইব রুমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অনন্য মর্যাদা লাভ:
মূলতঃ সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মতে পথে, মুহব্বতে অর্থাৎ দ্বীন ইসলামের জন্য নিজেদের মাল-জান কুরবান করে দিয়েছেন। উনাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হযরত সুহাইব রুমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। যিনি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খাছ বন্ধু ছিলেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের পরবর্তী তিনদিন মুসলিম মিল্লাতের খলীফা মনোনীত না হওয়া পর্যন্ত ইমামতের দায়িত্ব পালন করেন। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সম্মোধন করে লক্বব বা উপাধি দিয়েছিলেন- ‘রোম দেশের ফুল’ বলে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত সুহাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত ঘটনা মুসলিম মিল্লাতের জন্য যে নির্দেশনা ব্যক্ত করে:
বর্তমান যামানায় মুসলিম উম্মাহ ইহুদী-মুশরিক-নাছারাদের সামান্য ভয়ভীতি প্রদর্শনেই নুইয়ে পড়ে। তারা যাই বলে তাই মাথা পেতে মেনে নেয়। মসজিদে যেতে বাধা দিলে মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সুন্নতী পোশাক ছেড়ে দিতে বললে তাও ছেড়ে দেয়। দাড়ি-মোচ মু-ন করতে বললে তাও করে ফেলে। যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ উনাদের দরবারে যাতায়াত করায় হুমকি ধামকি দিলে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। ওলীআল্লাহ উনার দরবারে গিয়ে সুন্নত মুবারকের তা’লীম নিতে গিয়ে চাকরী-বাকরীতে অসুবিধা সৃষ্টি হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে ভুলেও ওলীআল্লাহ উনাদের দরবার শরীফের ধারে কাছেও আর ঘেঁষে না। নাঊযুবিল্লাহ! এটাই হচ্ছে বর্তমান যুগের অধিকাংশ উম্মতের হাল চিত্র। অথচ এটা ঈমানদার বান্দা হওয়ার লক্ষণ নয়, এটা মুসলিম উম্মাহর লক্ষণ নয়, এটা পরকালে বিশ্বাসী বান্দার নমুনা নয়। কারণ এমন লক্ষণ বা নমুনা হযরত সুহাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কিংবা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কারো ক্ষেত্রেই দেখা যায়নি। অথচ আমাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দি সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে হলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ঈমানদীপ্ত দৃষ্টান্তগুলোকেই অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। তেমনি একটি দৃষ্টান্তের নির্দেশনা পাওয়া যায় হযরত সুহাইব রুমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপরোক্ত ঈমানদীপ্ত ঘটনায়। যাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন খুশি মুবারক প্রকাশ করেছেন তদ্রুপ মহান আল্লাহ পাক তিনিও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে রেযামন্দি সন্তুষ্টি মুবারকের চিরস্থায়ী ঘোষণা মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
১৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগীতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশী বেশী মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশী বেশী পূঁজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (১৫)
১৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিছু সংক্ষিপ্ত ঘটনা ও ইবরত নছীহত (৩)
১৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হালাল হালালের দিকে আকর্ষণ করে এবং হারাম হারামের দিকে আকর্ষণ করে থাকে
১৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে কুরবানী দেয়া প্রত্যকে উম্মতের জন্যই দায়িত্ব কর্তব্য।
১৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র হজ্জ পালনের আহকাম
১৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
১৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগীতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশী বেশী মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশী বেশী পূজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (১৪)
১৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
১৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিছু সংক্ষিপ্ত ঘটনা ও ইবরত নছীহত (২)
১৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)