দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৭)
, ০৬ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২১ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ অগ্রহায়ণ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ঈমানদীপ্ত কঠিন অগ্নি পরীক্ষার সম্মুখীন হলেন হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা সহমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু:
দ্বীন ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা, খলীফাতুল মুসলিমীন আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন রোম শাসকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে মুসলিম বাহিনী প্রেরণ করেন। সেই বাহিনীতে শামিল ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এক পর্যায়ে তিনি রোমকদের হাতে বন্দী হলেন। তখন উনাকে নিয়ে যাওয়া হলো রোম শাসকের সম্মুখে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জবান মুবারকে দ্বীন ইসলামের সুমহান শান এবং কথাবার্তা শুনে রোম শাসক পাল্টা উনাকে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করা এবং রোম সরকারের একজন শরীক হওয়ার লোভনীয় প্রস্তাব দিল।
তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রোম শাসকের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন- ‘যদি তুমি আমাকে তোমার পুরো রাজত্ব এবং সারা আরব জাহানও দান করো আর তার পরিবর্তে এক পলকের জন্যও যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক থেকে ফিরে থাকতে বলো, তাতেও আমি কখনোই রাজী হবো না।’ সুন্নতে নববী’র প্রতি উনার এমন দৃঢ়তা দর্শনে রোম শাসক তখন উনাকে কতল (শহীদ) করার হুমকি দিল। হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এতে বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই জবাব দিলেন- সেটা তোমার ইখতিয়ার। তখন রোম শাসক উনাকে শূলে চড়ানোর নির্দেশ দিল। সাথে সাথে তীর নিক্ষেপকারী জল্লাদকে শাসক গোপনে বলে দিল যাতে তীরগুলো উনার হাতে পায়ে ও দেহের একেবারে নিকট দিয়ে ঘেঁষে যায়, দেহে যাতে বিদ্ধ না হয়। তার ফাঁকে ফাঁকে উনাকে খৃষ্টান হওয়ার জন্য যাতে চাপ দেয়া হয়। এ অবস্থায়ও যখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শাসকের প্রস্তাব অস্বীকার করতেছিলেন তখন উনাকে শূল থেকে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হল। অতঃপর উনার সম্মুখে একটি ডেগ এনে তাতে খুব ভালভাবে পানি ফুটানো হলো। তারপর দু’জন মুসলিম মুজাহিদ বন্দীকে হাজির করে একজনকে উনারই সম্মুখে সেই ফুটানো পানির ডেগে নিক্ষেপ করা হলো। নাঊযুবিল্লাহ!
এমন মর্মান্তিক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেই হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু তিনি পূর্বের চেয়ে আরো বেশি দৃঢ়তার সাথে তা অস্বীকার করছিলেন। নিরূপায় হয়ে শাসক তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সেই ফুটন্ত ডেগে নিক্ষেপ করতে নির্দেশ দিল। যখন উনাকে ধরে ডেগের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তিনি অঝোর নয়নে কাঁদছিলেন। এ দৃশ্য দেখে শাসক মনে করলো তিনি বোধহয় জীবন ভয়ে ভীত হয়ে কাঁদা শুরু করেছেন। তাই শাসক উনাকে ফুটন্ত পানির ডেগের কাছ থেকে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞেস করলো- নিশ্চয়ই আপনি এবারে খৃষ্টান হতে মনোস্থির করেছেন? হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাথে সাথে শাসকের কথা প্রত্যাখ্যান করলেন। শাসক তখন জিজ্ঞাসা করলো- তাহলে আপনি কাঁদছিলেনই বা কেন? জবাবে হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন- আমি তো শুধু এজন্যই কাঁদছিলাম যে আমার তো এই একটি মাত্র প্রাণ, যা ফুটন্ত পানির ডেগে ফেলে দিলে হয়তোবা নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমার প্রতি পশমে পশমে যদি একেকটি প্রাণ থাকতো তবে প্রত্যেকটি প্রাণকেই মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মত-পথ, আদর্শে ইস্তিক্বামত রাখতে একে একে তোমার এই ফুটন্ত পানির ডেগে ঢেলে দিতে পারতাম। এমনটি না পারার বেদনাই আমার কাঁদার একমাত্র কারণ। সুবহানাল্লাহ!
ঈমানদীপ্ত অগ্নিপরীক্ষার একাধিক ধাপ অতিক্রমে আরো বেশি অটল অবিচল হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মত-পথ অর্থাৎ আদর্শ মুবারক থেকে বিচ্যুত করে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করাতে রোমের খৃষ্টান শাসক প্রথমত: হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে রোমের সরকারের শরীক হওয়ার লোভ দেখালো; নিরূপায় হয়ে কতল করার হুমকি দিল; এতেও ব্যর্থ হয়ে শূলে চড়িয়ে তীর নিক্ষেপের সম্মুখীন করালো তাতেও কাজ না হলে ফুটন্ত ডেগের পানিতে উনার সঙ্গী একজন মুজাহিদ উনাকে নিক্ষেপ করা হল। এতেও তিনি দ্বীন ইসলাম হতে বিচ্যুত হওয়ার কোন আগ্রহ প্রকাশ না করায় অবশেষে সেই ফুটন্ত পানির ডেগে উনাকেই নিক্ষেপ করার আদেশ দিল খৃষ্টান শাসক। এমতাবস্থায়ও তিনি শুধুমাত্র এই অনুশোচনা ও আক্ষেপে কাঁদতে থাকলেন যদি আজকে উনার শরীরের প্রতিটি পশম একেকটি প্রাণে পরিণত হতো তবে প্রত্যেকটি প্রাণকেই তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান আদর্শে অটল অবিচল দৃঢ়চিত্ত রাখতে গিয়ে ফুটন্ত পানির ডেগে ঢেলে দিতে প্রস্তুত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
কোথায় আজ সেই ঈমানদীপ্ত মুসলমান?
ঈমানদীপ্ত অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের রেখে যাওয়া সম্মানিত দ্বীন ইসলামের অনুসারী মুসলমান বর্তমান বিশ্বে প্রায় সাড়ে তিনশত কোটিরও অধিক। যাদের অধিকাংশই নামে কিংবা মুখে মুখে নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে দাবি করলেও ইচ্ছা বা অনিচ্ছাতেই আমল-আখলাক, ছিরত-ছূরত, চাল-চলন সর্বক্ষেত্রেই ইহুদী-মুশরিক-নাছারাদের অনুসরণ অনুকরণ করে। খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ কিংবা খৃষ্টান শাসকের আনুগত্য করার জন্য যেভাবে হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ঈমানদীপ্ত অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তেমনটি এ যুগে সামগ্রিকভাবে সাধারন মুসলমানতো বটে বরং দ্বীনদার-পরহেজগার দাবিদার আলিম-উলামা, মুফতী-মুহাদ্দিছ, ইমাম-খতীব কিংবা মুসলিম সরকার প্রধানদের ক্ষেত্রে না ঘটলেও শুধুমাত্র সামান্য দুনিয়াবী ক্ষণস্থায়ী লোভ-লালসাতেই তারা প্রকাশ্যেই অবলীলাক্রমে ইহুদী-মুশরিক-নাছারাদের সাথে তাশাব্বুহ বা মিল-মুহব্বত রেখে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং সুন্নত মুবারক থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পরিত্যাগ করছে। নাঊযুবিল্লাহ!
বিপরীতে বর্তমান বিশ্বে একমাত্র মুসলিম উম্মাহ’র রাহবার ও ত্রাণকর্তা যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফের মহাসম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনিই কেবল হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ন্যয় ঈমানী জযবায় উদ্দীপ্ত মুসলমান গড়ে তুলতে সদা ব্যস্ত। অতএব পৃথিবীর সকল মুসলমানের এবং তাদের সরকার প্রধানদের উচিত অবিলম্বে মুজাদ্দিদে আ’যম, সুলত্বানুন নাছীর রাজারবাগ শরীফের সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার রহমতের ছায়াতলে দাখিল হওয়া এবং দ্বীন ইসলামের ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্যকে যমীনের বুকে পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মাল-জান সর্বস্ব দিয়ে আত্মনিয়োগ করা।
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা-হুসনে যন পোষণ করা ঈমান
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৬)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (১)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহিলাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ নির্দেশনা মুবারক- পর্দা পালন করা
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
খরচ করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৫)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (১)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিজাতীয় বিধর্মী তথা ইহুদী-নাছারাদেরকে অনুসরণ করা ইসলামী শরীয়তে হারাম-নাজায়িয
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৬)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












