নিকাহ বা বিবাহের আহকাম
বিবাহের পূর্বে বরকে ও কনেকে পবিত্র শরীয়তসম্মত পন্থায় দেখা সুন্নত:
, ১৬ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৭ ছানী ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৭ মে, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ বৈশাখ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিবাহ মানব জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আগামী দিনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না এ সময়ই রচিত হয়। এমনকি জান্নাত ও জাহান্নামের রাস্তা খুলে যায়। তাইতো কবি যথার্থ বলেছেন-
زن نیک و پارسہ فرماں بود کند مرد درویش را پادشہ
زن بد در سرائی مرد نکوں ھم دریں عالم است دوزخ او
অর্থ: নেককার স্ত্রী গরীব স্বামীকে বাদশাহ বানায়। আর বদকার স্ত্রীর কারণে নেককার ব্যক্তির দুনিয়াটা জাহান্নামে পরিনত হয়। নাউযুবিল্লাহ্ !
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الدُّنْيَا كُلُّهَا مَتَاعٌ، وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا اَلْمَرْأَةُ الصَّالِـحَةُ.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দুনিয়ার সবটাই সম্পদ। তবে শ্রেষ্ঠতম সম্পদ হচ্ছে নেককার, পরহেযগার, আল্লাহ্ওয়ালী আহলিয়া বা স্ত্রী। সুবহানাল্লাহ্! (মুসলিম শরীফ)
নেককার, পরহেযগার, আল্লাহওয়ালী আহলিয়া বা স্ত্রী দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম সম্পদ। যারা নেককার, পরহেযগার আল্লাহওয়ালী আহলিয়া বা স্ত্রী লাভ করতে পারে তারা অবশ্যই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। তাই নিকাহ্ বা বিবাহ করার পূর্বে পাত্র পাত্রীকে এবং পাত্রী পাত্রকে পবিত্র শরীয়ত সম্মত পন্থায় দেখা সম্মানিত দ্বীন ইসলামে সুন্নত স্বীকৃত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদিন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি উনার খিদমত মুবারকে হাযির হলেন। সে ব্যক্তি বললেন, ইয়া রসূল্লাল্লাহ্! ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!!
فَأَخْبَرَهٗ أَنَّهٗ تَزَوَّجَ اِمْرَأَةَ مِّنَ الْأَنْصَارِ. فَقَالَ لَهٗ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْظَرْتَ إِلَيْهَا؟ قَالَ لَا قَالَ: فَاذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، فَإِنَّ فِـيْ أَعْيُنِ الْأَنْصَارِ شَيْئًا
অর্থ: আমি আনসারী একজন মেয়েকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিয়েছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি কি তাকে দেখেছেন? তিনি বললেন, না। আমি তাকে দেখিনি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বিবাহের পূর্বে উনাকে দেখে নিন। কেননা, আনসারীগণের (কোন কোন লোকের) চোখ ত্রুটিযুক্ত (লাল চোখ বিশিষ্ট) হয়ে থাকে। (মুসলিম শরীফ)
উল্লেখ্য যে, মানুষ মাত্রই কিছু না কিছু ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে বিবাহের পূর্বে তা দেখে নিলে পরবর্তীতে ফিতনা-ফাসাদ মুক্ত থাকা সহজ ও সম্ভব হয়। আর আহাল-আহলিয়ার মাঝে মুহব্বতের কারণ হয়। মুহব্বত বৃদ্ধি পায়। মুহব্বত বৃদ্ধিতে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না। অন্যথায় পরবর্তীকালে তা মনোমালিন্য সৃষ্টির কারণ হয়। এমনকি তা বিচ্ছেদের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
خَطَبْتُ اِمْرَأَةً، فَقَالَ لِـيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْظَرْتَ إَلَيْهَا؟ قُلْتُ: لَا، فَقَال: اُنْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهٗ أَحْرٰى أَنْ يَّؤَدِّمَ بَيْنَكُمَا.
অর্থ: আমি একজন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব করলাম। বিষয়টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে পৌঁছে গেল। তিনি আমাকে বললেন, আপনি কি উনাকে দেখে নিয়েছেন? আমি বললাম,না, আমি উনাকে দেখিনি। তিনি বললেন, আপনি উনাকে দেখে নিন। কেননা, ইহা (পরে) আপনাদের উভয়ের মধ্যে অধিক মুহব্বতের কারণ হবে। (মুসনাদে আহমাদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাজাহ্ শরীফ, দারিমী শরীফ)
অথচ মানুষ এক্ষেত্রে ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেয়। নাউযুবিল্লাহ! যার ফলশ্রুতিতে বিবাহ উত্তর জীবনে অশান্তির ছায়া তাদের উপর বিস্তার লাভ করে থাকে।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র সুন্নত মুবারক পালনে কামিয়াবী, পবিত্র সুন্নত মুবারক পালনে কল্যাণ, বরকত। পবিত্র সুন্নত মুবারক পালনে সুখ-শান্তি। আর তার বিপরীতে রয়েছে, ফিতনা-ফাসাদ, অশান্তি, দুরাচার, অনাচার, ধ্বংস ও ক্ষতি।
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمْ الْمَرْأَةَ فَإِنْ اِسْتَطَاعَ أَنْ يَّنْظُرَ إِلٰى مَا يَدْعُوْهُ إِلٰى نِكَاحِهَا فَلْيَفْعَلْ
অর্থ: যখন আপনাদের কেহ কোন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তখন যদি তার পক্ষে তার এমন (জায়িয) অঙ্গ দেখা সম্ভব হয় যা তাকে বিবাহের দিকে উদ্বুদ্ধ করে, তাহলে সে যেন তা দেখে নেয়। (আবু দাউদ শরীফ)
কনে দেখা খাছ সুন্নত
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা করেছেন সেটাকেই খাছ সুন্নত মুবারক বলা হয়। বিবাহের পূর্বে কনে দেখা খাছ সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُرِيْتُكِ فِي الْمَنَامِ مَرَّتَيْنِ، إِذَا رَجُلٌ يَـحْمِلُكِ فِيْ سُرَقَةِ حَرِيْرٍ فَيَقُوْلُ هٰذِهٖ اِمْرَأَتُكَ. فَأَكْشِفُهَا فَإِذَا هِيَ أَنْتِ فَأَقُوْلُ إِنْ يَّكُنْ هٰذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ يُـمْضِهٖ
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাকে স্বপ্নযোগে দু’বার আপনাকে দেখানো হয়েছে। এক ব্যক্তি (হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম) অতীব সুন্দর একখানা রেশমী কাপড় দ্বারা আপনাকে ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে আমার কাছে হাজির হলেন। আমাকে বললেন, ইনি হচ্ছেন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম।
আমি আপনার চেহারা মুবারক থেকে মুবারক কাপড়টা একটু সরিয়ে দেখতে পেলাম সেটা আপনিই। তখন বললাম, নিশ্চয়ই ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে।
কাজেই, তিনিই তার বাস্তবায়ন করবেন। (বুখারী শরীফ)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কিতাবুল আহাদীছ ফী ফাদ্বায়িলিল ইলম ওয়াল আমাল ওয়াল আলিম
১৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র উমরা সম্পর্কে (১৭)
১৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদের শাস্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে হাউজে কাওছারের পানি লাভের অনুপম দৃষ্টান্ত
১৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবী বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
১৩ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বদ মাযহাব, বদ আক্বীদা ও বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (১১)
১২ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র উমরা সম্পর্কে (১৬)
১২ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইতিহাসে ইহুদী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র: আজকের নির্যাতিত-নিপীড়িত নিষ্পেষিত মুসলিম জনপদের দখল যেভাবে নিল কুখ্যাত ইহুদী গোষ্ঠী
১২ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমানগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আইনী কার্যক্রম
১২ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবী বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
১২ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম
১১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সীমাহীন লোভ-লালসা মানুষকে এমন অন্ধ ও নির্বোধ করে যার কারণে বাস্তব সত্যকেও বুঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে
১১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ৯ জন সম্মানিত ইমাম উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেছেন
১১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)