নছীহতে কায়িম মাকামে উম্মাহাতুল মু’মীনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম
নিজের প্রকৃত মাল কোনটি?
২রা সফর, ১৪৪২ হিজরী (ইয়াওমুল আহাদ)
, ২৭ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মহিলাদের পাতা
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّكُمْ مَالُ وَارِثِهٖ أَحَبُّ إِلَـيْهِ مِنْ مَالِهٖ؟ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ مَا مِنَّا أَحَدٌ إِلَّا مَالُـهٗ أَحَبُّ إِلَـيْهِ مِنْ مَالِ وَارِثِهٖ قَالَ فَإِنَّ مَالَهٗ مَا قَدَّمَ وَمَالُ وَارِثِهٖ مَا أَخَّرَ. (رواه بـخاری)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, তার মাল-সম্পদ থেকে উত্তরাধিকারীর মাল-সম্পদ তার কাছে বেশি প্রিয়? (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উনারা বললেন, আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, তবে তার ওয়ারিসের মাল-সম্পদ থেকে তার মাল-সম্পদই তার কাছে বেশি প্রিয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই সেটাই তার মাল-সম্পদ যা সে অগ্রে পাঠিয়েছে আর যা সে রেখে যাবে সেটাই তার ওয়ারিসের মাল-সম্পদ।
[বুখারী শরীফ]
মানুষের ধারণা, যা সে উপার্জন করে সেটাই তার মাল-সম্পদ। প্রকৃতপক্ষে যেই মাল-সম্পদ সে পরকালের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার পথে খরচ করে সেটাই তার মাল-সম্পদ আর যেটা (মাল-সম্পদ) সে রেখে মারা যায় সেটাই তার ওয়ারিসের মাল-সম্পদ।
ছুরতান সবাই ওয়ারিসের মাল থেকে তার নিজের মাল-সম্পদকে মুহাব্বত করার দাবী করে কিন্তু হাক্বীক্বতান সে নিজের মাল-সম্পদকে মুহাব্বত করে না, ওয়ারিসের মাল-সম্পদকেই বেশি মুহাব্বত করে।
মানুষ অজ্ঞতার কারণে মনে করে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার পথে যা খরচ করা হয় সেটা হয়তো অন্যের হয়ে যায়। আসলে তা নয়, বরং সেটা তার জন্য পরকালে জমা করা হয়। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে নিজের জন্য মাল-সম্পদ জমা করা অর্থাৎ পরিবারের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত মাল-সম্পদ মহান আল্লাহ পাক উনার পথে খরচ করা। কারণ যে ব্যক্তি মাল-সম্পদ মহান আল্লাহ পাক উনার পথে খরচ না করে দুনিয়াতে জমা করে রাখবে, সেই মাল-সম্পদ সে মৃত্যুর সময় নিয়ে যেতে পারবে না। আবার তার পরিবার-পরিজন তার জন্য কতটুকু দান-খয়রাত করবে তাও সে জানে না।
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ أَبـِــيْ هُرَيْــرَةَ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ يَــبْـلُغُ بِهٖ قَالَ إِذَا مَاتَ الْمَيِّتُ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ مَا قَدَّمَ وَ قَالَ بَــنُـوْ اٰدَمَ مَا خَلَّفَ. (بـیهقی فی شعب الایـمان)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন মানুষ মারা যায় তখন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন: সে কি পাঠিয়েছে? আর আদম সন্তান তথা পরিবার-পরিজন বলবে: সে কি রেখে গিয়েছে?
[বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান]
কতটুকু নিয়ে গেলো এটা কেউ বলবে না বরং বলবে পরিবারের জন্য কি রেখে গেলো।
অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ أَبـِىْ هُرَيْـرَةَ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَــقُوْلُ الْعَبْدُ مَالِيْ مَالِيْ وَ إِنَّ مَالَهٗ مِنْ مَالِهٖ ثَلَاثٌ مَا أَكَلَ فَأَفْــنٰى أَوْ لَبِسَ فَأَبْـلٰى أَوْ أَعْطٰى فَاقْــتَـنٰى وَمَا سِوٰى ذٰلِكَ فَـهُوَ ذَاهِبٌ وَتَارِكُهٗ لِلنَّاسِ. (رواه مسلم)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বান্দা বলে আমার মাল, আমার মাল। অথচ তার মাল থেকে প্রকৃত মাল হচ্ছে তিনটি। ১. যা খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। ২. যা পরিধান করে ছিঁড়ে ফেলেছে। ৩. যা দান করে জমা করেছে। এছাড়া যা আছে সবই মানুষের জন্য রেখে চলে যাবে।
[মুসলিম শরীফ]
এই তিনটিই তার মাল। বাকিগুলো সে অন্যদের জন্য রেখে যাবে। আর যেগুলো দুনিয়াতে জমা করে রাখবে সেগুলো ওয়ারিসের হবে। এগুলো দিয়ে সে কোনো ফায়দা লাভ করতে পারবে না। বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাজ হবে তার নিজের জন্য মাল-সম্পদ পাঠানো বা পরকালের জন্য জমা করা। সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন,
يَا أَيُّــهَا الَّذِيْـنَ اٰمَنُوا اتَّــقُوا اللّٰهَ وَلْتَــنْظُـرْ نَـفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّــقُوا اللّٰهَ إِنَّ اللّٰهَ خَبِـيْــرٌ بـِمَا تَـعْمَلُوْنَ ﴿১৮﴾ سورة الـحشر
হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। প্রত্যেক ব্যক্তি যেন লক্ষ্য করে যে, আগামী দিনের (পরকালের) জন্য কি পাঠিয়েছে? এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের আমল সম্পর্কে খবর রাখেন। [সূরা হাশর শরীফ: ১৮]
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে নিজেদের প্রকৃত মাল-সম্পদ চেনার এবং পরকালের পাথেয় অর্জন করার তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












