নিষিদ্ধ মহিলা জামায়াত নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে সূ’দের বিভ্রান্তিকর ও জিহালতী বক্তব্যের জবাব
, ১৫ আগস্ট, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
সুওয়াল :
ডা. জাকির নায়েক এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছে যে, কুরআনে এমন কোন দলীল নেই যা মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করে। এমনকি কোন হাদীছও এমন নেই যেখানে বলা হয়েছে যে, মহিলারা মসজিদে যেতে পারবে না। বরং এর বিপরীতে অনেক হাদীছ আছে। সহীহ বুখারী শরীফ-এ আছে যখন তোমার স্ত্রী মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায় তখন তাদের নিষেধ করো না। (হাদীছ নং ৮৩২)
এমনকি সহীহ বুখারীতে আছে, যদি তোমার স্ত্রী রাতের বেলায়ও মসজিদে যেতে চায় তাহলে তাকে অনুমতি দাও। হাদীছ নং ৮২৪। মুসলিম শরীফ-এ আরও আছে, হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। মহিলাদের জন্য মসজিদে সবচেয়ে ভালো স্থান হচ্ছে তারা প্রথম কাতারে দাঁড়াবে আর পুরুষরা শেষ কাতারে দাঁড়াবে। অথবা পুরুষরা প্রথম কাতারে দাঁড়াবে আর মহিলাদের জন্য ভাল হলো শেষ কাতারে দাঁড়ানো। (বুখারী শরীফ ১ম খ-, হাদীছ নং ৮৮১; সূত্র ডাক্তার জাকির নায়েক উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর ৪/২৩৪, পিস পাবলিকেশন্স, ঢাকা)
জাওয়াব:
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এখানে খুব ভালোভাবে মনে রাখা দরকার যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বপ্রথম ছাত্র ছিলেন। উনাদের সামনেই ওহী মুবারক অবতীর্ণ হয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জবান মুবারক থেকে উনারাই সর্বপ্রথম সরাসরি হাদীছ শরীফ শুনেছেন। উনারাই ছিলেন সেসব হাদীছ শরীফ উনার প্রথম লক্ষ্যবস্তু। উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিন্দেগী মুবারক অতি নিকট থেকে দেখেছেন। উনার প্রতিটি সুন্নত মুবারককে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করেছেন। যে কোন হাদীছ শরীফ উনার মর্ম ও ব্যাখ্যা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই সবচেয়ে বেশি জানতেন। কারণ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে সমস্ত উম্মত থেকে সর্বদিক দিয়ে যাচাই বাছাই করে মনোনীত করেছিলেন। দ্বীনের প্রতিটি বিষয় সম্বন্ধে উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে বাস্তব প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ উনার পর সর্বপ্রথম উনারাই জান-মাল ও সময়ের কুরবানী দিয়ে সম্মানিত দ্বীন জিন্দা রাখার জন্য খিদমত করেছেন।
সুতরাং উনাদের সম্পর্কে এটা ধারণা করাও মস্ত বড় পাপ যে, উনারা নিজেদের মনগড়া উক্তির মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারককে বদলে ফেলেছিলেন বা উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আদর্শ বিরোধী কাজ করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা কয়েকটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে গেলো, তা হচ্ছে-
(১) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এমন কোন হাদীছ নেই যার মধ্যে স্পষ্টভাবে মহিলাদেরকে নামায পড়ার জন্য মসজিদে বা ঈদগাহে যেতে বলা হয়েছে। মসজিদে যাওয়া সংক্রান্ত যেসব হাদীছ শরীফ পাওয়া যায় তাতে অত্যন্ত অপছন্দের সাথে শর্ত সাপেক্ষে এমনভাবে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে যাতে মহিলারা নিজেরাই মসজিদে যেতে অনুৎসাহিত হয়ে পড়ে।
(২) মহিলাদেরকে মসজিদে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার স্পষ্ট বিরোধিতা।
(৩) মহিলারা মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাদেরকে নিষেধ না করা বরকতময় সুন্নতে রসূল ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের সুন্নত এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজমা একথা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ওই সুন্নত মুবারক সাময়িক এবং শর্ত সাপেক্ষে ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের কারণে এবং শর্ত না পাওয়ার কারণে এখন নিষেধ করাটাই সুন্নত।
(৪) মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা না দেয়া বাহ্যিক দৃষ্টিতে বরকতময় সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুসরণ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেটা বরকতময় সুন্নতে রাসূল উনার বিরোধিতা ছাড়া অন্য কিছু নয়। পক্ষান্তরে মসজিদে যেতে নিষেধ করা আপাত দৃষ্টিতে বরকতময় সুন্নতে রসূল উনার বিরোধিতা মনে হলেও বাস্তবে সেটাই সত্যিকারের বরকতময় সুন্নতে রাসূল উনার অনুসরণ।
অতএব পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার উপরোক্ত বর্ণনাসমূহের মাধ্যমে প্রতিভাত হলো যে, মহিলাদের জামায়াতে নামায আদায়ের জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহরীমী ও হারাম। আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী। কেননা এর দ্বারা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম, খুলাফায়ে রাশিদা উনাদের দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনারাসহ সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিরোধিতা করা হয়। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ليغيظ بهم الكفار
অর্থাৎ “কাফিররাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিরোধিতা করে থাকে। ” (পবিত্র সূরা ফাতাহ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ থেকে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












