নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (১৫)
, ২০ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৬ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৫ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ৩১ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
নিকৃষ্ট আবূ জাহল যেভাবে মারা যায়:
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হযরত মু‘আয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ‘আমি যখন আবূ জাহলকে চিনে নিলাম, সাথে সাথে তাকে উদ্দেশ্য করে রওয়ানা করলাম। মুশরিকরা তার নিরাপত্তার জন্য চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে। তারপরও আমি অতি দ্রুত গতিতে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম এবং আমি আমার তরবারী দিয়ে তাকে অত্যন্ত কঠিনভাবে আঘাত করলাম। আমার এক আঘাতে তার পায়ের গোছা শরীর থেকে আলাদা হয়ে সে মাটিতে থুবড়ে পড়লো।
আমার ভাই হযরত মু‘আওয়িয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও আমার ন্যায় অতি দ্রুত গতিতে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে অত্যন্ত কঠিনভাবে আঘাত করেন। তারপর তিনি আবূ জাহলের উপর চড়ে বসে তার গলায় ছুরি চালাতে থাকলেন। মুশরিকরা আবূ জাহলকে বাঁচানোর জন্য উনার দিকে তীর, বর্শা নিক্ষেপ করতে লাগলো। চতুর্মুখী আক্রমণে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়লেন। তিনি শহীদ হয়ে আবূ জাহলের পাশেই পড়ে রইলেন। আবূ জাহল পুরোপুরিভাবে ধরাশায়ী হয়ে গেলো। হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (আবূ জাহলের ছেলে, তিনি তখনও সম্মানিত ঈমান গ্রহণ করেননি) তিনি আমার বাম কাঁধের উপর তরবারীর দ্বারা খুব কঠিনভাবে আঘাত করলেন। ফলে আমার বাম হাত মুবারক কেটে যায় এবং তা ঝুলতে থাকে। পরে আমি এই অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে হাযির হই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার হাত মুবারক যথাস্থানে লাগিয়ে দেন। সাথে সাথে আমার হাত পূর্বের থেকে আরো শক্তিশালী হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বদর যুদ্ধ শেষ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনাদের মধ্যে কে আবূ জাহলের খবর নিয়ে আসতে পারবেন? হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি পারবো! অনুমতি মুবারক পেয়ে তিনি যুদ্ধের ময়দানে বেরিয়ে পড়লেন। পুরো ময়দানের এখানে-ওখানে কাফেরদের লাশ পড়ে আছে। দৃষ্টিসীমায় আবূ জাহলকে খুঁজতে লাগলেন। একসময় পেয়েও গেলেন। তার শ্বাস-প্রশ্বাস তখনও চলছিলো। প্রাণ ওষ্ঠাগত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি হয়তো হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে উনার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন, উনার অবমাননাকারী এই নরাধমকে আরও একটু বেশি লাঞ্চিত করার জন্য বাকি রেখেছিলেন। হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আবূ জাহলের দেহ থেকে মাথা আলাদা করার জন্য তার দাড়ির মুঠো ধরে বললেন- ‘ওরে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন, শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক তিনি তোকে অপদস্থ করলেন তো?’ তখন সে বললো, ‘কিভাবে আমাকে অসম্মান করলেন? আপনারা যাকে হত্যা করছেন, তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কেউ আছে নাকি? তার চেয়ে আর বড় কে? আহ্ আমাকে যদি কৃষক ছাড়া অন্য কেউ হত্যা করতো!’
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই দুশমনকে তার অহমিকাপূর্ণ আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে খতম করার ইচ্ছা করলেন। তিনি তার কাঁধে পা দিয়ে চেপে ধরলেন। খড়গের নিচে থেকেই সে বললো, ‘ওরে বকরির তুচ্ছ রাখাল! আপনি অনেক কঠিন জায়গায় পৌঁছে গেছেন! এরপর সে জানতে চাইলো, আজ কারা বিজয়ী হলো?’
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা’।
এরপরই তিনি এক কোপে নরাধমটার মাথা ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিকৃষ্ট আবূ জাহলের কর্তিত মস্তক নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে এসে বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই হচ্ছে ইসলামের চরম দুশমন আবূ জাহলের খ-িত মস্তক!’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘তিনিই মহান আল্লাহ পাক, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই।’ এরপর তিনি আবূ জাহলের লাশের কাছে তাশরীফ মুবারক নিয়ে বললেন, ‘সমস্ত প্রশংসা ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, যিনি পবিত্র ইসলাম ও মুসলমানদের সম্মানিত করেছেন।’ তিনি আরও বললেন, ‘এ ছিলো এই উম্মাহর ফেরাউন!’
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট ও অবমাননা করার কারণে তিনি তার উপর বদদোয়া করেছিলেন। এমনকি পবিত্র বদর যুদ্ধের আগেই তার মৃত্যুর স্থানও চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন। আবূ জাহল সে জায়গায়ই মারা যায়। বদরের কালিব নামক কূপে অন্যান্য কাফিরদের সাথে তার মস্তকহীন লাশ নিক্ষেপ করা হয়। লাশটা পচে ফেটে গিয়ে বীভৎস আকার ধারণ করে। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার চরম দাম্ভিক এই মোড়লের মস্তকহীন পচা লাশ খোরাক হয় চিল, শকুন আর কাকের!
এভাবেই মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন আবূ জাহলের চরম পরিণতি ঘটে।
(অসমাপ্ত)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩২)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৭)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












