পবিত্র ইসলামী পোশাক সম্পর্কে ইলম (২)
, ০৫ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১১ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ০৮ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৩ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পাগড়ীর উপর বা পাগড়ী ব্যতিত টুপির উপর রুমাল পরিধান করা সুন্নত। রুমালের চারটি বাহুই সমান্তরাল হতে হবে। যা দ্বিভাজ করে ত্রিভূজের ন্যায় বানিয়ে ব্যবহার করতে হয়। কেবল সাদা রঙের রুমাল ব্যবহার করা সুন্নত। রঙ্গিন রুমাল ব্যবহার করা নাজায়েয। তাছাড়া লাল রুমাল ব্যবহার করা হানাফী মাযহাব অনুযায়ী হারাম এবং নাজায়েয।
গাঢ় খয়েরী রঙের দাবাগতকৃত পশমবিহীন চামড়ার মোজা ব্যবহার করা সুন্নত। কালো ও সবুজ রঙের মোজা ব্যবহার করা মাকরুহ। আর সাদা মোজা ব্যবহার করা বেদ্বীনদের বৈশিষ্ট্য। যা সুস্পষ্ট হারাম। তবে মোজা যদি নিসফু সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত হয় এবং কোন চেইন, বোতাম বা ফাঁড়া না থাকে, তাহলে তার উপর মাসেহ করা জায়েয। যার মজবুতির দরুন সেন্ডেলের ন্যায় ব্যবহার করা যায়। অন্যথায় মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয নেই।
ক্রস দু’ফিতা বিশিষ্ট গাঢ় খয়েরী রঙের চামড়ার সেন্ডেল ব্যবহার করা সুন্নত। যার ফিতা তলা সবই চামড়া। তবে ফিতা হবে দুপাট্টা। আর কালো ও সবুজ রঙের সেন্ডেল, বুট বা সু প্রভৃতি ব্যবহার করা হারাম। তাছাড়া বেল্ট যুক্ত সেন্ডেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে শরীয়ত কর্তৃক বৈধতা রয়েছে, তবে কালো ফিতার খড়মের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
কালো, সবুজ, সাদা, ঘিয়া, ধুসর, গন্ধম খয়েরী রঙের চাদর ব্যবহার করা সুন্নত। মোটা বা চিকন পাড় বিশিষ্ট, ডোরা কাটা, নকশা খচিত চাদরও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। ছোট চাদরের দৈর্ঘ্য চার হাত আর প্রস্থ আড়াই হাত। বড় চাদরের দৈর্ঘ্য ছয় হাত এবং প্রস্থ সাড়ে তিন হাত। চাদর শরীরে জড়িয়ে রাখতে হয়। দু’কাধের দু’দিক হতে এনে সামনের দিকে চাদর ঝুলিয়ে রাখা মাকরুহ। ছবিযুক্ত এবং লাল ও হলুদ বর্ণের চাদর ব্যবহার করা পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ।
বলাবাহুল্য শীত প্রতিরোধে জ্যাকেট শেরওয়ানী প্রভৃতি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। চুলে ব্যবহৃত তৈল হতে পাগড়ী ও টুপিকে সংরক্ষন করতে টুপির নিচে গোলাকৃতির যে কাপড় ব্যবহার করা হয়, তাকে কেনায়া বলা হয়। এটা গোলা বলা হলেও তা পুরোপুরি গোল হয় না বরং কিছুটা চেপ্টা হয়ে থাকে। কেনায়া সাদা সুতি কাপড়ের হওয়া সুন্নত। তবে রঙ্গিন কাপড়ও জায়েয।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের সুন্নতসমূহে সেলোয়ার অন্যতম। শারীরিক বিভিন্ন কসরত ও পরিশ্রমের ক্ষেত্রে সেলোয়ার ব্যবহার করা আফদ্বল। সেলোয়ার উপরের অংশ বেশ ঢোলা হতে হবে। চিপা হলে তা সেলোয়ার থাকে না। ঢোলা হওয়া বা না হওয়া সেলোয়ার ও প্যান্টের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। প্যান্ট, চোস্ত পায়জামা, টাউজার প্রভৃতি বেদ্বীনী পোশাক হওয়ায় তা ব্যবহার করা হারাম। তাছাড়া বর্তমান প্রচলিত ধূতির নকশা তৈরীকৃত প্যান্ট ব্যবহার করা শরীয়তে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
পুরুষের কোর্তা মহিলাদের কোর্তা প্রায় একই রকম। তবে মহিলাদের কোর্তার গেরেবাল ডান কাঁধ বা পিছন দিকে দিতে হয়। তাছাড়া সন্তানকে দুধ পান করানোর জন্য গেরেবান সামনের দিকে রাখা জায়েয। মহিলারা নকশা করা কোর্তা ব্যবহার করতে পারবে। তবে শরীর দেখা যায় এমন পাতলা কোর্তা ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
পুরুষদের সেলোয়ার হতে মহিলাদের সেলোয়ার অধিক ঢোলা হতে হয়। শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে এরুপ টাইট পোশাক পরিধান করা মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ।
ওড়না মহিলাদের জন্য এক অপরিহার্য বিষয়। সাড়ে চার হাত লম্বা দু’হাত প্রস্থ আর চার হাত লম্বা আড়াই হাত প্রস্থ প্রভৃতি ওড়নার পরিমাপ। ওড়না অবশ্যই ঘন কাপড়ের হতে হবে। অধিক পাতলা কাপড়ের সূষ্ঠ ওড়না ব্যবহার করা নাজায়েয।
শরয়ী পর্দা প্রতিপালনে ঘরের বাইরে বোরকা ব্যবহার অত্যাবশকীয়। বর্তমানে প্রচলিত বোরকা পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত ঘুমুয়ের অনুরুপ। যা লম্বা হাত বিশিষ্ট অত্যাধিক ঢোলা এবং আপাদমস্তক ঢেকে রাখে। বোরকা নকশাবিহীন কালো কাপড়ের হওয়া আফদ্বল। নকশাকৃত, অত্যধিক আট-সাট, দৃষ্টি নন্দন রং সারা শরীর ঢেকে রাখে না এরুপ বোরকা ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
মহিলাদের সেন্ডেল পুরুষদের অনুরুপ। তবে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের সেন্ডেলের ফিতা তুলনামূলক চিকন হয়। তাছাড়া পেন্সিল বা হাইহিল সেন্ডেল ব্যবহার করা হারাম। তবে সাধারণ উচু সেন্ডেল ব্যবহারে নিষেধ নেই।
উল্লেখ্য যে, পুরুষ-মহিলার চাদরের একই মাপ। মোজাও অনুরুপ। তবে মহিলারা চামড়ার মোজা ব্যবহারে অক্ষম হলে ঘেয়া বা বিস্কিট রঙের কাপড়ের মোজা ব্যবহার করতে পারবে। তবে কোনক্রমেই কালো পায়ের মোজা ব্যবহার করা যাবে না।
বলাবাহুল্য যে, পোশাকের ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় বিজাতীয় সংস্কৃতিকে তরক করতে হবে। বিধর্মীদের কোন পোশাকই ব্যবহার করা যাবে না। আর ৩ কারনেই প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জী ট্রাউজার, কোর্ট, টাই, হেট, ইত্যাদি ব্যবহার করা হারাম ও নাজায়েয। তাছাড়া বৌদ্ধদের গেরোয়া, হিন্দুদের ধুতি, শিখদের শিমলাবিহীন পাগড়ী শেরওয়ানী আসফান এগুলোর সাথে তাশাব্বুহ রাখে এরুপ পোশাক ব্যবহার করাও হারামের অন্তর্ভুক্ত। (সমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
যে সমস্ত নামধারী আলিমরা শাসকদের দরবারে আসা-যাওয়া করে তারাই উলামায়ে সূ এবং সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব (১)
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৭)
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কথিত স্বজন-পরিজন হলেও কাফিরদেরকে বন্ধু বা অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৭)
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৫)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে নিজে পর্দা করে না ও অধীনস্তদের পর্দা করায় না সে দাইয়ুস
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৬)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে পুরুষ ও মহিলা ব্যতীত তৃতীয় কোনো লিঙ্গের অস্থিত্ব নেই (২)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)