১০০ টি চমৎকার ঘটনা
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনাকে সম্মান করে নিজেই হলেন সম্মানিত
ঘটনা-৬৮
, ১৭ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
হযরত বিশর হাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, তিনি একজন প্রখ্যাত বুযুর্গ ওলীআল্লাহ ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন একজন শরাবখোর। সারাদিন শরাবখানায় মাতাল হয়ে পড়ে থাকতেন। একদিন তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন, একটি কাগজে মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম بِسْمِ اللهِ الرَّحْـمٰنِ الرَّحِيْمِ লিখা এবং কাগজটি মাটিতে পড়ে আছে। সেটা দেখে হযরত বিশর হাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মনে মনে চিন্তা করলেন, ‘সারা জীবন তো অনেক পাপ করেছি, নেক কাজ তো কিছুই করিনি। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম, এটাতো অবশ্যই মাটিতে থাকা উচিত নয়; এটাকে উপযুক্ত স্থানে সম্মানের সাথে রাখা উচিত।’ এটা ফিকির করে তিনি কাগজটি তুলে নিয়ে ঘরে গেলেন, ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে আতর গোলাপ মেখে ঘরের মাঝে এক উঁচু স্থানে রেখে দিলেন। এরপর তিনি আবার শরাবখানায় চলে গেলেন।
সেই এলাকায় একজন আল্লাহওয়ালা লোক ছিলেন। তিনি রাতে স্বপ্নে দেখলেন, উনাকে বলা হচ্ছে, ‘হে ব্যক্তি! তুমি বিশরকে গিয়ে সংবাদ দাও, আমি তাকে কবুল করেছি।’ স্বপ্নটা দেখার পর উনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম থেকে উঠে তিনি মনে মনে চিন্তা করলেন, ‘স্বপ্নটা আমি ভুল দেখেছি। কারণ বিশর তো ভালো লোক নয়।’ তিনি ওযূ করে দু’রাকায়াত নামায পড়ে আবার শুয়ে পড়লেন। কিন্তু পরপর তিনবার তিনি একই স্বপ্ন দেখলেন। শেষবার বলা হলো, ‘তুমি তাড়াতাড়ি সংবাদ দাও, আর তা না হলে তোমার অসুবিধা হবে।’ বুযুর্গ ব্যক্তি তাড়াতাড়ি সংবাদ দেওয়ার জন্য হযরত বিশর হাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বাড়িতে গেলেন। কিন্তু বাড়ি থেকে বলা হলো, ‘তিনি তো এখানে নেই, তিনি শরাবখানায়।’
শরাবখানার রাস্তা তো বুযুর্গ ব্যক্তির ভালোভাবে জানা নেই তবুও তিনি অনেক খুঁজে খুঁজে শরাবখানায় গেলেন। গিয়ে হযরত বিশর হাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার যারা বন্ধু-বান্ধব ছিল, তাদেরকে বললেন, ‘কোথায় বিশর? উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে পয়গাম এসেছে।’ তারপর তিনি দেখতে পেলেন হযরত বিশর হাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি শরাব পান করে মাতাল অবস্থায় রয়েছেন। বুযুর্গ ব্যক্তি সেখানে গিয়ে বললেন, ‘হে বিশর! আপনার কাছে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে পয়গাম এসেছে।’ তিনি মাতাল অবস্থায় বললেন, ‘হে ব্যক্তি! শাস্তির পয়গাম না শান্তির পয়গাম?’ বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, ‘শান্তির পয়গাম এসেছে।’ এটা শুনে হযরত বিশর হাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালেন; বললেন, ‘হে বন্ধুরা! আজ থেকে বিদায়। মহান আল্লাহ পাক আমাকে কবুল করে নিয়েছেন এবং সংবাদ প্রেরণ করেছেন। আমি আর এখানে থাকবো না।’
তৎক্ষণাৎ তিনি সেই শরাবখানা থেকে খালি পায়েই বের হয়ে চলে গেলেন। সেই যামানার যাঁরা বড় বড় মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী ছিলেন, উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করলেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি একজন বড় ওলীআল্লাহ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই যে তিনি খালি পায়ে তওবা করে শরাবখানা থেকে বের হয়েছিলেন, আর কখনো জুতা পরেননি। আজীবন খালি পায়েই কাটিয়েছেন। হাফী শব্দের অর্থ হলো খালি পায়ে যে চলে অর্থাৎ জুতাবিহীন। তিনি বাগদাদ শরীফের রাস্তায় খালি পায়ে চলতেন। এই কারণে, তিনি যতদিন হায়াতে ছিলেন, ততদিন পর্যন্ত বাগদাদের রাস্তার মধ্যে কোনো পশু-পাখি সরাসরি ইস্তিঞ্জা করতো না। সুবহানাল্লাহ!
একদিন এক পশুর মালিক দেখলো, এক পশু রাস্তার মধ্যে ইস্তিঞ্জা করেছে। সে বললো,
اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّا اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
তার সঙ্গী সাথীরা বললো, ‘ভাই! কে মারা গেলো যে, তুমি একথা বললে?’ পশুর মালিক বললো, ‘নিশ্চয়ই হযরত বিশর হাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইন্তেকাল করেছেন।’ তারপর সংবাদ নিয়ে জানা গেলো যে, সত্যি কিছুক্ষণ আগে হযরত বিশর হাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইন্তেকাল করেছেন। পশুর মালিককে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘তুমি কি করে এটা বুঝলে?’ সে বললো, ‘আমি বিশ বছর ধরে বাগদাদের রাস্তায় পশু চরাই। আজ পর্যন্ত কোন পশু-পাখিকে রাস্তায় ইস্তিঞ্জা করতে দেখিনি, একমাত্র হযরত বিশর হাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সন্মানার্থে। কিন্তু আজকে যখন এই পশু ইস্তিঞ্জা করলো, আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম নিশ্চয়ই হযরত বিশর হাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যমীনের উপর নেই।’ সুবহানাল্লাহ!
ইনশাআল্লাহ চলবে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সর্বাবস্থায় আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হাশরের ময়দানে যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেককেই দিতে হবে
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












