পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র কুরবানী উনার আহকাম, ফাযায়িল ও মাসায়িল (২৮)
, ০৯ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৯ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র কুরবানী উনার সম্পর্কে শাফিয়ী মাযহাব উনার অভিমত : শাফিয়ী মাযহাব উনার ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব নয় বরং সুন্নত।
এ প্রসঙ্গে “নূরুল হিদায়া” কিতাবের ৪র্থ খ-ের ৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اور شافعی رحمۃ اللہ علیہ کے نزدیک سنت ہے.
অর্থ : “আর হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট পবিত্র কুরবানী করা সুন্নত।”
অতএব, শাফিয়ী মাযহাব উনার দৃষ্টিতে যেহেতু পবিত্র কুরবানী সুন্নত তাই নিজের পক্ষ থেকে না করে অপরের পক্ষ থেকে করলেও কোন অসুবিধা নেই।
পবিত্র কুরবানী সম্পর্কে মালিকী ও হাম্বলী মাযহাব উনাদের অভিমত : মালিকী ও হাম্বলী মাযহাব উনাদের পবিত্র কুরবানী সম্পর্কিত দু’টি মত কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। এক মতে পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব নয়। যেমন এ প্রসঙ্গে “আইনুল হিদায়া” কিতাবের ৪র্থ খ-ের ২২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
امام مالک رحمۃ اللہ علیہ وشافعی رحمۃ اللہ علیہ واحمد رحمۃ اللہ علیہ کے نزدیک ... اضحیہ واجب نہیں۰
অর্থ : “হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নিকট ..... পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব নয়।”
মালিকী ও হাম্বলী মাযহাব উনাদের অপর এক মতে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। তবে এক্ষেত্রে উনাদের মূল বক্তব্য হলো, “যদি পরিবারের একাধিক লোকের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হয়, আর সকলের পক্ষ থেকে একটিমাত্র পবিত্র কুরবানী করে তবে সকলেরই ওয়াজিব আদায় হবে যাবে।” অর্থাৎ প্রত্যেকের আলাদা আলাদা পবিত্র কুরবানী করার প্রয়োজন নেই।
পবিত্র কুরবানী যার উপর ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই করতে হবে- এ সম্পর্কে হানাফী মাযহাব উনার অভিমত : এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مِـخْنَفِ بْنِ سُلَيْمٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كُنَّا وُقْوْفًا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَرَفَةَ فَسَمِعْتُهُ يَقُوْلُ يَا اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ عَلٰى كُلّ اَهْلِ بَيْتٍ فِىْ كُلّ عَامٍ اُضْحِيَّةُ.
অর্থ : হযরত মিখনাফ ইবনে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা পবিত্র বিদায় হজ্জ মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে পবিত্র আরাফা ময়দানে ছিলাম। এমতাবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনলাম, হে লোক সকল ! প্রত্যেক পরিবারের পক্ষে প্রত্যেক বছরই একটি করে পবিত্র কুরবানী রয়েছে। (মিশকাত শরীফ)
কাজেই সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে “মালিকে নিছাব” প্রত্যেকের উপর আলাদা আলাদাভাবে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই পবিত্র কুরবানী করতে হবে। যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকে পবিত্র কুরবানী না করে মৃত বা জীবিত অপরের পক্ষ থেকে পবিত্র কুরবানী করা যাবে না, করলে ছ¦হিবে নিছাব ব্যক্তি ওয়াজিব তরকের গুনাহে গুনাহগার হবে। মূূল ফতওয়া হলো, ছ¦হিবে নিছাব ব্যক্তি তার ওয়াজিব কুরবানী আদায় করে সে অন্য যে কোন ব্যক্তি সে মৃত হোক বা জীবিত হোক তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করতে পারবে। এ ব্যাপারে হানাফী উনাদের দলীল নিম্নরূপ :
এ প্রসঙ্গে “শরহে বিক্বায়া” কিতাবে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে আরও একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ রয়েছে-
وَاِنَّـمَا (الْاُضْحِيَّةُ) تَـجِبُ لِنَفْسِهٖ لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَـمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرُبَنَّ مُصَلَّانَا
অর্থ : “কুরবানীদাতার জন্য তার নিজের পক্ষ থেকে বা নিজের নামেই কুরবানী করা ওয়াজিব। কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি সামর্থবান হওয়া সত্ত্বেও পবিত্র কুরবানী করবেনা সে যেনো আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَصَلّ لِرَبّكَ وَانْـحَرْ.
অর্থ : “আপনার মহান রব তায়ালা উনার উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।” (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে ক্বাযী মুহম্মদ ছানাউল্লাহ উছমানী পানীপথি মুজাদ্দিদী নকশবন্দী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত সর্বজনমান্য ও বিশ্বখ্যাত তাফসীরের কিতাব “তাফসীরে মাযহারী” কিতাবের ১০ম খ-ের ৩৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
فَعَلٰى هٰذَا يُـثْبَتُ بِهٖ وُجُوْبُ صَلٰوةُ الْعِيْدِ وَالْاُضْحِيَّةُ.
অর্থ : “এই আয়াত শরীফ উনার দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, ঈদের নামায পড়া এবং পবিত্র কুরবানী করা উভয়টি ওয়াজিব।”
“ফতওয়ায়ে নাওয়াযিল” কিতাবের ২৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَيَـجِبُ عَنْ نَفْسِهٖ لِأَنَّهٗ أَصْل بِالْوُجُوْبِ عَلَيْهِ.
অর্থ : “মালিকে নিছাবের জন্য তার নিজের পক্ষ থেকেই বা নিজের নামেই কুরবানী আদায় করা ওয়াজিব। কেননা কুরবানী মূলত তারই উপর ওয়াজিব। অর্থাৎ কুরবানী মূলত যার উপর ওয়াজিব হবে, সর্বপ্রথম তার নিজের পক্ষ থেকেই বা নিজের নামেই কুরবানী আদায় করা ওয়াজিব।”
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হানাফী মাযহাব মতে যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই কুরবানী করতে হবে। হ্যাঁ, কেউ যদি ওছীয়ত বা গইরে ওছীয়তের কারণে মৃত বা অপরের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে চায় তবে তাকে পৃথক আরেকটি কুরবানী করতে হবে। এ ব্যাপারে হানাফীদের মজবুত দলীল হচ্ছে-
عَنْ حَضْرَتْ حَنَشٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ رَأَيْتُ حَضْرَتْ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَامُ يُضَحّىْ بِكَبْشَيْنِ فَـقُلْتُ لَه مَا هٰذَا فَقَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْصَانِـىْ اَنْ اُضَحّىَ عَنْهُ فَاَنَا اُضَحّىْ عَنْهُ.
অর্থ : “তাবিয়ী হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দু’টি দুম্বা কুরবানী করতে দেখে উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম ইহা কি? অর্থাৎ দু’টি কেন? তিনি বললেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ওছীয়ত করেছেন, আমি যেনো উনার পক্ষ হতে কুরবানী করি। সুতরাং আমি উনার পক্ষ হতে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে একটি কুরবানী করছি।” (আর অপরটি আমার পক্ষ থেকে) (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)
(গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত কুরবানী সংক্রান্ত রেসালা হতে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












