পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল
মালে তেজারত বা ব্যবসায়িক মালের সম্মানিত যাকাত
, ২৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ৩১ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ব্যবসার পণ্য বা আসবাবপত্রের সম্মানিত যাকাত (সোনা-রূপার নিছাবে রূপার মূল্য ধরে) :
اَلزَّكٰوةُ وَاجِبَةٌ فِىْ عُرُوْضِ التِّجَارَةِ كَائِنَةٌ مَّا كَانَتْ اِذَا بَلَغَتْ قِيْمَتُهَا نِصَابًا مِّنَ الْوَرَقِ اَىْ مِنْ وَّرَقِ الْفِضَّةِ اَوِ الذَّهَبِ يَقُوْمُهَا بِـمَا هُوَ اَنْفَعُ لِلْفُقَرَاءِ وَ الْـمَسَاِكِيْنِ مِنْهُمَا.
অর্থ : “ব্যবসায়ের মাল যে প্রকারেরই হোক না কেন, তার দাম সোনা-রূপার নিছাব পরিমাণ হলেই সম্মানিত যাকাত ওয়াজিব হয়। সোনা অথবা রূপার মধ্য থেকে যার দাম ধরলে গরীব-মিসকীনের বেশি উপকার হয় তার দাম বা মূল্যই ধরে সম্মানিত যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে সোনার চেয়ে রূপার মূল্যকেই প্রাধান্য দিয়ে সম্মানিত যাকাত আদায় করা উত্তম। কেননা সোনার দাম ধরে দিলে অনেকের সম্মানিত যাকাত ফরয হবে না। ” (মুখতাছরুল কুদূরী, আল হিদায়া)
যেসব মালের ব্যবসা করা হয় সেসব মালের উপার্জিত অর্থ যদি নিছাব পরিমাণ হয় তাহলে যাকাত ফরয হয়। যেমন কোন ব্যক্তির ডিমের ব্যবসা আছে। এই উদ্দেশ্যে উক্ত লোক মুরগীর ফার্ম দিয়েছে। এখন উক্ত ব্যক্তিকে মুরগীর জন্যে কোন যাকাত দিতে হবেনা যেহেতু সে মুরগীর ব্যবসা করেনা, বরং মুরগীর থেকে ডিম উৎপাদন করে ডিমের ব্যবসা করে থাকে। এখন উক্ত ব্যক্তি ডিমের ব্যবসা করে যে টাকা উপার্জন করবে, তা যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং তার নিকট এক বছর থাকে তখনই তার উপর উক্ত টাকার যাকাত আদায় করা ফরয হবে।
আর যদি কোন মুরগীর ফার্মের মালিক মুরগী বেচা-কেনা করে, তবে যত টাকার মুরগী রয়েছে তা যদি নিছাব পরিমাণ হয়, আর এক বছর মালিকানাধীনে থাকে, তাহলে যত টাকার মুরগী রয়েছে, তত টাকারই যাকাত দিতে হবে। (আলমগীরী, শামী ইত্যাদি)
একইভাবে কারো সফটওয়্যার ডেভেলপিং ফার্ম আছে। তাই সফটওয়্যার ডেভেলপ করার জন্যে অনেক কম্পিউটার রয়েছে। এক্ষেত্রে কম্পিউটারের জন্যে কোন যাকাত দিতে হবেনা যেহেতু সে কম্পিউটারের ব্যবসা করেনা, বরং কম্পিউটারের মাধ্যমে সফটওয়্যার ডেভেলপিং করে সে সফটওয়্যারের ব্যবসা করে থাকে। এখন সফটওয়্যারের ব্যবসা করে যে টাকা উপার্জিত হবে, তা যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর থাকে তখনই উক্ত টাকার যাকাত আদায় করা ফরয হবে।
আর যদি কেউ কম্পিউটারের ব্যবসা করে, তবে যত টাকার কম্পিউটার রয়েছে তা যদি নিছাব পরিমাণ হয়, আর এক বছর মালিকানাধীনে থাকে, তাহলে যত টাকার কম্পিউটার রয়েছে, তত টাকারই যাকাত দিতে হবে।
কোন ব্যবসায়ের আনুসঙ্গিক বিষয়ের উপর যাকাত দিতে হয় না : কেউ মুরগীর ফার্ম করলো। সেখানে সে ৫ লাখ টাকার মুরগী কিনলো। এই ৫ লাখ টাকা তার পুঁজি। এটার জন্যে কি খরচ করলো না করলো সেটা এখানে আসবে না। একটা ঘর বানালো। ঘরের তো যাকাত দিতে হবে না। যেই মালটা দিয়ে বেচা-কেনা বা ব্যবসা করবে সেটার যাকাত দিতে হবে। এখন মুরগীর ফার্ম করতে গিয়ে ১ কোটি টাকার ঘর বানালো সেটার যাকাত দিতে হবেনা। বিল্ডিং তো বিল্ডিংয়ের জায়গায় রয়ে গেছে। যদি বিল্ডিং বেচা কেনা করে তাহলে সেটার যাকাত দিতে হবে। এখানে পুঁজি হচ্ছে ৫ লাখ টাকার মুরগী। এটার উপর যাকাত দিতে হবে। বেশি বিক্রি করলে বেশি, যখন বিক্রি করবে তখন দিতে হবে। যদি দাম কমে যায় তখন ওটার উপরই যাকাত দিতে হবে। ¬¬
পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের সম্মানিত যাকাত উনার বিধান :
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتِ الْـحَسَنِ الْبَصْرِىِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ اِذَا حَضَرَ الْوَقْتُ الَّذِىْ يُوَدِّىْ فِيْهِ الرَّجُلُ زَكَاتَهٗ اَدّٰى عَنْ كُلِّ مَالٍ وَ عَنْ كُلِّ دَيْنٍ اِلَّا مَا كَانَ ضِمَارًا لَا يَرْجُوْهُ.
অর্থ : “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন সম্মানিত যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন সম্মানিত যাকাত আদায়কারী ব্যক্তি তার সকল সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর সম্মানিত যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের সম্মানিত যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার সম্মানিত যাকাত আদায় করবে। ” (ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবাইদ কাসিম ইবনে সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সংকলন করেছেন)
ঋণগ্রস্তদের ঋণের বদলা হিসেবে সম্মানিত যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয়ার বিধান : কোন ঋণদাতা-মালদার ব্যক্তি যদি ঋণগ্রস্তদের ঋণের বদলা হিসেবে সম্মানিত যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয় তাহলে তার সম্মানিত যাকাত আদায় হবে না। কেননা ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সম্মানিত যাকাতদাতা সম্মানিত যাকাত প্রদানের মাধ্যমে বাড়তি কোন ফায়দা লুটাতে পারবে না। এভাবে সম্মানিত যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয়া প্রকাশ্য ফায়দা হাছিলের শামিল। আর সম্মানিত যাকাত উনার মাল বা অর্থ অবশ্যই সম্মানিত যাকাত পাওয়ার হকদার ব্যক্তিদেরকে হস্তান্তর করতে হবে তথা তাদেরকে মালিক করে দিতে হবে। এরপর যদি তারা ঋণ প্রদানকারীকে হস্তান্তর করে তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে যে, যাকাত গ্রহণকারী তথা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় আক্বীদাভুক্ত হতে হবে। অন্যথায় সম্মানিত যাকাত এভাবে আদায়ে আদায় হবে না। (ফিকাহ ও ফতোয়ার কিতাবসমূহ)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












