পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে পবিত্র যিকির উনার গুরুত্ব ও ফযীলত (৪)
, ০৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২১ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الشَّيْطَانُ جَاثِمٌ عَلَى قَلْبِ ابْنِ آدَمَ فَإِذَا ذَكَرَ اللهَ خَنَسَ وَإِذَا غَفَلَ وَسْوَسَ
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবে আসন পেতে বসে থাকে। যখন সে যিকির করে, তখন শয়তান পালিয়ে যায়। আর যখন সে যিকির থেকে গাফিল হয়, তখন শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ)
পূর্বে উল্লেখিত পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফে বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ উল্লেখ আছে যে-
فِيْهِ اِشَارَةٌ اِلَى اَنَّ مَنْ دَوَامَ عَلَى ذِكْرِ الرَّحْـمنِ لَـمْ يَقْرُبْهُ الشَّيْطَانُ بِـحَالٍ قَالَ بَعْضُهُمْ مَنْ نَسِىَ اللهَ وَتَرَكَ مُرَاقَبَتَهُ وَلَـمْ يَسْتَحِى مِنْهُ اَوْ اَقْبَلَ عَلَى شَىْءٍ مِّنْ حُظُوْظِ نَفْسِهِ قَيَّضَ اللهُ لَهُ شَيْطَانًا يُوَسْوِسُ لَهُ فِىْ جَـمِيْعِ اَنْفَاسِهِ وَيَغَرَّى نَفْسَهُ اِلَى طَلَبِ هَوَاهَا حَتَّى يَتَسَلَّطَ عَلَى عَقْلِهِ وَعِلْمِهِ وَبَيَانِهِ.
অর্থ: “উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে, যে ব্যক্তি সর্বদা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল থাকে, শয়তান কোনো অবস্থাতেই তার নিকটবর্তী হতে পারে না। হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা বলেন, যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভুলে যায় এবং উনার মুরাক্বাবা পরিত্যাগ করে এবং যতক্ষণ সে তার এ অবস্থা থেকে ফিরে না আসে অর্থাৎ যিকির-আযকার, মুরাক্বাবা-মুশাহাদা না করে, অথবা সে খাহেশাতে নফসের কোনো একটির প্রতি অগ্রসর হয় তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য একটা শয়তান নিযুক্ত করে দেন। অর্থাৎ তার গাফলতীর কারণেই তার সাথে একটা শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। উক্ত শয়তান প্রতি মুহূর্তে তাকে ওয়াসওয়াসা দেয় এবং ধোঁকা দেয় খাহেশাতে নফ্স্কে অনুসরণের জন্য। পরিণামে খাহেশাতে নফ্স্ তার আক্বল, ইলিম ও বয়ানের উপর প্রবল হয়।” নাউযুবিল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
অর্থ: “ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করো না, যার ক্বলবকে আমার পবিত্র যিকির থেকে গাফিল করেছি। অর্থাৎ যার ক্বল্বে আমার যিকির নেই, সে নফ্স্কে (শয়তানকে) অনুসরণ করে। ফলে তার কাজগুলো (আমলগুলো) হয় পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ।” (পবিত্র সূরা কাহ্ফ্ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
অতএব বুঝা গেলো যে, ক্বল্বী যিকির ব্যতীত শয়তান ও শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা যেমন অসম্ভব তদ্রƒপ শরীয়ত উনার খিলাফ কাজ থেকে বেঁচে থাকাও অসম্ভব।
তাই অন্তর পরিশুদ্ধ করতে হলে বা শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচতে হলে ক্বলবী যিকির করতে হবে। কারণ ক্বলবী যিকিরই সার্বক্ষণিক বা দায়িমী যিকিরের অর্ন্তভুক্ত।
যেমন দায়িমী বা ক্বল্বী যিকির সম্পর্কে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا تَكُنْ مِنَ الْغَافِلِينَ
অর্থ: “সকাল-সন্ধ্যা স্বীয় অন্তরে, সবিনয়ে, সভয়ে, অনুচ্চ আওয়াজে তোমার রব তায়ালা উনার যিকির করো। আর (এ ব্যাপারে) তুমি গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৫)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির, ইমামুল মুফাসসিরীন হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জগদ্বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে কবীরে’ উল্লেখ করেন-
مِنَ النَّاسِ مَنْ قَالَ ذِكْرُ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ وَالْـمُرَادُ مُدَاوَمَةُ الذِّكْرِ وَالْـمُوَاظَبَةُ عَلَيْهِ بِقَدْرِ الْاِمْكَانِ.
অর্থ: “কেউ কেউ বলে, শুধুমাত্র সকাল-সন্ধ্যা যিকির করার কথা উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে। মূলত উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা যিকির করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দায়িমী বা সার্বক্ষণিক যিকির এবং সাধ্যানুযায়ী যিকিরে মশগুল থাকা।” অনুরূপ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ান’ উনার মধ্যেও উল্লেখ আছে।
প্রমাণিত হলো যে, অন্তরের পরিশুদ্ধতা ও দায়িমী হুযূরী অর্জন করতে হলে অবশ্যই ক্বলবী যিকির করতে হবে। কারণ ক্বলবী যিকির ব্যতীত যেরূপ অন্তরের পরিশুদ্ধতা লাভ করা সম্ভব নয়, তদ্রƒপ দায়িমী বা সার্বক্ষণিক হুযূরীও হাছিল করা সম্ভব নয়। তাই “তাফসীরে মাযহারী”তে উল্লেখ করা হয়েছে-
دَوَامُ الْـحُضُوْرِ باِلْقَلْبِ اِذْ لَايَتَصَوَّرُ دَوَامُ الذِّكْرِ بِاللِّسَانِ.
অর্থ: “দায়িমী হুযূরী বা যিকির কেবলমাত্র ক্বলবের দ্বারাই সম্ভব। কেননা লিসান বা মুখ দ্বারা দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে যিকির করা সম্ভব নয়।”
তাই সকলেই পবিত্র ইলমে তাছাওউফ উনার কিতাবসমূহে “ ক্বল্বী যিকির” করাকে ফরয বলেছেন।
স্মরণীয় যে, ইতিপূর্বে মুহলিকাত, মুনজিয়াতসহ দশ লতিফার ইলমী বিষয়াদি আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু তা আমলে রূপায়িত করার জন্য প্রথমত একজন কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে মুরাক্বাবা-মুশাহাদা করে ইলমে তাছাওউফ হাছিল করতে হবে। তবেই সত্যিকার অর্থে মুহলিকাত তথা বদ খাছলতসমূহ দূর হবে এবং মুনজিয়াত তথা সৎ খাছলতসমূহ অর্জিত হবে। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পুরুষের জন্য কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












