পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে বৈবাহিক জীবনের রূপরেখা
, ০৫ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৫ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ২৪ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) মহিলাদের পাতা
বৈবাহিক জীবনে কতিপয় সম্মানিত সুন্নত মুবারক রয়েছে যা জীবনে একবারই পালিত হয়। কাজেই বিবাহ করার পূর্বে সে সর্ম্পকে ইলিম হাছিল করা জরুরী। অন্যথায় পরবর্তী জীবনে আফসোসের সীমা থাকবে না।
১. সুন্নতী বিবাহ অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা, বেহায়াপনা ও বিধর্মীদের অনুসরণ-অনুকরণ মুক্ত হবে। গান-বাজনা, ছবি-ভিডিও করতে পারবেনা। যৌতুকের শর্ত এবং সামর্থের অধিক মোহরানা নির্ধারণ করা যাবে না।
২. দ্বীনদার-পরহেযগার পাত্র-পাত্রী দেখে বিবাহ করা সুন্নত। শুধু সম্পদ ও সৌন্দর্যের দিককে অগ্রাধিকার দেয়া যাবে না।
৩. বিবাহের পূর্বে দ্বীনদার পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করা সুন্নত।
৪. পাত্র-পাত্রী উভয়ের পক্ষ থেকে পয়গাম পাঠানো সুন্নত।
৫. মেয়েদের অভিভাবকদের উচিত হলো, দ্বীনদার-পরহেযগার ছেলে দেখে বিবাহ দেয়া। শুধু সম্পদ, বংশ ও সৌন্দর্যের দিক প্রাধান্য দিলে পরিণাম খারাপ হয়।
৬. যে বিবাহে খরচ কম হয় এবং মোহরানা কম হয় সে বিবাহে বরকত বেশি হয়।
৭. পবিত্র মসজিদে বিবাহ করা সুন্নত।
৮. পবিত্র শাওওয়াল মাসে বিবাহ করা সুন্নত।
৯. পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াম শরীফ অর্থাৎ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) ও ইয়াওমুল জুমুয়াহ শরীফ-জুমুয়াবার বিবাহ করা সুন্নত।
১০. বিবাহের ঘোষণা দেয়া অর্থাৎ প্রচার করা সুন্নত।
১১. বিবাহের পর বিবাহের মজলিসে খোরমা-খেজুর ছিটানো সুন্নত।
১২. অলিমা করা বা দাওয়াত খাওয়ানো সুন্নত।
১৩. সাধ্য সামর্থ অনুযায়ী মোহরানা নির্ধারণ করা সুন্নত।
১৪. বিবাহের সময় মহিলাদের জন্য মেহেদী ব্যবহার করা সুন্নত। কিন্তু পুরুষের জন্য মেহেদী ব্যবহার করা মাকরূহ তাহরীমী।
১৫. বিবাহের আগে ছেলে, মেয়েকে দেখে নেয়া সুন্নত।
১৬. কোনো মেয়ে বা ছেলের যদি কোথাও বিবাহের আলোচনা চলতে থাকে তখন কোন এক পক্ষ থেকে উত্তর না দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত সেখানে প্রস্তাব দেয়া জায়িয নেই।
১৭. ইজাব-কবুল বিবাহের জন্য আবশ্যক। এ দুটি দ্বারা বিবাহ হয়ে যাবে। তবে বিবাহের আগে মেয়ের থেকে মেয়ের অলি বা অভিভাবক অনুমতি নিবেন। অনুমতি নিয়ে আসার সময় মেয়েকে ছেলের বিস্তারিত পরিচয় দিতে হবে। মোহরের টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে সে রাজি আছে কিনা সেটা জানতে হবে। মেয়ে যদি অবিবাহিতা হয় তাহলে চুপ থাকলে বা অল্প আওয়াজে কাঁদলে কিংবা হাসলে অনুমতি হয়ে যাবে। আর যদি বিবাহিতা হয় তাহলে স্পষ্টভাবে বলতে হবে। এভাবে অনুমতি নিয়ে তিনি বা অন্য কাউকে উকিল বানিয়ে ছেলে থেকে কবুল গ্রহণ করবেন।
১৮. বিবাহের জন্য খুতবা পাঠ করা সুন্নত।
১৯. বিবাহ পড়ানোর পর খুতবা দেয়া সুন্নত।
২০. বিবাহ পড়ানোর পর বর ও কনের জন্য নিম্নের দু’আ পড়া সুন্নত।
بارك الله لك وبارك عليك وجمع بينكما في خيرـ
বাংলা উচ্চারণ: বারাকাল্লাহু লাকা ওয়া বারাকা আলাইকা। ওয়া জামায়া বাইনাকুমা ফী খাইর।
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার জন্য বরকত দান করুন। আপনার উপর রহমত-বরকত নাযিল হোক। আপনাদের উভয়ের দাম্পত্য জীবন কল্যাণময় হোক।
২১. ছেলের বাড়ীতে একটি পাত্রে পানি রেখে দিবে। আহলিয়া যখন বাড়ীতে বা ঘরে প্রবেশ করবে তখন সেই পানিতে দু’ পা রাখবে। সেই পা ধোয়া পানি সমস্ত বাড়ী বা বাসায় ছিটিয়ে দিবে।
২২. বিবাহের পর যখন আহলিয়া বা স্ত্রীর সাথে প্রথম সাক্ষাত হবে তখন প্রথমে আহলিয়ার (স্ত্রী) কপালের চুল ধরে নিম্নোক্ত দু’আ পড়া সুন্নত।
اللهم إني أسألك خيرها وخير ما جبلتها عليه واعوذبك من شرها و شر ما جبلتها عليه ـ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আছয়ালুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবাল-তাহা আলাইহি। ওয়া আঊযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবাল-তাহা আলাইহি।
অর্থ: আয় মহান আল্লাহ পাক! আমি আপনার নিকট আহলিয়ার (স্ত্রীর) যাবতীয় কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং যে সকল কল্যাণ দিয়ে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেসব কল্যাণ ও বরকত প্রার্থনা করছি। আর আপনার নিকট তার অকল্যাণ থেকে পানাহ্ বা আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর যে সকল অকল্যাণ তার মধ্যে সৃষ্টিগতভাবে রয়েছে তা থেকেও পানাহ্ চাচ্ছি।
২৩. আহলিয়ার সাথে হাসি-খুশি করা সুন্নত।
২৪. দুই বা ততোধিক আহলিয়া থাকলে সকলকে সমানভাবে রাখতে হবে। অন্যথায় হাশরের ময়দানে অর্ধাঙ্গ অবস্থায় উঠতে হবে।
২৫. আহাল-আহলিয়ার মধ্যকার গোপনীয় বিষয়াদি অপরের কাছে বর্ণনা করা যাবে না। কেননা তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অত্যন্ত অপছন্দনীয়।
২৬. নির্জনবাসের পূর্বে এই দুআ’ পড়া সুন্নত। এই দোয়া না পড়লে আগত সন্তানের উপর শয়তানের প্রভাব পড়ে। যার ফলে সন্তান শয়তানী স্বভাববিশিষ্ট হয়। নাউযুবিল্লাহ্!
بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا.
বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিব-নাশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিশ্ শায়তানা মা রাযাক্ তানা
অর্থ: আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নামে (নির্জনবাস করছি)। আয় মহান আল্লাহ পাক! আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং যে সন্তান আমাদেরকে দান করবেন তার থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন।
২৭. মনি বের হওয়ার সময় এ দু’আ পাঠ করা সুন্নত।
بسم الله اللهم بارك لنا فيما رزقتنا ولا تجعل للشيطان نصيبا فيما رزقتنا ـ
বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিমা রাযাক্ তানা ওলা তাজয়াল লিশ শাইতানা নাছীবান ফিমা রাযাক্ তানা
“অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকে শুরু করছি। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদেরকে যে সন্তান দান করবেন তার মধ্যে বরকত দিন। আর তাতে বিতাড়িত শয়তানের কোন অংশ রাখবেন না। তাকে বিতাড়িত শয়তানের অনিষ্টতা থেকে পানাহ্ দান করুন। ২৮. ফুলসজ্জা বা বাসর রাতে আহালের (স্বামী) পক্ষ থেকে আহলিয়াকে (স্ত্রী) হাদিয়া দেয়া সুন্নত।
২৯. একবার আহলিয়ার সাথে নির্জনবাস করার পর পুনরায় আহলিয়ার সাথে নির্জনবাস করার ইচ্ছা করলে নামাযের ন্যায় অযু করে নেয়া সুন্নত।
৩০. নির্জনবাসের পরে গোসল করে নেয়া উত্তম। তবে যদি সময় থাকে অথবা দ্বিতীয়বার নির্জনবাসের ইচ্ছা থাকে তাহলে পরে গোসল করাও সুন্নত। তবে অযূ-ইস্তিঞ্জা করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। আর কখনো যেন নামায কাযা না হয় তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
৩১. নাপাক অবস্থায় মাটিতে পা না দেয়া। তায়াম্মুম করতঃ বিছানা থেকে নামতে হবে।
৩২. যে কাপড় পরিধান করে আহলিয়ার সাথে নির্জনবাস করা হয়, সেই কাপড় পবিত্র। তবে যদি কোনো অংশে নাপাকি লাগে সে অংশটুকু ধুয়ে ফেললেই হয়ে যাবে।
৩৩. আহাল বা স্বামী অনেক দিন পর বাড়িতে আসলে সাথে সাথে বাড়িতে না যাওয়া বরং একটু বিলম্ব করে প্রবেশ করা যাতে আহলিয়া পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে সাজসজ্জা করে নিতে পারে। (চলবে)
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












