ইলমে আরূজী অর্থাৎ ছন্দ প্রকরণ সংশ্লিষ্ট আদব (১৬)
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গান-বাজনার শরয়ী ফায়ছালা
, ০৩ মে, ২০২৩ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এ প্রসঙ্গে “ফাওয়ায়েদুল ফুওয়াদ” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, একদা দিল্লীর ৫০০ আলিমের সাথে সুলত্বানুল আউলিয়া হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাহাছ হয়। কারণ দিল্লীর সেই আলিমরা অপবাদ দিয়েছিল যে, হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গান-বাজনা করেন। বাহাছে যখন এ প্রশ্ন উত্থাপন করা হলো- তখন হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি কস্মিনকালেও গান-বাজনা করিনা বরং আমি সামা করি। আর আমার সামা পাঠের শর্ত হচ্ছে- (১) সেখানে কোন বাদ্য-যন্ত্র থাকবে না, (২) কোন বেগানা মহিলা থাকবে না, (৩) কোন নাবালেগ দাড়ীবিহীন বালক থাকবে না, (৪) যে ছন্দ বা ক্বাছীদাগুলো পাঠ করা হবে তা ইসলামী শরীয়ত সম্মত হতে হবে। (৫) তা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে আকৃষ্টকারী হতে হবে, (৬) আর যাঁরা শুনবে, উনারা সবাই বুযুর্গ পরহিযগার ও আল্লাহওয়ালা হতে হবে।
যখন হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একথা বললেন, তখন দিল্লীর আলিমরা উনাকে হক্ব বলে মেনে নিলেন এবং নিজদের ভুলের জন্য লজ্জিত হলেন। কাজেই পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যে সামা পাঠ করেছেন তা এরূপই ছিল। সেই সামা উনার সাথে বর্তমান জারী বা কাওয়ালীকে তুলনা করা কূফরী বৈ কিছুই নয়।
অতএব, প্রমাণিত হলো সুলত্বানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জীবনে কখনোই গান-বাজনা করেননি। যারা উনার নামে মিথ্যা তোহমত দেয় তারা চরম ফাসিক ও কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার।
কেউ কেউ বলে “বুখারী শরীফ” উনার ৫ম খ-ে গান-বাজনা জায়িয লেখা আছে, তারা চরম জাহিল ও বিদ্য়াতী। আর জাহিল বলেই বুখারী শরীফ উনার ৫ম খন্ড দলীল হিসেবে পেশ করেছে। অথচ মুল বুখারী শরীফ উনার কোন ৫ম খ-ই নেই। সে ব্যক্তিকে শুধু এতটুকু বলতে হবে যে, “বুখারী শরীফ উনার যেখানে গান-বাজনা জায়িয বলা হয়েছে সে অংশটুকু বাংলায় অনুবাদ করে দাও।” তবেই তার মিথ্যা দলীলের হাক্বীক্বত প্রকাশ পেয়ে যাবে।
মূলতঃ বুখারী শরীফ উনার কোথাও যদি গান-বাজনা জায়িয লেখা থাকতো তবে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আদাবুল মুফরাদ” কিতাবে গান-বাজনা হারাম বললেন কেন? কাজেই যারা এ ব্যাপারে বুখারী শরীফ উনার দলীল দেয় তারা চরম জাহিল, ভ-, বিদ্য়াতী ও প্রতারক।
মূলকথা হচ্ছে ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে বিবাহ অনুষ্ঠানসহ সকল স্থানেই গান-বাজনা করা হারাম। এটাকে হালাল বলা কুফরী।
এছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন মজীদ উনার পবিত্র সূরা শূয়ারা শরীফ উনার ২২৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বিভ্রান্ত, গুমরাহ কবি-সাহিত্যিকদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالشُّعَرَاءُ يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوُونَ
অর্থ : “বিভ্রান্ত লোকেরাই (মিথ্যা, অশ্লীলতা, কুৎসা বর্ণনাকারী) কবিদের অনুসরণ করে।”
এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর হযরত আব্দুল্লাহ বিন রাওহা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু, হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা ক্রন্দনরত অবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা তো ক্বাছীদা, কবিতা রচনা করে থাকি। এখন আমাদের কি উপায়?” তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষাংশ পাঠ করুন।”
اِلَّا الَّذِينَ اٰمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِـحَاتِ وَذَكَرُوا اللهَ كَثِيْرًا
অর্থ : “তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে খুব স্মরণ করে।” (পবিত্র সূরা শূয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২২৭)
অর্থাৎ পবিত্র সূরা শূয়ারা শরীফ উনার ২২৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বেদ্বীনদের অনর্থক, ভ্রান্ত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কুরুচিসম্পন্ন ও ইসলামী শরীয়তবিরোধী কবিতার সমালোচনা করা হয়েছে। আর ২২৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ বা উক্ত পবিত্র সূরা শরীফ উনার শেষাংশ দ্বারা ঈমানদার ও নেককার কবিদের উত্তম, নছীহতমূলক রুচিসম্পন্ন কবিতা বা কাছীদাসমূহের প্রশংসা করা হয়েছে।
অর্থাৎ ঈমানদার ও নেককার কবি ও উনাদের উত্তম রুচিসম্পন্ন ও ইসলামী শরীয়তসম্পন্ন কবিতাসমূহ যে গ্রহণযোগ্য সেটাই এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে শেষাংশ দ্বারা বোঝানো হয়েছে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُبَىَّ بْنَ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَخْبَرَهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ مِنَ الشّعْرِ حِكْمَةً.
অর্থ : হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন কোন কবিতা বা ক্বাছীদা হিকমত পূর্ণ। (বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ ক্বাছীদা শরীফ উনার দ্বারা গভীর অর্থবোধক বিষয়কে সহজে প্রকাশ করা যায়। ‘হিকমত’ অর্থ সঠিক প্রজ্ঞাপূর্ণ ও সূক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা।
এছাড়াও একটি অনেক বড় হাদীছ শরীফ, যা উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন-
عَنْ حَضْرَتْ ام الـمؤمنين عَائِشَةَ الصِدّيْقَةٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَضَعُ لـِحَسَّانٍ مِنْبَرًا فِى الْـمَسْجِدِ يَقُوْمُ عَلَيْهِ قَائِمًا يُفَاخِرُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْ يُنَافِحُ وَيَقُوْلُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ يُؤَيّدُ حَسَّانَ بِرُوْحِ الْقُدْسِ مَا نَافَحَ اَوْ فَاخَرَ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিশিষ্ট ছাহাবী কবি হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে একটি মিম্বর শরীফ স্থাপন করেছিলেন। তিনি উনার উপর দাঁড়িয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে গৌরবময় না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ অথবা কাফিরদের কুফরীমূলক এবং অশ্লীল ও অশালীন বক্তব্যের জাওয়াব স্বরূপ না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। আর ফখরে মওজুদাত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলতেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা সাহায্য করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে গৌরবময় না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ অথবা কাফিরদের কুফরীমূলক এবং অশ্লীল ও অশালীন বক্তব্যের জাওয়াব স্বরূপ না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতে থাকেন।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পুরুষের জন্য কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












