পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল ও হারাম উভয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে (১৫)
, ০৯ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৪ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
প্রসঙ্গ: বেপর্দা হওয়া হারাম (২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, একবার খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি’য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে একত্রে একটি কামড়ায় বসে কিছু বিষয় আলাপ-আলোচনা করছিলেন। এমন সময় সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ স্মরণ হলো। সাথে সাথে তিনি দ্রুত দাঁড়িয়ে গেলেন এবং দ্রুত সেই কামরা থেকে বের হতে যাচ্ছিলেন। বের হওয়ার সময় দরজার চৌকাঠের সাথে উনার মাথা মুবারক লেগে উনার কপাল মুবারক ফেটে যায় ও দরদর করে রক্ত মুবারক ঝরতে থাকে।
রক্ত মুবারক ঝরা অবস্থায়ই তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গিয়ে উপস্থিত হন। উনার কপাল মুবারক থেকে রক্ত ঝরতে দেখে স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কে আপনার কপাল মুবারক ফাটিয়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আরবের বুকে এমন কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি যে, আমার কপাল মুবারকে আঘাত করতে পারে। তবে আপনার একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ আমার কপাল মুবারক ফাটিয়ে দিয়েছে।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন পবিত্র হাদীছ শরীফখানা আপনার মাথা মুবারকে আঘাত করলেন? উত্তরে তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি এবং আমার সম্মানিত মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হয়রত উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম আমরা দু’জন একটি কক্ষে একত্রিত হয়ে কিছু জরুরী বিষয় আলাপ-আলোচনা করতেছিলাম। এমন সময় আমার স্মরণ হলো, “কোনো পুরুষ কোনো মহিলার সাথে একাকী একত্রিত হলে সেখানে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান। ” এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা আমার স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে আমি দ্রুত উঠে বের হওয়ার সময় আমার কপাল মুবারক চৌকাঠে লেগে কপাল মুবারক ফেটে যায় ও রক্ত মুবারক ঝরতে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
এ মুবারক ঘটনা থেকে ফিকির ও চিন্তার বিষয় হচ্ছে- সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত মেয়ে যিনি “উম্মুল মু’মিনীন” আলাইহাস সালাম। সে হিসেবে উনাদের পরস্পর পরস্পরের দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাতে পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী প্রতি দৃষ্টিতে এক একটি কবুল হজ্জের ছওয়াব রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! তারপরেও বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ বা পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার উপর আমল করতে গিয়ে তিনি পর্দা পালনের প্রতি কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন তা ফিকির করতে হবে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- দু’ শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামী হবে, যারা গরুর লেজ সদৃশ বেত দ্বারা মানুষকে প্রহার করে এবং যে সব নারী এত পাতলা পোশাক পরিধান করে যে তার ভেতর দিয়ে শরীরের অংশ দেখা যায় এবং উটের কুঁজের মত কেশ বিন্যাস করবে। এ নারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, যা বহুদূর থেকে পাওয়া যায়। (মুসলিম শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ২১২৭, মুসনাদে আহমদ শরীফ, হাদীস শরীফ নং ৮৬৬৫]
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, আমার পরে মহিলা ফিতনা পুরুষদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, তিন শ্রেণীর মানুষের উপর জান্নাত হারাম অর্থাৎ এই তিন শ্রেণীর মানুষ কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
প্রথম শ্রেণী হলো- যারা কোনো প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য পান বা গ্রহণ করে।
দ্বিতীয় শ্রেণী হলো- যে বা যারা পিতা-মাতার অবাধ্য, এই শ্রেণীভুক্ত যারা; তারাও জান্নাতে যাবে না।
তৃতীয় শ্রেণী হলো- দাইয়্যুছ। দাইয়্যুছ ঐ ব্যক্তি; যে তার পরিবারে পর্দার হুকুম চালু রাখেনি। পরিবারের সদস্যের মাঝে বেপর্দা ছিলো, বেহায়াপনা ছিলো কিন্তু সে বাধা প্রদান করেনি। পরিবারের কর্তা হিসেবে বেপর্দা-বেহায়াপনা বন্ধ না করার জন্য এই শাস্তি পাবে সে। [মুসনাদে আহমাদ শরীফ: ২/৬৯]
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, খবরদার! তোমরা বেগানা স্ত্রীলোকের ঘরে প্রবেশ করো না। জনৈক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! স্বামীর ভাইদের (ভাসুর, দেবর, বেয়াই ইত্যাদি) সম্পর্কে কি নির্দেশ করেন?
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তারা তো মহিলাদের জন্য মৃত্যুতুল্য। অর্থাৎ মহাবিপদতুল্য। (তিরমিযী শরীফ ১/২২০)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, আমি এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম আমরা দু’জন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি চোখে দেখতে পেতেন না তিনি সেখানে আসতে লাগলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা উনার থেকে পর্দা করুন, আড়ালে চলে যান। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি তো চোখে দেখেন না। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারাও কি চোখে দেখেন না? (আবু দাউদ শরীফ ২/৫৬৮)
কাজেই প্রত্যেক মুসলমান জিন ইনসানের জন্য ফরজ-ওয়াজিব হচ্ছে উপরোক্ত আলোচনা থেকে ইবরত নছীহত হাছিল করে হাক্বীক্বী পর্দা করা এবং বেপর্দা থেকে স্বপরিবারে বেঁচে থাকার কোশেশ করা।
খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আমাদের সবাইকে হাক্বীক্বী পর্দা করার এবং বেপর্দা থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
-আল্লামা নাজমুল হুদা ফরাজী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)