পবিত্র মসজিদ উনার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও বুযূর্গী-সম্মান মুবারক (২)
, ০৬ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত ইমাম আরযাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আখবারে মক্কা শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন- “ইমামুল খমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি একদা আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুর রবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত মক্কা শরীফ ছিলাম। যখন তিনি সম্মানিত কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিলেন, তখন আমি উনার পিছনে ছিলাম। হঠাৎ লোকজনের মধ্য থেকে একজন লম্বাকৃতির লোক আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার নিকট এসে উনার সম্মানিত পিঠ মুবারক-এ তার হাত রাখলো। তখন আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি লোকটির দিকে দৃষ্টি মুবারক দিলেন। লোকটি বললো, আপনার উপর সালাম বর্ষিত হোক, আয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে) সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সুওয়াল করতে চাই। আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি চুপ থাকলেন। আমি এবং লোকটি আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার তাওয়াফসহ প্রয়োজনীয় কাজ সমাধা করার পূর্ব পর্যন্ত উনার পিছনে ছিলাম। তারপর তিনি সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার হাতিমে প্রবেশ করলেন। অতঃপর তিনি সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার মীযাবের নীচে দাঁড়ালেন। আমি ও লোকটি উনার পিছনে দাঁড়ালাম। তারপর তিনি উনার প্রয়োজনীয় নামায শেষ করে বসলেন। অতঃপর আমার দিকে দৃষ্টি মুবারক দিলে আমি দাঁড়িয়ে উনার পাশে গিয়ে বসলাম। তারপর আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে আমার সম্মানিত ইসিম বা নাম মুবারক ধরে সম্বোধন করে বললেন, ঐ সুওয়ালকারী কোথায়? তখন আমি লোকটির দিকে ইশারা করলাম। লোকটি এসে আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম উনার সামনে বসলো। আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি কোন বিষয়ে সুওয়াল করতে চাচ্ছো? অর্থাৎ তুমি কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছো? (লোকটি বললো) আমি আপনাকে এই সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার তাওয়াফের সূচনা সম্পর্কে সুওয়াল করছি তথা আমি আপনার নিকট সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি যে, কেন? কোথা থেকে? কখন? এবং কিভাবে এই সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার তাওয়াফ শুরু হয়? আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি লোকটিকে বললেন যে, ঠিক আছে। তুমি কোথা থেকে এসেছো? লোকটি বললো, শামদেশ (সিরিয়া) থেকে। তিনি বললেন, তোমার অবস্থানস্থল কোথায়? লোকটি বললো, বাইতুল মুকাদ্দাস। তিনি বললেন, তুমি কি সম্মানিত দুখানা কিতাব অর্থাৎ সম্মানিত তাওরাত শরীফ ও সম্মানিত ইঞ্জীল শরীফ পড়েছো? লোকটি বললো, হ্যাঁ। আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে শামদেশবাসী স্নেহাস্পদ! তুমি মুখস্ত করো এবং তুমি আমার থেকে কখনও সত্য ব্যতীত ব্যতিক্রম কিছু বর্ণনা করবে না। এই সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার তাওয়াফ মুবারক উনার সূচনা হচ্ছে- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنِّـىْ جَاعِلٌ فِـى الْاَرْضِ خَلِيفَةً
‘নিশ্চয়ই আমি দুনিয়ার যমীনে খলীফা প্রেরণ করবো’
তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, আয় বারে এলাহী মহান আল্লাহ পাক! আপনি কী আমাদের ব্যতীত অন্য কাউকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করবেন, যারা দুনিয়ার যমীনে ফিতনা-ফাসাদ করবে, রক্ত প্রবাহিত করবে, পরস্পর পরস্পরের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ করবে, পরস্পর পরস্পরের সাথে শত্রুতা করবে এবং পরস্পর পরস্পরকে যুলুম-নির্যাতন করবে? আয় বারে এলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমাদের মধ্য থেকেই সেই সম্মানিত খলীফা মনোনীত করুন; আমরা দুনিয়ার যমীনে ফেতনা-ফাসাদ করবো না, রক্ত প্রবাহিত করবে না, পরস্পর পরস্পরের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ করবো না, পরস্পর পরস্পরের সাথে শত্রুতা করবো না এবং পরস্পর পরস্পরকে যুলুম-নির্যাতন করবো না। আমরা আপনার সম্মানিত হামদ্ তথা প্রশংসা মুবারক উনার সম্মানিত তাসবীহ মুবারক পাঠ করবো, আপনার সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক বর্ণনা করবো, আপনারই অনুসরণ-অনুকরণ করবো এবং আপনার নাফরমানী করবো না। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
اِنِّـىْ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
‘নিশ্চয়ই আমি যা জানি, আপনারা তা জানেন না।’
(আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম) তিনি বললেন, তারপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ধারণা করলেন যে, উনারা যা বলেছেন নিশ্চয়ই তা উনাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মক্ববূল হয়নি। আর নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের কথায় অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তাই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার সাথে লেগে গেলেন, উনাদের মাথা মুবারক উত্তোলন করলেন, উনারা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে অনুনয়-বিনয় প্রকাশ করতে থাকলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি মুবারক উনার ভয়ে কাঁদতে লাগলেন। আর উনারা সম্মানিত ‘আরশে ‘আযীম মুবারক তিন যুগ তাওয়াফ করলেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দিকে দৃষ্টি মুবারক দিলেন। অতঃপর উনাদের উপর সম্মানিত রহমত মুবারক নাযিল হলো। তারপর যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক উনার নীচে চার স্তম্ভ মুবারক বিশিষ্ট একটি ঘর মুবারক তৈরী করেন। উক্ত স্তম্ভ মুবারকগুলো ছিলো জমরূদের এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি সেগুলোকে লাল ইয়াকুত পাথর দ্বারা আবৃত করলেন। আর সম্মানিত ঘর মুবারক উনার নামকরণ মুবারক করলেন, ‘আল বাইতুদ্ব দ্বোরাহ্’। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক ছেড়ে এই সম্মানিত ঘর মুবারক উনাকে তাওয়াফ করুন! আমার মহাসম্মানিত আব্বাজান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, অতঃপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক ছেড়ে সম্মানিত ঘর মুবারক তাওয়াফ মুবারক করা শুরু করলেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক তাওয়াফ করার চেয়ে উক্ত সম্মানিত ঘর মুবারক তাওয়াফ করা অধিকতর সহজসাধ্য হলো। সুবহানাল্লাহ! এটাই হচ্ছেন ‘সম্মানিত বাইতুল মা’মূর শরীফ’। যেই সম্মানিত ঘর মুবারক উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, প্রতিদিন ও প্রতিরাত উক্ত ঘর মুবারক-এ ৭০ হাজার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রবেশ করে থাকেন। (যারা একবার প্রবেশ করেন) উনারা আর কখনও সেই ঘর মুবারক-এ প্রবেশ করার সুযোগ পাবেন না। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে এই কথা বলে প্রেরণ করলেন যে, আপনারা দুনিয়ার যমীনে উক্ত সম্মানিত ঘর মুবারক উনার অনুরূপ ও উক্ত ঘর মুবারক উনার সমপরিমাণ একখানা সম্মানিত ঘর মুবারক তৈরী করুন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমানবাসী যেভাবে ‘সম্মানিত বাইতুল মা’মূর শরীফ’ তাওয়াফ করে থাকেন, সেভাবে পৃথিবীবাসীকে সম্মানিত কা’বা শরীফ উনাকে তাওয়াফ করার জন্য সম্মানিত আদেশ মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ!
তখন লোকটি বললো, আয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে) সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম! আপনি সঠিক বিষয়টিই বর্ণনা মুবারক করেছেন। বিষয়টি এরূপই ছিলো।” সুবহানাল্লাহ! (আখবারু মাক্কা শরীফ) (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খরচ করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৫)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (১)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিজাতীয় বিধর্মী তথা ইহুদী-নাছারাদেরকে অনুসরণ করা ইসলামী শরীয়তে হারাম-নাজায়িয
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৬)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












