সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩১)
, ১৮ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
৫. আল-মা’রূফ তার এই ধরনের মিথ্যাচার, প্রতারণা ও ধোকাবাজী শুধু যে আমাদের কাছেই প্রকাশ পেয়েছে তা নয় বরং সে যে কিতাব থেকে উল্লেখিত ইবারত উল্লেখ করেছে উক্ত ‘আল-মুখতার’ কিতাবের লিখকের কাছেও দিন-দুপুরে হাতেনাতে চোর হিসেবে ধরা পড়েছে তা হলো- উক্ত ‘আল-মুখতার’ কিতাবের লিখক তিনি নিজেই নিজের লিখিত কিতাবের শরাহ বা ব্যাখ্যা করে উক্ত গ্রন্থের নাম দিয়েছেন ‘আল-ইখতিয়ার লি তা’লীলিল্ মুখতার’। অত্র ব্যাখ্যাগ্রন্থের লিখক হযরত আবুল ফদ্বল মূছিলী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বয়ং এ ইবারতের যে ব্যাখ্যা করেছেন, উক্ত শরাহ বা ব্যাখ্যায় পৃথিবীর কোথাও খালি চোখে নতুন চাঁদ দেখার ভিত্তিতে সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু করার কথা বলেন নাই।
নিম্নে সম্পূর্ণ ইবারতখানা তুলে ধরা হলো-
قَالَ: (فَإِذَا ثَبَتَ فِي بَلَدٍ لَزِمَ جَمِيعَ النَّاسِ وَلَا اعْتِبَارَ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ) هَكَذَا ذَكَرَهُ قَاضِيخَانُ. قَالَ: وَهُوَ ظَاهِرُ الرِّوَايَةِ، وَنَقَلَهُ عَنْ شَمْسِ الْأَئِمَّةِ السَّرْخَسِيِّ وَقِيلَ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ. وَذَكَرَ فِي الْفَتَاوَى الْحُسَامِيَّةِ: إِذَا صَامَ أَهْلُ مِصْرٍ ثَلَاثِينَ يَوْمًا بِرُؤْيَةٍ، وَأَهْلُ مِصْرٍ آخَرَ تِسْعَةً وَعِشْرِينَ يَوْمًا بِرُؤْيَةٍ فَعَلَيْهِمْ قَضَاءُ يَوْمٍ، إِنْ كَانَ بَيْنَ الْمِصْرَيْنِ قُرْبٌ بِحَيْثُ تَتَّحِدُ الْمَطَالِعُ، وَإِنْ كَانَتْ بَعِيدَةً بِحَيْثُ تَخْتَلِفُ لَا يَلْزَمُ أَحَدَ الْمِصْرَيْنَ حُكْمُ الْآخَرِ. وَذَكَرَ فِي الْمُنْتَقَى عَنْ أَبِي يُوسُفَ: يَجِبُ عَلَيْهِمْ قَضَاءُ يَوْمٍ مِنْ غَيْرِ تَفْصِيلٍ. وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ فِي مِثْلِهِ: لَهُمْ مَا لَهُمْ وَلَنَا مَا لَنَا. وَعَنْ عَائِشَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا -: فِطْرُ كُلِّ بَلْدَةٍ يَوْمَ يُفْطِرُ جَمَاعَتُهُمْ وَأَضْحَى كُلِّ بَلْدَةٍ يَوْمَ يُضَحِّي جَمَاعَتُهُمْ.(الاختيار لتعليل المختار الجلد الاول ১২৯ صفحة مكتتة دار الكتب العلمية بيروت لبنان)
সঠিক অর্থ: “(কোনো শহর বা অঞ্চলে নতুন চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সে শহর বা অঞ্চলের সকল লোকের জন্য তার অনুসরণ করা ওয়াজিব হবে। তাই এক্ষেত্রে উদয়স্থলের পার্থক্য ধর্তব্য হবে না) (ইতিপূর্বে আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, এটি হলো নিকটবর্তী এলাকার হুকুম) এমনটি ‘ফতওয়ায়ে কাজীখান’ কিতাবের লেখক হযরত কাজীখান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করে বলেন, ইহাই যাহিরে রিওয়ায়েত বা হানাফী মাযহাব উনার মূল বর্ণনার ফায়সালা। ইহাই হযরত শামসুল আইম্মাহ সারাখ্সী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাব ‘আল-মাবসূত লিস্ সারাখ্সী’তে উদ্ধৃত করেছেন। এজন্যই কোনো কোনো ফুক্বাহা কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেছেন, উদয়স্থলের পার্থক্য নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। ‘ফতওয়াল্ হুস্ সামিয়্যাহ’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, ‘যখন কোনো শহরের লোক নতুন চাঁদ দেখার ভিত্তিতে পবিত্র রমাদ্বান শরীফের ৩০ দিন রোযা রাখলো, আর অপর কোনো শহরের লোক নতুন চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ২৯ দিন রোযা রাখলো, এমতাবস্থায় এ দুই শহর যদি একই মাত্বলা’ বা উদয়স্থলের আওতাভুক্ত হয়, তাহলে ২৯ দিনের রোযা পালনকারীগণ একটি রোযার কাযা করে নিবেন। আর যদি উক্ত দুই শহরের মাত্বলা’ বা উদয়স্থলের মধ্যে দূরত্ব বজায় থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় এক শহরের মাত্বলা’র হুকুম অপর শহরের উপর প্রযোজ্য হবে না। ‘আল-মুন্তাক্বা’ কিতাবে উল্লেখ আছে, ‘হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, তাফসীল না হলে অর্থাৎ একই মাত্বলা’ভুক্ত ব্যক্তিগণ একদিনের রোযার ক্বাযা করবেন। ’ বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে (ভিন্ন মাতলা’ভুক্তদের ব্যাপারে) অনুরূপই বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, ‘উনাদের চাঁদ দেখার উপর উনাদের হুকুম, আর আমাদের চাঁদ দেখার উপর আমাদের হুকুম। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রত্যেক শহরবাসী ওই দিন পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করবেন, যে দিন উক্ত শহরের সকলে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করে। প্রত্যেক শহরবাসী ওই দিন পবিত্র ঈদুল আদ্বহা পালন করবেন, যে দিন উক্ত শহরের সকলেই পবিত্র ঈদুল আদ্বহা পালন করেন। (আল-ইখতিয়ার লি তা’লীলিল্ মুখতার ১ম খ- ১২৯ পৃষ্ঠা প্রকাশনা: দারুল্ কুতুবিল ইলমিয়াহ, বৈরূত লেবানন) চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর (২)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বেপর্দা সর্বপ্রকার অনিষ্ট ও ফিতনা-ফাসাদের মূল
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে মুসলমান যে বিজাতীয় সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখবে, তাদের সাথেই তার হাশর নশর হবে
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করার অপরিসীম ফযীলত
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দুরূদ শরীফ দৈনিক বাদ ইশা ও বাদ ফজর ১০০ বার করে পাঠ করা সকলের জন্য আবশ্যক
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৫)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত- প্রাণীর ছবি হারাম
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












