পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফই পবিত্র যাকাত প্রদানের উৎকৃষ্ট সময়।
, ২৮ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৯ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২৬ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সম্পাদকীয়
![পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফই পবিত্র যাকাত প্রদানের উৎকৃষ্ট সময়।](https://www.al-ihsan.net/uploads/1692319887_যাকাত.jpg)
সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার সঙ্গে পবিত্র যাকাত উনার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কেননা রোযা হচ্ছে দেহের জন্য পবিত্র যাকাতস্বরূপ। সম্পদের যেরূপ পবিত্র যাকাতের বিধান রয়েছে, তদ্রূপ শরীরের পবিত্র যাকাত হিসেবে রোযাকে গণ্য করা হয়ে থাকে। যদিও পবিত্র যাকাত প্রদানের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই, তথাপি পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফে পবিত্র যাকাত প্রদান নানা দিক থেকেই উত্তম ও তাৎপর্যময়। একদিকে রোযা পালনের মাধ্যমে দৈহিক যাকাত চলমান থাকে, অন্যদিকে সম্পদের ওপর পবিত্র যাকাত প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক যাকাতও পবিত্র এ মাসে প্রদানের সমান্তরাল সুযোগ লাভ করা যায়। এমনিতেই মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার প্রতিটি মুহূর্ত খুব মূল্যবান ও বরকতের, তাই রোযা অবস্থায় পবিত্র যাকাত প্রদান করলে রোযার মূল্য ও রোযাদারের বরকত অধিকতর বৃদ্ধি পায়। নেকীর দিকটি বিবেচনায় নিলেও তা সময়োপযোগী। কেননা পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফে একটি নফল ও একটি ফরজের সমান সওয়াব বয়ে আনে এবং একটি ফরজ অন্য সময়ের ৭০টি ফরজের সমান সওয়াব ও মর্যাদায় উন্নীত হয়। সম্পদের যাকাত আবশ্যিক ইবাদত হিসেবে যেহেতু প্রদান করতেই হবে, তাই সেটি রমাদ্বান শরীফ উনার পবিত্র ও বরকতময় সময়ে প্রদান করলে তা অধিক নেকীর্জনের পথ সুগম করে দেয়।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পাঁচটি স্তম্ভের একটি হলো পবিত্র যাকাত। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার সঙ্গে পবিত্র যাকাত উনার সম্পর্ক সুনিবিড়। যাকাত মানে যেমন পবিত্রতা, তেমনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মানে হলো আগুনে পুড়ে সোনা খাদমুক্ত বা খাঁটি করা। পবিত্র কুরআন শরীফে নামাজের নির্দেশ যেমন ৮২ বার রয়েছে, অনুরূপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যাকাতের নির্দেশনাও ৮২ বার রয়েছে। ‘যাকাত’ শব্দ দ্বারা ৩০ বার, ‘ইনফাক’ শব্দ দ্বারা ৪৩ বার এবং ‘সদাকাত’ শব্দ দ্বারা ৯ বার এই নির্দেশনা রয়েছে। এর দ্বারা যাকাতের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
প্রসঙ্গত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে মানবজাতি! একটি মহান ও বরকতপূর্ণ মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করার জন্য হাজির হয়েছে।”
মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষের কাছে রিযিক চান না। কিন্তু সম্মানিত ইবাদতের জন্যই মানুষের সৃষ্টি। সম্মানিত ইবাদত অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, “যারা অবিশ্বাসী তারা ভোগ-বিলাস ও পানাহারে ডুবে আছে, যেমন চতুষ্পদ জন্তু পানাহারে লিপ্ত থাকে। জাহান্নামই তাদের শেষ মঞ্জিল।”
পক্ষান্তরে ইবাদতের আহ্বান জানিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম (রোযা) ফরয করা হয়েছে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। অবশ্যই, তোমরা মুত্তাক্বী হতে পারবে।”
প্রকৃতপক্ষে ছিয়াম বা রোযার অর্থই হলো মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক উনার কাছে স্বতঃস্ফূর্ত ও নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক গ্রহণ ও বর্জন। এক্ষেত্রে রোযাদার নিজের নফসের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ঊর্ধ্বে উঠে যতটা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশের অনুগত হবে, তার আবদিয়াতের মাক্বাম তত সমুন্নত হবে। সাহরীতে বিলম্ব এবং তাড়াতাড়ি ইফতার করার মাধ্যমে সে আবদিয়াতই ফুটে উঠে। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সমস্ত পাপাচার থেকে মুক্ত থেকে তাসবীহ-তাহলীল, তারাবীহ, যিকির-আযকার, ইতিকাফ করা, বেশি বেশি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত সর্বোপরি পবিত্র যাকাত-ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে বান্দার আবদিয়াতই পূর্ণাঙ্গতা পায়।
পশু প্রবৃত্তি তথা নফসানিয়তকে বিলীন করে আখলাকে এলাহীতে ভূষিত হওয়ার মাঝেই রোযার সার্থকতা। সংযমের পাশাপাশি সহানুভূতির অনুশীলনই পবিত্র রোযার শিক্ষা। রোযা রেখে বিত্তবানও না খেয়ে থাকার কষ্ট প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করে। যা তাকে সহানুভূতিতে অনুপ্রাণিত করে। এক ফরযে ৭০ ফরযের ফযীলতের পাশাপাশি এই সহমর্মিতা তাই বিত্তবানদেরকে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে পবিত্র যাকাত প্রদানে উৎসাহিত করে।
মূলত, পবিত্র ছলাত উনার পরেই পবিত্র যাকাত উনার স্থান। পবিত্র যাকাত পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার তৃতীয় স্তম্ভ। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র যাকাত শব্দটি বিভিন্ন গঠন প্রক্রিয়ায় ৫৮ বার এসেছে। এর মধ্যে ৯ বার ‘পবিত্র যাকাত প্রদান করো’ বলে নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন এবং যাকাত সংগ্রহকারীদের জন্য দোয়া মুবারকও করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, পবিত্র রোযা উনার সাথে পবিত্র যাকাত উনার একটা অন্তর্নিহিত সম্পর্ক রয়েছে। কারণ পবিত্র যাকাতও পবিত্রতা ঘটায়। তবে এ পবিত্রতা মালের বা অর্থের। আর অর্থের মূল মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশিত পথে অর্থ আয়-ব্যয়েই, ব্যক্তি, সমাজ তথা রাষ্ট্রের সফলতা ও সমৃদ্ধি। সে সফলতার দ্বার বন্ধ রেখে ভিন্ন পথে ঘুরে যে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় তার জন্য কেবল আফসোসই করা যায়।
উল্লেখ্য, আজকের বিশ্ব অর্থনীতি সুদের ভয়াবহতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, “বিশ্বে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমশঃ বেড়েই চলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হলো সুদ।” সুদী তথা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা কোনোদিনই সমাজের সাধারণ মানুষের জন্য কল্যানকর নয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, পবিত্র যাকাতবিহীন, পুঁজিবাদী, সুদী ও দুর্নীতি নির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাংলাদেশেও দরিদ্রদের আরো দরিদ্র এবং বিত্তশালীদের আরো বিত্তবান করছে।
গভীর পরিতাপের বিষয়, আজকে মুসলমানগণ নামাযকে যতটা গুরুত্ব দেয়, যতটা আগ্রহ ভরে তারা মসজিদের পর মসজিদ করে, রোযা তাদের জীবনে যতটা প্রভাব বিস্তার করে সে তুলনায় যাকাতের বিষয়টি তাদের মানসিকতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে।
মূলত, পবিত্র যাকাত অনাদায়ে এতসব ব্যর্থতার মূলে নামধারী মালানাদের নির্লিপ্ততাই অনেকাংশে দায়ী। কারণ পবিত্র যাকাত উনার গুরুত্ব ও তত্ত্ব ও তথ্য সংগ্রহ, এর প্রয়োগিক দিক বিশ্লেষণ ও সচেতনতা সৃষ্টি এবং এ সম্পর্কিত গবেষণা ও সমন্বয় সাধনের মতো মৌলিক কাজে তারা নির্লিপ্ত।
বাংলাদেশে ঠিকভাবে পবিত্র যাকাত আদায় করা হলে এক বছরেই বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীভূত করা যাবে। কাজেই বাংলাদেশ সরকারের উচিত সুদভিত্তিক অর্থনীতি বাদ দিয়ে যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি চালু করা।
ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্র্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। আমীন!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার বিশাল নথিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার একর বনভূমি দখলদার ১ লাখ ৬০ হাজার নাম এসেছে শুধু নাম সর্বস্ব না করে বনভূমি উদ্ধারের বাস্তব নজীর চাই
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে আরো সোনালী সমৃদ্ধি সম্ভব ইনশাআল্লাহ
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ : পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস, পর্নোগ্রাফির রাজত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধের গুরুত্ব।
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ : পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস, পর্নোগ্রাফির রাজত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধের গুরুত্ব।
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ : পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস, পর্নোগ্রাফির রাজত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধের গুরুত্ব।
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ : পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস, পর্নোগ্রাফির রাজত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধের গুরুত্ব।
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ : পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস, পর্নোগ্রাফির রাজত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধের গুরুত্ব।
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ : পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস, পর্নোগ্রাফির রাজত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধের গুরুত্ব।
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কারফিউতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে আরো আগুন। ধারদেনায় চলছে শ্রমজীবী মানুষ। তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করবে কে? সরকারকেই সবকিছু নিশ্চিত করতে হবে ইনশাআল্লাহ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দেশের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণসহ বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত সরকারের উচিত- উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অপুষ্টির কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা; দেশের ৫০ ভাগ শিশুমৃত্যুর কারণ অপুষ্টি; অপুষ্টিতে শিশুদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বাড়ছে স্থুলতা। দেশের জনগণের প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের কি কোনই দায়বদ্ধতা নেই?
২৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সিবতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল খমিস, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। ঐতিহাসিক পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ।
১৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)