পবিত্র রোযা সংক্রান্ত জরুরী সুওয়াল-জাওয়াব
, ২৯ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ১৫ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সুওয়াল:
কেউ কেউ বলে তারাবীহ নামায ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে থাকে, ১২ রাকায়াত। কোন মতটি ছহীহ?
জাওয়াব:
সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া মুতাবিক পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুনাহ হবে। অর্থাৎ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যারা পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ৮ রাকায়াত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে এবং পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে (বিতরসহ) ১১ রাকায়াত নামায আদায় করতেন। ”
মূলত, এটি হচ্ছে পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায উনার বর্ণনা, পবিত্র তারাবীহ নামায উনার বর্ণনা নয়। কারণ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায শুধু পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের জন্যই নির্দিষ্ট। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে পবিত্র তারাবীহ উনার নামায নেই। আর পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায সারা বৎসরই পড়তে হয়।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবিত করা হয়েছে যে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ছহীহ মত।
সুওয়াল:
মহিলাদের তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়া জায়িয কি না?
জাওয়াব:
সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হলো মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত, পবিত্র জুমুয়া, পবিত্র তারাবীহ ও পবিত্র ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ অর্থাৎ যে কোনো স্থানে যাওয়া নাজায়িয, হারাম ও কাট্টা কুফরী।
(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।
সুওয়াল:
“পবিত্র রোযা অবস্থায় ইনজেকশন এমনকি স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও নাকি পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয় না। ” এ বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত?
জাওয়াব:
যারা বলে যে, “পবিত্র রোযা অবস্থায় ইনজেকশন বা স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয় না” তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, দলীলবিহীন এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য একটি দলীলও পেশ করতে পারবে না।
পক্ষান্তরে পবিত্র রোযা অবস্থায় যে কোনো ইনজেকশন নিলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এ ফতওয়াটিই ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য। কারণ এর স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে।
যেমন, “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَمَنْ اِحْتَقَنَ ... اَفْطَرَ لِقَوْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ
অর্থ: “এবং যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় ... তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে। ”
“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খ-ের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَمَنْ اِحْتَقَنَ ... اَفْطَرَ لِقَوْلِهٖ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ
অর্থ: “যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় ... তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না। ”
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَمَنْ اِحْتَقَنَ ... اَفْطَرَ
অর্থ: “এবং যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় ... তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। ” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে। ”
অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইনজেকশন নিলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে।
{বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২১, ২২, ৪৬ ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন। }
সুওয়াল:
পবিত্র রোযা অবস্থায় তরকারী পাক করার সময় লবণ হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয হবে কিনা?
জাওয়াব:
সাধারণভাবে এরূপ করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ সতর্কতার সাথে এরূপ করে, তবে তা মাকরূহের সহিত জায়িয রয়েছে, না করাই উচিত। তবে কারো স্বামী যদি এমন যালিম হয় যে, তরকারীতে লবণ কম বা বেশি হলে মারধর, যুলুম ইত্যাদি করে, তাহলে যালিমের যুলুম হতে বাঁচার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর স্বাদ পরীক্ষা করা জায়েয রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকরূহ্ হবে না।
লক্ষ্যণীয় যে, তরকারীযুক্ত থুথু কোনো ক্রমেই যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)
সুওয়াল:
পবিত্র রোযা রেখে অনেকে বারবার থুথু ফেলে থাকে। এই থুথু না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি?
জাওয়াব:
পবিত্র রোযা রেখে মুখের থুথু বারবার না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)
সুওয়াল:
রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব:
না, পবিত্র রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না, এমনকি ওযুও ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী)
সুওয়াল:
রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব:
না, রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি যদি ওষূধের স্বাদ গলায় অনুভব হয় বা সুরমার রং যদি থুথুর সাথে দেখা দেয়, তাতেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী, মাবছূত, আইনুল হেদায়া)
সুওয়াল:
কোনো ব্যক্তি যদি পবিত্র রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব:
না, পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে অবশ্যই পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত পবিত্র রোযা উনার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। (দুররুল মুখতার, শামী)
সুওয়াল:
রোযা অবস্থায় বমি করলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জাওয়াব:
পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় বমি করার ব্যাপারে কয়েকটি ছূরত কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। বমি করাটা সাধারণতঃ দু’প্রকারের হয়ে থাকে- (১) ইচ্ছাকৃত, (২) অনিচ্ছাকৃত।
কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করে, তাহলে তার পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর ইচ্ছাকৃত অল্প বমি করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি হোক অথবা অল্প বমি হোক, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে অথবা অল্প বমি গিলে ফেলে, তাতে তার পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি ভিতরে চলে চায়, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু মুখ ভরা বমি অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভিতরে চলে গেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।
উপরোল্লিখিত কোনো কারণে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হলে সেটার ক্বাযা আদায় করতে হবে। কিন্তু কাফাফারা আদায় করতে হবে না। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৪)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৬)
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৫)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পুরুষ-মহিলা নামায আদায়ের ছহীহ পদ্ধতি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৪)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১০)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ডন
২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












