পবিত্র শবে বরাত শরীফ উপলক্ষে রোযা রাখার ফযীলত
, ১৪ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ১২ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
عَنْ حَضْرَتْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالى عَنْـهُمَا اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَه اَوْ لِآخَرَ اَصُمْتَ مِنْ سُرَرِ شَعْبَانَ قَالَ لَا قَالَ فَاِذَا اَفْطَرْتَ فَصُمْ يَـوْمَيْنِ
অর্থ: হযরত ইমরান ইবনু হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে অথবা অপর কাউকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি পবিত্র শা’বান মাস উনার মধ্যভাগে (লাইলাতুল বরাতে) রোযা পালন করেছিলেন? তিনি বললেন, না। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যখন আপনি রোযা পালন করেননি, তখন আপনি দুই দিন রোযা পালন করে নিবেন। (মুসলিম শরীফ: কিতাবুছ ছাওম- বাবু ছাওমি শাহরী শাবান- হাদীছ শরীফ নম্বর ২৬২২, সহীহ ইবনে হিব্বান ৩৫৮৮, ফতহুল বারী ৪/২৩০, উমদাতুল ক্বারী ১৭/৯৯, শরহে মুসলিম লি নববী ৪/১৮১)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র শা’বান শরীফ মাসে তিনটি রোযা রাখবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাতী উটনিতে করে পুলছিরাত পার করাবেন।” (ইবনু নুবাতা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি শা’বান শরীফ মাসে তিনটি রোযা রাখবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার গুনাহখতাসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “শা’বান শরীফ মাস উনার ১৫ তারিখ যে রোযা রাখবে, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না।” সুবহানাল্লাহ!
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “শা’বান শরীফ মাস উনার রোযার ইফতারীর সময় যে তিনবার পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, তার পূর্বের গুনাহখতাসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং তার রিযিকে বরকত দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ!
যাদের নসীবে পবিত্র শবে বরাত শরীফ নেই
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র শবে বরাতে সকল উম্মতে হাবীবী উনাদেরকে ক্ষমা করেন। তবে খালিছ তওবা ব্যতিত সাত শ্রেণীর লোকের পবিত্র শবে বরাত নসীব হবে না। তারা হলো- (১) জোতিষ-যাদুকর। (২) মাদক দ্রব্য সেবনকারী। (৩) ব্যভিচারের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি। (৪) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছেদকারী। (৫) চোগলখোর তথা একজনের কথা অপর জনের নিকট মিথ্যা বলে ফিতনা সৃষ্টিকারী। (৬) শরয়ী কারণ ব্যতিত এক মুসলমানের সাথে তিন দিনের অধিক কথা বন্ধ রাখা ব্যক্তি। (৭) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান।”
কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়, কয়েক শ্রেণীর লোকের পবিত্র শবে বরাত নসীব হয়না। যথা- (১) যারা শরীয়ত উনার ফায়সালা অনুযায়ী যাকাত, ফিতরা, উশর আদায় করেনা। (২) যারা শরীয়ত উনার খিলাফ কাজ করে যেমন: গান-বাজনা, বেপর্দা-বেহায়াপনা, ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য, খেলাধুলা, অশ্লীল-অশালীন কাজ করে। (৩) যারা হারাম তন্ত্র-মন্ত্র করে। (৪) যারা সুদ খায়। (৫) যারা ঘুষ খায়। অর্থাৎ যারা সম্মানিত শরীয়ত উনার খেলাফ কাজ করে তা যাই হোক না কেন তাদের শবে বরাত নছীব হবে না। খালেছ তওবা না করা পর্যন্ত।
মূলত, বর্তমান সমাজে উপরোক্ত শ্রেণীর লোকের কোন অভাব নেই। অধিকাংশ লোকই কোনো না কোনোভাবে উপরোক্ত দোষে দোষী। কাজেই শরীয়ত বিরোধী সর্বপ্রকার কার্যকলাপ হতে প্রত্যেককেই দূরে থাকতে হবে। খালিছ তওবা ইস্তিগফার করতে হবে। অন্যথায় পবিত্র শবে বরাত নসীব হবেনা। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী-শবে বরাত শরীফসহ যে কোন উপলক্ষে বিধর্মীদের অনুকরণে আতশবাজি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তা হতে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয।
পবিত্র শবে বরাত শরীফে রহমতে খাছ বর্ষিত হয়
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, পবিত্র শবে বরাতে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি একদল হযরত ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম নিয়ে নাযিল হন এবং চারখানা পতাকা নিয়ে আসেন। প্রথম পতাকা পবিত্র রওযা শরীফে, দ্বিতীয় পতাকা পবিত্র কা’বা শরীফে, তৃতীয় পতাকা বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফে এবং চতুর্থ পতাকা তুর পাহাড়ে নির্মাণ করেন। রাত্রি জাগরণকারী সবার প্রতি খাছ রহমত বর্ষণ করেন। হযরত ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বিশেষ রহমত নিয়ে পরিভ্রমণ করতে থাকেন।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সমস্ত সৃষ্টি এ মহান রাতে আকাশের দিকে হা করে থাকে যেন রহমত উনার হিসসা লাভ করতে পারে। এ রাতে নাযিলকৃত বিশেষ রহমত হরিণের উপর বর্ষিত হলে মৃগনাভি, ঝিনুকের উপর বর্ষিত হলে মুক্তা, ব্যাঙ ও সাপের উপর বর্ষিত হলে মণি, মাছের উপর বর্ষিত হলে আম্বর পয়দা হয় ইত্যাদি। আর মানুষের উপর বর্ষিত হলে সে ব্যক্তি খালিছ ওলীআল্লাহ হয়। তাই, পবিত্র শবে বরাতে যত নেক মকছুদ রয়েছে, মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ সন্তুষ্টি, নিছবত, তাওয়াল্লুক মুবারক চাইতে হবে। সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ অনন্তকালব্যাপী পালন করার তৌফিক চাইতে হবে।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মাসিক আল-বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ১৯৫ হতে ২১৩ তম সংখ্যায় ফতওয়া বিভাগ পাঠ করুন।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র কুরবানী ও কুরবানীদাতার ফযীলত (২)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৮)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জীবানু অস্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদীদের জাতি নিধনের ষড়যন্ত্র (২)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ত্বাহারাতের ইস্তিব্রা ও ইস্তিন্ক্বার আহকাম
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৭)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আত তাক্বউইমুশ শামসী”একটি নতুন সৌর সন (২)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদেরকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৬)
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৫)
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)