পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
, ২০ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৬ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৫ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ৩১ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
(ধারাবাহিক)
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰي عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا ثُمَّ لَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধুসরিত হোক।”
একবার, দু’বার, তিনবার বললেন। অর্থাৎ সে লাঞ্ছিত, পদদলিত, অপমানিত হোক, লাঞ্ছনার-গঞ্জনার চরম পর্যায়ে সে পৌঁছুক। তখন জিজ্ঞাসা করা হলো-
قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কে সেই ব্যক্তি? যার জন্য আপনি এ কথা বলেছেন যে, সে লাঞ্ছিত হোক, সে অপমানিত হোক, সে ধুলায় ধূসরিত হোক, কে সেই ব্যক্তি?
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন-
مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا
যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা দু’জনকে অথবা একজনকে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা বয়সে পেল,
ثُمَّ لَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ
অথচ সে বেহেশ্ত প্রবেশ করতে পারলো না।
অর্থাৎ তার পিতা-মাতা দু’জনকে সে পেল বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা বয়সে অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না। সে লাঞ্ছিত হোক, সে অপমানিত হোক। তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক, অপমানের চরম স্তরে গিয়ে পৌঁছুক।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক হিসেবে এটা বদদোয়া করেছেন। অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা একজন বা দু’জন পেল, কিন্তু সে উনাদের হক্ব আদায় করলো না। অসৎ আচরণ করলো, খাওয়া-পরা দিলো না। অনেক স্থানে দেখা যায়- সন্তান তার বাপ-মাকে খাওয়া দেয় না, পরা দেয় না এবং উনাদের যে হক্ব রয়েছে, সেটা আদায় করে না। নাউযুবিল্লাহ!
সেটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন যে, সে ব্যক্তি অপমানিত হোক, লাঞ্ছিত হোক, যে তাদের হক্ব যেটা প্রাপ্য রয়েছে, সেটা সে আদায় করে না। অথবা যদি পিতা-মাতা কাউকে সে পেলো না, যখন সে উপযুক্ত হলো, তখন তার দায়িত্ব হবে- যদি উনারা ইন্তেকাল করে থাকেন, উনারা ইন্তেকাল করার পর উনাদের জন্য দোয়া করা, তাহলে সেটাই তার হক্ব আদায় হবে। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, হযরত যুননূন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে, একবার উনি মিশরের নীল নদে নৌকা দিয়ে যাচ্ছিলেন, নৌকাটা ছিল বেশ বড়, উনার সাথে অনেক লোক ছিল। হঠাৎ একটা লোকের একটা মূল্যবান জিনিস হারিয়ে গেল।
যখন হারিয়ে গেল তখন প্রত্যেকে পরস্পরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগলো যে, তুমি কি সেটা পেয়েছ? আমার অমুক জিনিসটা হারিয়ে গিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে করতে পর্যায়ক্রয়ে হযরত যুননূন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার পাশে একটা লোক ছিল, দেখতে ছূরতে, আকার-আকৃতিতে তাকে ক্রীতদাস বলে মনে হচ্ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম শরাফতের সাথে যে, আচ্ছা ভাই, তুমি কি সেটা পেয়েছো?
আমি জিজ্ঞাসা করার সাথে সাথে মনে হলো সে লোকটা কিছু মনে করেছে। সাথে সাথে সে সেই পানির মাছগুলিকে হুকুম করলো- হে মাছেরা! তোমরা এক কাজ করো, প্রত্যেকে একটা করে মণি-মুক্তা আমাকে এনে দাও।
এটা বলার সাথে সাথেই দেখা গেল- সমস্ত মাছগুলো একটা করে মণি-মুক্তা, মূল্যবান পাথর নিয়ে নৌকার সামনে ধরেছে। সে আস্তে করে নৌকা থেকে নেমে গেল। পানি দিয়ে হেঁটে যেতে লাগলো এবং বলতে লাগলো-
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনারই ইবাদত করি, আপনারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।
এটা সে বলে হাঁটতে লাগলো। হযরত যুননূন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন উনার যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল। উনি বলেন, আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। আমি তাজ্জব হয়ে লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে ব্যক্তি! তোমার এই অবস্থা কিভাবে? অর্থাৎ তুমি এই অবস্থায় পৌঁছেছো কি করে? কিসের মাধ্যমে?
সে বললো-“মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত এবং আমার পিতা-মাতার খেদমতের মাধ্যমে।” সুবহানাল্লাহ!
সে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত এবং মাতা-পিতার খেদমতের মাধ্যমে পৌঁছেছে। লোকটা এ কথা বলে
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
এই আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে সে অদৃশ্য, গায়েব হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক তিনি পিতা-মাতার দোয়ার বদৌলতে সন্তানদেরকে অনেক নিয়ামত দিয়ে থাকেন। সেটা বেমেছাল। যেটা সাধারণভাবে সন্তানদের জন্য সংগ্রহ করা, বা হাছিল করা খুবই কঠিন ও দূরহ ব্যাপার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












