পিরি রইস: বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ মানচিত্র অঙ্কনকারী উসমানীয় এডমিরাল
, ৩০ জুন, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পিরি রইস ছিলেন উসমানীয় সালতানাতের নৌবাহিনীর এডমিরাল যার অংকিত বিশ্ব মানচিত্রই হচ্ছে তুর্কি এটলাসের সবচেয়ে পুরাতন মানচিত্র যা এক নতুন বিশ্বের সন্ধান দেয়। এই বিশ্ব মানচিত্র এখনো আমেরিকায় পুরাতন মানচিত্র হিসেবে বিদ্যমান।
তুর্কি আর্কাইভের তথ্যানুসারে জানা যায় পিরি রইসের সম্পূর্ণ নাম হাজী আহমেদ মহিউদ্দিন পিরি। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন উসমানী সালতানাতের গেলিবলুতে।
পিরি রইসের চাচা কামাল রইস ছিলেন প্রখ্যাত সমুদ্র বিশারদ। তিনি ১৪৯৫ সালে তুর্কি নৌবাহিনীর এডমিরাল হিসেবে নিয়োগ পান। চাচার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পিরি রইস ১৪৮১ সালে তুর্কি নৌবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি চাচার সাথে ১৪৯৯ সালের জনশিও ও ১৫০০ সালের মডন যুদ্ধে উসমানীয় সালতানাতের পক্ষে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৫১১ সালে মিশরে যাওয়ার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে ভূমধ্যসাগরে জাহাজ ডুবিতে উনার চাচা কামাল রইসের ইন্তেকাল হয়। এই ঘটনার পর তিনি গুলিবলুতে ফিরে এসে নৌ চালনাবিদ্যা অধ্যয়নে আত্মনিয়োগ করেন।
গেলিবলুতে ফিরে এসে নেভিগেশনের উপর মনঃসংযোগ করার পর ৯১৯ হিজরীর মুহররম মাসে প্রথমবারের মত পৃথিবীর মানচিত্র প্রণয়ন করেন। প্রথম পৃথিবীর মানচিত্রে সাহারাকে কর্কটক্রান্তিরেখা ও অক্ষাংশের কেন্দ্রবিন্দু বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে অরিজিনাল মানচিত্রের এক তৃতীয়াংশ টিকে আছে বাকী অংশ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তার অঙ্কিত প্রথম ম্যাপটি ১৯২৯ সালে তোপকাপি প্রাসাদে আবিষ্কার করা হয়। এই ম্যাপটি ১৫১৭ সালে কায়রোতে সুলতান প্রথম সেলিমের নিকট পাঠানো হয়েছিল। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হল, এটিই ছিল প্রথম উসমানী ম্যাপ যেখানে আমেরিকার অবস্থান ও নতুন পৃথিবীর অবস্থানও দেখানো ছিল। ম্যাপে ইউরোপের কিছু অংশ, পশ্চিম আফ্রিকান উপকূল, পূর্ব, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, আটলান্টিক দ্বীপপুঞ্জ ও মহাসাগরের বিবরণ ছিল। ম্যাপে দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দেওয়া ছিল। ম্যাপটি সে সময়ের চলমান পোর্টোলান চার্ট পদ্ধতিতে অঙ্কিত হয়েছিল। ম্যাপে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ রেখা কম্পাস অনুপাতে সাজানো হওয়ায় দিগন্তরেখা খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল।
তিনি সব বিষয় নিয়ে রচনা করেছিলেন কিতাব ই বারিয়া। সম্ভবত এই বিখ্যাত নৌচালনা বিদ্যার বই কিতাব ই বারিয়াতে শুধুমাত্র নৌচালনার বিস্তারিত বিবরণীই ছিলো না এমনকি ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী নগর ও বন্দরের পরিপূর্ণ বিবরণীও দেওয়া ছিল। ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত সকল প্রধান বন্দর, উপসাগর, উপদ্বীপ, প্রণালী ও সুরক্ষিত পোতাশ্রয় সমূহের বিস্তারিত বিবরণ এ বইয়ে বিদ্যমান ছিল। এ ছাড়াও বইটি বিভিন্ন বিষয় যেমন নৌ চালনার দক্ষতা অর্জন ও নৌ চালনার সাথে সম্পর্কিত মহাকাশীয় তথ্যভা-ারে সমৃদ্ধ ছিল। বইটিতে প্রতিটি শহর ও নগরের জনগণের তথ্য ও তাদের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির নানান তথ্যে ভরপুর ছিল।
চাচা কামাল রইসের সাথে ভূমধ্যসাগরে ভ্রমণের সময় পিরি রইস এই চার্টগুলো প্রণয়ন করেছিলেন, পরিমার্জিত বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল ৪৩৪ যার ২৯০ পৃষ্ঠাই সাজানো হয়েছিল বিভিন্ন মানচিত্র দিয়ে। কিতাব ই বারিয়া প্রধানত দুইটি ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম অংশে বিভিন্ন ঝড়ের প্রকৃতি, কম্পাসের ব্যবহার, বন্দর ও উপকূলের বিবরণ সহ পোর্টোলেন চার্ট, নক্ষত্রের সাহায্যে দিক নির্দেশনার উপায়, প্রধান মহাসাগর ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের প্রকৃতি ইত্যাদির পরিপূর্ণ বিবরণ সন্নিবেশিত ছিল।
দুঃখজনক বিষয় হলো, ১৫২৮ সালে পিরি রইসকে মিথ্যা অভিযোগে অন্যায়ভাবে কায়রোতে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। যদিও উনার ইন্তেকালের পর উনার বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিলো বলে জানা যায়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












