সুওয়াল-জাওয়াব:
প্রসঙ্গ: সম্মানজনক শব্দ বোঝাতে “শরীফ” শব্দ ব্যবহারের স্পষ্টতা ও প্রয়োজনীয়তা
, ০৪ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ৩১ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ৩০ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ১৬ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সুওয়াল:
তরীক্বতপন্থীগণ স্বীয় পীর ছাহিব ক্বিবলা উনার অবস্থানস্থলকে দরবার শরীফ বলে থাকেন। এতে কিছু সংখ্যক লোক আপত্তি জানিয়ে বলে যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ ছাড়া আর কোন ক্ষেত্রে “শরীফ” শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
জাওয়াব:
তাদের উক্ত বক্তব্য মোটেই শুদ্ধ নয়। মূলত পীর ছাহিব ক্বিবলা উনারা হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত ও কবুলকৃত বান্দা উনাদের অন্তর্ভুক্ত এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বায়িম-মাক্বাম বা স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি, ওলীআল্লাহ বা উলিল আমর উনাদের অন্তর্ভুক্ত।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি মতে মত এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিনি পথে পথ হয়েছেন তিনিই উলিল আমর বা ওলীআল্লাহ উনাদেরকেই ফার্সী ভাষায় পীর ছাহিব বলা হয়।
ছহীহ বুখারী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله تعالى قال لايزال العبد يتقرب الى بالنوافل حتى احبه فاذا احببته كنت سـمعه الذى يسمع به كنت بصره الذى يبصربه كنت لسانه الذى ينطق به كنت يده التى يبطش بها كنت رجله التى يـمشى بها وان سألنى لاعطيته ولان استعاذ بى لاعيذنه.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, বান্দা নফল (সুন্নত আমল) ইবাদত করতে করতে আমার এত নৈকট্য লাভ করেন যে, আমি উনাকে মুহব্বত করি। আর আমি যখন উনাকে মুহব্বত করি, তখন আমি উনার কান হই, তিনি আমার কুদরতী কান মুবারকে শ্রবণ করেন। আমি উনার চক্ষু হই, তিনি আমার কুদরতী চক্ষু মুবারকে দেখেন। আমি উনার যবান হই, তিনি আমার কুদরতী যবান মুবারকে কথা বলেন। আমি উনার হাত হই, তিনি আমার কুদরতী হাত মুবারকে ধরেন। আমি উনার পা হই, তিনি আমার কুদরতী পা মুবারকে চলেন। যদি তিনি আমার কাছে কিছু চান, আমি উনাকে তা সাথে সাথে দিয়ে দেই। আর যদি তিনি আমার কাছে কোনো সাহায্য তলব করেন, আমি উনাকে তা পুরা করে দেই।” সুবহানাল্লাহ!
উদাহরণস্বরূপ, সাধারণভাবে মাটির কোন মর্যাদা নেই। মাটির উপর মানুষ হেটে থাকে, চলাফেরা করে থাকে, পশু পাখি বিচরণ করে এবং ইস্তিঞ্জাও করে থাকে। কিন্তু এই মাটিই যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক গ্রহণ করে, উক্ত মাটি তখন মুবারক অর্থাৎ বরকতপূর্ণ হয়ে যায় এমনকি আরশে পাক থেকেও সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে ‘ফতওয়ায়ে শামী’ কিতাবের ৩য় খ- জিয়ারত অধ্যায়ে উল্লেখ আছে-
ان التربة التى اتصلت الى اعظم النبى صلى الله عليه وسلم افضل من الارض والسماء حتى العرش العظيم
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম বা শরীর মুবারক উনার সাথে যে মাটি স্পর্শ করেছে তা আসমান-যমীন, আরশ, কুরসী, লওহো, ক্বলম তথা সকল কিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবতযুক্ত বা সম্পর্কযুক্ত হওয়ার কারণে মাটি যেরূপ সম্মানিত ও মুবারক হয়ে যায় তদ্রƒপ কোন মানুষ যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ-অনুকরণ করে উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত স্থাপন করেন তখন তিনি সম্মানিত হয়ে যান এবং উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলি তখন “শরীফ” বা সম্মানিত ও মুবারক বা বরকতপূর্ণ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার কারণে উনার সম্মানিত কালামসমূহ উনাদেরকে যেরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ বলা হয় এবং উনার অবস্থানকৃত পবিত্র স্থান উনাকে পবিত্র রওযা শরীফ, পবিত্র মদীনা শরীফ বলা হয় একইভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বায়িম-মাক্বাম বা স্থলাভিষিক্ত হিসেবে হযরত পীর-মাশায়িখ, আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের ক্ষেত্রে কথা মুবারক বা ক্বওল শরীফ বলা হয় এবং উনাদের অবস্থানস্থল ও তা’লীম দেয়ার স্থানকে দরবার শরীফ, খানকা শরীফ বলা হয়। সুবহানাল্লাহ!
এবং ইহা ব্যবহার করা জায়িয রয়েছে।
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ থেকে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৪)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৬)
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৫)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পুরুষ-মহিলা নামায আদায়ের ছহীহ পদ্ধতি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৪)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১০)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ডন
২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












