সুওয়াল-জাওয়াব:
প্রসঙ্গ গণতন্ত্র বিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মনগড়া মিথ্যা অপবাদ (২)
, ২১ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৭ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০১ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সুওয়াল: অষ্টম শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের ১১৮ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসাধারণ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় আল কুরআনের সর্বজনীন গণতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করেন। ... দেশ পরিচালনায় জনগণের মতামতের স্বীকৃতি দেন। যা গণতন্ত্রের মূল কথা। ” নাউযুবিল্লাহ! এ লেখাটি কতটুকু শরীয়তসম্মত?
সুওয়ালে উল্লেখিত লেখা থেকে যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তা হচ্ছে-
১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? ২. তিনি কি রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন? ৩. তিনি কি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন? ৪. তিনি কি গণতান্ত্রিক নীতি অনুসরণ করেছিলেন? ৫. পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কি গণতান্ত্রিক নীতি সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে? ৬. তিনি কি জনগণের মতামতের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন? নাউযুবিল্লাহ!
জাওয়াব: সুওয়ালে উল্লেখিত লেখাটি সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের খিলাফ হয়েছে। অর্থাৎ কাট্টা কুফরী হয়েছে। প্রথমত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ হয়েছে। কারণ তিনি কখনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি এবং রাজনীতি করেননি আর নেতৃত্বও দেননি।
আর সুওয়ালে উল্লেখিত লেখা থেকে যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তার জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে নিম্নে দেয়া হলো:
প্রশ্ন নং: ২. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন?
উক্ত ২নং প্রশ্নের জাওয়াবে বলতে হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রাজনৈতিক বা রাজনৈতিক দলের কোন নেতা নন যে তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। মূলত রাজ্য বা দেশ পরিচালনার নীতি নির্ধারণকারী ও পরিচালনাকারীকে রাজনৈতকি নেতা বলা হয় আর এজন্য যিনি নেতৃত্ব দানে পারদর্শী বা বিশেষ ভূমিকা রাখেন উনার ক্ষেত্রে বলা হয় যে, তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু উক্ত সম্বোধন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নুবুওওয়াতী ও সম্মানিত রিসালাতী শান মুবারক উনার সম্পূর্ণ খিলাফ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রসূল ব্যতীত কেউ নন। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৪)
তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا
অর্থ: আপনি বলে দিন, (আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) হে মানুষেরা! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের জন্যেই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً
অর্থ: আমি সমস্ত সৃষ্টির জন্যে রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। (মুসলিম শরীফ)
আর নবী ও রসূল হিসেবে উনার আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ
অর্থ: মু’মিন মুসলমানদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার ইহসান হলো যে, তিনি তাদের মাঝে একজন রসূল অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করেন, যিনি তাদেরকে পবিত্র আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শোনান, তাদেরকে (যাহির-বাতিন) পরিশুদ্ধ করেন, তাদেরকে কিতাব (পবিত্র কুরআন শরীফ) ও হিকমত (পবিত্র হাদীছ শরীফ) শিক্ষা দেন। যেহেতু তারা ইতোপূর্বে প্রকাশ্য গোমরাহীতে নিপতিত ছিল। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৪)
পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা প্রতীয়মান হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় উম্মত তথা গোটা মাখলুক্বাতের জন্য বিশেষ করে মানুষ জাতির হিদায়েতের জন্য আগমন করেছেন।
এছাড়া বিশেষ করে রাজনৈতিক শব্দের ব্যবহারটি গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি মানবরচিত দল-মতের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
অথচ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মানবরচিত সমস্ত দল-মত বাতিল ঘোষণা করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও হিদায়েত সহকারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সত্য দ্বীন এবং হিদায়েতসহ পাঠিয়েছেন পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নাযিলকৃত অতীতের সমস্ত দ্বীনের উপর এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত মানবরচিত সমস্ত মতবাদের উপর প্রাধান্য দিয়ে। যার সাক্ষী স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই। (পবিত্র সূরা ফাতাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে নাযিলকৃত দ্বীন। উনার সাথে মানবরচিত দল-মতের কোনই সম্পর্ক নেই। কারণ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নাযিল করা হয়েছে। আর মানবরচিত যে আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ও তর্জ-তরীক্বা, তা মানুষের দ্বারা তৈরী করা হয়েছে বা হয়। যার সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার কোন সম্পর্ক নেই এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূর মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন সম্পর্ক নেই।
অতএব, যে বিষয়টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শান বা মর্যাদা মুবারক উনার খিলাফ বা বিরোধী তা উনার সাথে সম্পৃক্ত ও সংযুক্ত করা কাট্টা কুফরী। অতএব, উল্লেখিত কুফরীমূলক বক্তব্য উক্ত পাঠ্য বই থেকে অতিসত্তর অপসারণ করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য অর্থাৎ ফরয।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৪)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৬)
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৫)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পুরুষ-মহিলা নামায আদায়ের ছহীহ পদ্ধতি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৪)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১০)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ডন
২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












