সুওয়াল-জাওয়াব :
প্রসঙ্গ “নূর” সম্পর্কিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা (১)
, ১৮ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
.jpg)
সুওয়াল:
আমাদের এলাকার এক বক্তার ওয়াজ থেকে শুনেছি সে বলেছে, মুফাসসিরীনে কিরাম পরিষ্কারভাবে লিখে দিয়েছে, মহাপবিত্র কুরআন শরীফ অথবা মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যদি দেখ মহান আল্লাহ পাক উনাকে নূর বলা হয়েছে তখন বুঝে নিও তার অর্থ হলো হিদায়েতের মালিক। আর যদি মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অথবা মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নূর বলা হয় তখন অর্থ হবে হিদায়েতের মাধ্যম। আর যদি বলা হয়, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই নূর তা শিরিক। এ বিষয়ে সঠিক জাওয়াব আরজি করছি।
জাওয়াব:
বক্তার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, মনগড়া, জালিয়াতীপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর, গোমরাহীমূলক ও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সে তার নিজের বক্তব্যকে হযরত মুফাসসিরীনে কিরামের বক্তব্য বলে চালিয়ে দিয়েছে। এই শ্রেণীর কাফের অর্থাৎ উলামায়ে ছুদের কোন বিষয়ই গ্রহনযোগ্য নয়। নাউযুবিল্লাহ!
সে বহু সংখ্যক নয় মাত্র একজন অনুসরণীয় মুফাসসিরের কথা বলুক, যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নূর বলা বা বিশ্বাস করাকে শিরক বলেছেন।
একইভাবে অনুসরণীয় কোন মুফাসসির উনার লিখিত তাফসীরের কিতাবে নূর দ্বারা মহান আল্লাহ উনাকে হিদায়েতের মালিক আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েতের মাধ্যম বলেছেন সেটা সে উল্লেখ করুক। সৃষ্টির নিকৃষ্ট ও দাজ্জালে কাযযাব তথা চরম মিথ্যাবাদী উক্ত বক্তার পক্ষে তা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্তও তা সম্ভব হবে না।
জানা আবশ্যক মহাপবিত্র আয়াত শরীফ ও মহাপবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র নূর মুবারক উনার সৃষ্টি। সেজন্য উনাকে নূরে মুজাসসাম বলা হয় অর্থাৎ তিনি আপাদমস্তক নূর।
যেমন খ্বলিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক, মহাসম্মানিত সূরা মায়িদা শরীফ উনার ১৫ নং মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللهِ نُـوْرٌ
অর্থ: “নিশ্চয় তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ‘ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর’ এসেছেন। ”
অত্র মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর” শব্দ মুবারক দ্বারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝিয়েছেন, যেহেতু তিনি আপাদমস্তক “নূর বা নূর মুবারক উনার সৃষ্টি।
উক্ত মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ক্বাজিউল কুজাত হযরত ইমাম আবূ সউদ মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইমাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে আবী সউদ”-এর ৩য় খ- ১৮ পৃষ্ঠায় লিখেন-
(قَ(قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ اللهِ نُـوْرٌ.) ... اَلْـمُرَادُ بِالنُّـوْرِ هُوَ الرَّسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: বর্ণিত মহাপবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেন- “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম। ”
এছাড়া মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই নিজেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক উনার সৃষ্টি বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন, মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قُـلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاَبِـىْ اَنْتَ وَاُمِّىْ اَخْبِـرْنِـىْ عَنْ اَوَّلِ شَىْءٍ خَلَقَ اللهُ تَـعَالٰى قَـبْلَ الْاَشْيَاءِ قَالَ يَا جَابِرُ اِنَّ اللهَ تَـعَالٰى قَدْ خَلَقَ قَـبْلَ الْاَشْيَاءِ نُـوْرَ نَبِيِّكَ
অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমাকে জানিয়ে দিন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, হে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছুর পূর্বে আপনার যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। ” (মুসনাদে আব্দির রয্যাক, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, মাদারিজুন নুবুওওয়াত ইত্যাদি। )
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুল-মাখলূক্বাত সৃষ্টির পূর্বে সর্বপ্রথম যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক সৃষ্টি করেন সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারকই হচ্ছেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অজূদ পাক। এবং সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অজূদ পাক হতে কুল-মাখলূক্বাত সৃষ্টি হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (আগামী পর্বে সমাপ্য)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নিষিদ্ধ মহিলা জামায়াত নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছু’দের বিভ্রান্তিকর ও জিহালতী বক্তব্যের জবাব (৮)
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইলমে গইব শান মুবারক (৩)
০৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ সংশ্লিষ্ট সুওয়াল-জাওয়াব (২)
০২ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র রোযা সংক্রান্ত জরুরী সুওয়াল-জাওয়াব
০১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ সংশ্লিষ্ট সুওয়াল-জাওয়াব
২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইলমে গইব শান মুবারক (২)
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ “নূর” সম্পর্কিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা (২)
২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব : প্রসঙ্গ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইলমে গইব শান মুবারক (১)
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দ্বীন ইসলামের বিশেষ রাত সমূহের মধ্যে একটি বিশেষ ফযীলতপূর্ণ রাত ‘পবিত্র শবে বরাত’ (২)
০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রসঙ্গ গান-বাজনা, সঙ্গীত নাজায়িজ ও হারাম (৩)
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: নামাযের মাসায়িল
৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রসঙ্গ গান-বাজনা, সঙ্গীত নাজায়িজ ও হারাম (২)
২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)