সুন্নত মুবারক তা’লীম
বাম দিক থেকে শুরু করা হলেও যে আমলগুলো মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত
, ২৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৯ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০৩ পৌষ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহব্বত-মা’রিফত মুবারক, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের প্রধান ও একমাত্র মহান মাধ্যম হচ্ছেন মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন করা। সুবহানাল্লাহ!
আর আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক হচ্ছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- সর্বাবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত বা অনুসরণ-অনুকরণ মুবারক করা অর্থাৎ সম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুযায়ী সমস্ত আমল করা।
উল্লেখ্য, সম্মানিত শরীয়ত সম্মত সকল কাজই নেক কাজের অন্তর্ভুক্ত। আর নেক কাজের মধ্যে; অনেক কাজ আছে যা ডান দিক থেকে শুরু করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। আবার অনেক নেক কাজ আছে যা বাম দিক থেকে শুরু করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
ডান দিক থেকে শুরু করাঃ
এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِي تَنَعُّلِهٖ وَتَرَجُّلِهٖ وَطُهُوْرِهٖ وَفِيْ شَأْنِهٖ كُلِّهٖ.
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত না’লাইন শরীফ পরিধান করা, নূরুল ফাতহ্ মুবারক (মহাসম্মানিত চুল মুবারক) আচঁড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জন করা অর্থাৎ পবিত্রতা অর্জন শিক্ষা দেয়া প্রত্যেক কাজই ডান দিক থেকে আরম্ভ করতে পছন্দ মুবারক করতেন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
যে সকল নেক কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
ত্বহারাত অর্জনের ক্ষেত্রে, চুল আচঁড়ানোর ক্ষেত্রে, জুতা পরিধানের ক্ষেত্রে, জামা-কাপড় পরিধানের ক্ষেত্রে, পাত্র থেকে খাদ্য আহার করার ক্ষেত্রে, খাদ্য চিবানোর ক্ষেত্রে, মেসওয়াক করার ক্ষেত্রে, চোখে সুরমা দেয়ার ক্ষেত্রে, ও ওযূ-গোসল-তায়াম্মুম করার ক্ষেত্রে এবং ইত্যাদি কাজে।
বাম দিক থেকে যেসকল নেক কাজ শুরু করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারকঃ
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ يَزِيْدَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قِيْلَ لَهٗ لَقَدْ عَلَّمَكُمْ نَبِيُّكُمْ كُلَّ شَىْءٍ حَتَّى الْخِرَاءَةَ. قَالَ أَجَلْ لَقَدْ نَـهَانَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ بِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ وَأَنْ لَا نَسْتَنْجِيَ بِالْيَمِيْنِ وَأَنْ لَا يَسْتَنْجِيَ أَحَدُنَا بِأَقَلَّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ أَوْ يَسْتَنْجِيَ بِرَجِيْعٍ أَوْ عَظْمٍ.
অর্থ: হযরত ‘আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সালমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, উনাকে অর্থাৎ হযরত সালমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলা হলো, আপনাদের মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাদেরকে সবকিছুই শিক্ষা দিয়েছেন, এমন কি ইস্তিঞ্জা করার নিয়মও। হযরত সালমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হ্যাঁ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন: ক্বিবলামুখী হয়ে ইস্তিঞ্জা করতে, ডান হাতে ইস্তিঞ্জা বা শৌচ করতে, ইস্তিঞ্জায় তিনটি ঢিলার কম ব্যবহার করতে এবং গোবর অথবা হাড় দ্বারা শৌচকার্য করতে। (আবূ দাউদ শরীফ: ৭)
একইভাবে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে- ‘আমি তোমাদের জন্য পিতার মতো। আমি তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকি। তোমরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে ক্বিবলাকে সামনে বা পেছনে দিয়ে বসবে না। ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য সম্পাদন করবে না।’ তিনি তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ঢিলা করা থেকে নিষেধ করতেন। (আবূ দাউদ শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য সম্পাদন করতে নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ এ কাজের জন্য বাম হাত ব্যবহার করাই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক।
উল্লেখ্য, অনেকে মনে করে থাকে যে, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি শুধু এসব-ই নেক কাজ বা ইবাদত। ঘর-সংসার, হাট-বাজার, ওযূ-ইস্তেঞ্জা ইত্যাদি এসব কাজ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত না। নাউযুবিল্লাহ! মূলত, একজন মুসলমানের জন্য সম্মানিত শরীয়ত সম্মত সকল কাজই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত শরীয়তে এমন কিছু কাজ বা আমল রয়েছে যা বাম দিক থেকে শুরু করাই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্তঃ যেমন-
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় শুরুতেই বাম পা দেয়া।
ওযূতে উভয় পা ও নাক পরিস্কারে বাম হাত ব্যবহার করা উত্তম।
কাপড়, জুতা-মোজা ইত্যাদি খুলতে বাম দিক থেকে শুরু করা।
বাইতুল খলায় (বাথরুমে) প্রবেশের সময় শুরুতেই বাম পা দেয়া।
ইস্তিঞ্জায় বসার সময় নিজের বাম পায়ের ওপর ভর দিয়ে বসা।
ইস্তিঞ্জা থেকে বাম হাতে পবিত্রতা অর্জন করা ও বাম হাতে ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা।
থুথু বাম দিকে ফেলা।
এভাবে আরো বিভিন্ন নেক কাজ রয়েছে যা বাম দিক থেকে শুরু করাই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সর্বপ্রকার কাজ মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুতাবিক করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওযূর একটি মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক অনিচ্ছাকৃত তরক করায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সতর্কতা মুবারক
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ঘুমানোর মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নতী তারতীব মুবারক - ২
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ঘুমানোর মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নতী তারতীব মুবারক -১
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হাত ও পায়ের নখ কাটার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেসব দিনে গোসল করা ও গোসলে কি কি ব্যবহার করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
চিকিৎসা গ্রহণ করা খাছ সুন্নত মুবারক (২)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
চিকিৎসা গ্রহণ করা খাছ সুন্নত মুবারক (১)
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৫)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৪)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৩)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (২)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












