বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৭)
, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পূর্ব প্রকাশিতের পর
মোহরে সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম অর্থাৎ মোহরে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনার হুকুম
মোহরে সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম। অর্থাৎ মোহরে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ধার্য করা বরকতময় ও উত্তম।
উল্লেখ্য, একজন ব্যতীত সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম এবং সকল হযরত বানাতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মোহর মুবারক ৫০০ দিরহাম অর্থাৎ ১৩১.২৫ ভরি খাঁটি রূপা অথবা তার বাজারমূল্য। (মুস্তাদরাকে হাকিম, পবিত্র হাদীছ শরীফ: ২৭৪২)
মোহর পরিশোধ করার হুকুম:
বর্তমান সমাজে সাধ্যের বাইরে অনেক বড় অংকের মোহর ধার্য এবং তা আদায়ে অনীহার মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। মেয়ে পক্ষ বিবাহের সম্পর্ক রক্ষার জন্য মোহরের অঙ্ক বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং ছেলে পক্ষ চিন্তা করে এটি আদায় করতে হবে না। এমন কাজ সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সঠিক নয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা মহিলাদের মোহরের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কোরো না। কেননা তা যদি দুনিয়ায় সম্মানের হতো, তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই সম্মানের বেশি হক্বদার ছিলেন। অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের মহাসম্মানিত নিসবাতুল আযীম শরীফে এবং উনার মহাসম্মানিতা হযরত বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত নিসবাতুল আযীম শরীফে ৫০০ দিরহাম এর বেশি নির্ধারণ করেননি। ’ (তিরমিযী শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ : ১১১৪)
অতএব সামর্থ্য অনুযায়ী মোহর ধার্য করা আবশ্যক এবং ধার্য করা মোহর পরিশোধ করতেই হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘যে পুরুষ বিবাহের মধ্যে মোহর আদায়ের নিয়তবিহীন মোহর ধার্য করল, চাই তা বেশি হোক বা কম, সে হাশরের দিন মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে ব্যভিচারী হিসেবে উপস্থিত হবে। ’ (আল মু’জামুল আওসাত, পবিত্র হাদীছ শরীফ: ১৮৫১)
বিবাহের খুতবা পাঠ ও বিবাহের মজলিসে খেজুর বিতরণ:-
বিবাহের খুতবা পাঠ করা মুস্তাহাব। বিবাহ পড়ানোর পর খেজুর বিতরণ/ ছিটানো খাছ সুন্নত মুবারক। (মুস্তাদরাকে হাকিম : ৪/২২)
عَنْ حضرت ام المؤمنين الثالثة الصديقة عليها السلام قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم النِّكَاحُ مِنْ سُنَّتِي فَمَنْ لَمْ يَعْمَلْ بِسُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي وَتَزَوَّجُوا فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمْ الْأُمَمَ
অর্থ:- সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘বিবাহ করা আমার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক , যে আমার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা বিবাহ করো। কেননা আমি উম্মতের অধিক্য নিয়ে হাশরের মাঠে ফখর করব। ’ (ইবনে মাজাহ,পবিত্র হাদীছ শরীফ : ১৮৪৬)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي أَيُّوبَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَرْبَعٌ مِنْ سُنَنِ الْمُرْسَلِينَ الْحَيَاءُ وَالتَّعَطُّرُ وَالسِّوَاكُ وَالنِّكَاحُ "
অর্থ:-হযরত আবূ আইয়ুব আনছারি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, চারটি জিনিস মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। লজ্জা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, মিসওয়াক করা ও বিবাহ করা। (সুনানে তিরমিযী শরীফ,পবিত্র হাদীছ শরীফ: ১০৮০)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘ওই পুরুষ মিসকিন! মিসকিন!! মিসকিন!!! যার কোনো আহলিয়া নেই, যদিও সে ধনবান হয়। আর ওই মহিলা মিসকিন! মিসকিন!! মিসকিন!!! যার কোনো আহাল নেই, যদিও সে সম্পদের মালিক হয়। ’ (আল মুজামুল আওসাত,পবিত্র হাদীছ শরীফ: ৬৫৮৯)
বিবাহের উপকারিতা সমূহ:-
বিবাহের বহুমুখী উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
১. গুনাহ ও পাপাচার থেকে নিজেকে সংবরণ করার মাধ্যমে পুরুষ-মহিলা উভয়ের ঈমান, আমল, ব্যক্তিত্ব ও সতীত্ব রক্ষা করতে পারে।
২. নারী জাতির তত্ত্বাবধান ও রক্ষণাবেক্ষণ হয়।
৩. নারীর সম্মানজনক জীবন-জীবিকা সহজ হয়।
৪. পুরুষ একজন আমানতদার নির্ভরযোগ্য সঙ্গিনী লাভ করে।
৫. হালাল পন্থায় বংশের বিস্তার হয়।
৬. সৃষ্টিগত ও স্বভাবজাত চাহিদা পূরণের হালাল ও নিরাপদ ব্যবস্থা বিবাহ।
৭. পুরুষ-মহিলা উভয়ের মানসিক স্বস্তি, তৃপ্তি ও প্রফুল¬ অর্জন হয়, যা বিবাহ ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে সম্ভব নয়।
৮. বিবাহের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক বাস্তবায়ন হয়।
৯. মানবশিশু তাদের প্রকৃত পরিচয় লাভ করতঃ সঠিক লালন-পালন ও পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে।
১০. বিবাহের দ্বারা রিযিকে বরকত ও জীবনে প্রাচুর্য আসে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা বিবাহ করো, আহলিয়ারা স্বীয় ভাগ্যে তোমাদের কাছে সম্পদ টেনে আনবে। ’ (মুসনাদে বাজ্জার, পবিত্র হাদীছ শরীফ : ১৪০২)
১১. অবিবাহিত থাকলে মানসিক বা শারীরিক রোগ ও জটিলতা তৈরির আশঙ্কা থাকে।
১২. বিবাহ মানুষকে সংসারী করে। ফলে পুরুষরা দায়িত্বসচেতন ও কর্মমুখী হয়। কোন কিছু অপচয়ের মানসিকতা দূর হয়। তদ্রƒপ মহিলারাও দায়িত্বসচেতন হয়। (অসমাপ্ত)
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৪)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (৩)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (২)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রয়োজনে ছুরি এবং চাকু দিয়ে খাবার কেটে খাওয়াও মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












