মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্যই পবিত্র কুরবানী করতে হবে।
, ০৩ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০১ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ৩১ মে, ২০২৫ খ্রি:, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় খ্বালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য মুবারক লাভের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকে নির্দিষ্ট তারিখে অর্থাৎ পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোন দিনে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট প্রাণী অর্থাৎ দুম্বা, মেষ, ভেড়া, খাসী, ছাগল, উট, গরু, মহিষ প্রভৃতি গৃহপালিত হালাল চতুষ্পদ প্রাণীসমূহকে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করে যবেহ করাকে কুরবানী বলে।
পবিত্র কুরবানী হচ্ছে আবুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত মুবারক।
এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ زَيِدِ بْنِ اَرْقَمَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! مَا هذِهِ الْاَضَاحِىْ؟ قَالَ سُنَّةُ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ الـسَّلاَمُ.
অর্থ : “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানী কি? তিনি জাওয়াবে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনাদের পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত মুবারক। ” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
পবিত্র কুরবানী উনার হুকুম শুধু উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্যেই দেয়া হয়েছে তা নয় বরং পূর্ববর্তী প্রত্যেক উম্মতের প্রতিও পবিত্র কুরবানী উনার হুকুম প্রবর্তিত ছিল। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لِكُلّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لّيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلـٰى مَا رَزَقَهُم مّن بَـهِيْمَةِ الاَنْعَامِ ۗ
অর্থ : “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য পবিত্র কুরবানী উনার হুকুম দিয়েছি, যাতে তারা গৃহপালিত পশুর উপরে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও নির্দেশ মুবারক মুতাবিক উনার নামে পশু কুরবানী করে। ” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আল্লামা নাসাফী ও যামাখশারী বলেন, হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে শুরু করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার নৈকট্য মুবারক লাভের জন্য পবিত্র কুরবানী উনার হুকুম দিয়েছেন। (তাফসীরে নাসাফী ৩/৭৯, তাফসীরে কাশশাফ ২/৩৩)
মহান আল্লাহ পাক উনার মত মুবারক অনুযায়ী মত হওয়া এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথ মুবারক অনুযায়ী পথ হওয়াই পবিত্র কুরবানী উনার একমাত্র উদ্দেশ্য।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَـحْيَايَ وَمَـمَاتِي لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ◌
অর্থ : “(আমার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার হায়াত মুবারক ও আমার বিছাল শরীফ মুবারক সবই খ্বালিক, মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে যিনি সমস্ত আলমের রব মহান তা’য়ালা। ” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬২)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُـحُوْمُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلٰـكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ ۚ
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কুরবানীকৃত পশুর গোশত কিংবা রক্ত কিছুই পৌঁছেনা। বরং শুধুমাত্র তোমাদের তাক্বওয়া উনার নিকট পৌঁছে থাকে। ” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা পশুর কোন কিছুই গ্রহণ করেন না। উনারা দেখেন, কে উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্য উনাদের নির্দেশ মুতাবিক পবিত্র কুরবানী করলো।
আরো একটি বিষয় স্মরণীয় যে, কুরবানী নিছক গোশত খাওয়ার জন্য নয় বরং প্রাণ প্রতিম সন্তানের বিনিময়। যদি হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হাক্বীক্বীভাবে যবেহ হতেন তাহলে আমাদেরকেও আমাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানদেরকে কুরবানী দিতে হতো। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রিযামন্দি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার মত মুবারক অনুযায়ী মত হওয়া এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথ মুবারক অনুযায়ী পথ হওয়ার লক্ষ্যেই পবিত্র কুরবানী করা আবশ্যক। কোন প্রকার বাহবা পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয় কিংবা কোন বড়ত্ব/কৃতিত্ব জাহির করার উদ্দেশ্যে নয় বরং নিজের আমিত্ব/বড়ত্ব বিসর্জন দেয়ার নামই কুরবানী।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (২)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রয়োজনে ছুরি এবং চাকু দিয়ে খাবার কেটে খাওয়াও মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘পনির’
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০১)
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












