মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হওয়ার মধ্যেই কামিয়াবী নিহিত
, ১৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৬ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
মুসলমানরা যখন মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত হয়ে যাবে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হয়ে যাবে, তখনই তাদের কামিয়াব। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কতটুকু মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত ছিলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ ছিলেন। সেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াকেয়া দ্বারা বোঝা যাবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন- “যাঁরা ঈমানদার, উনারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে খুব বেশী মুহব্বত করেন। ”
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে একটা ঘটনা উল্লেখ করা হয়- হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম যখন খলীফাতুল মুসলিমীন, তখন মিশর বিজয় করেছেন হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। তিনি তখন সেখানকার গভর্ণর। সেখানকার তিনি আমীর অর্থাৎ আমীরে শোবা। মিশরে নীল নদের পানি দিয়ে মানুষ তাদের পানির কাজ চালাতো। হঠাৎ দেখা গেল, নীল নদ শুকিয়ে গেছে। যখন নীল নদ শুকিয়ে গেল, তখন এলাকার লোকেরা এসে বললো, হে আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনারা নতুন এসেছেন, আপনারা মুসলমান। আপনাদের আইন-কানুন ব্যতিক্রম। আমাদের সাথে মিলে না। কিন্তু আমাদের একটা নিয়ম ছিল, এখানে প্রত্যেক বৎসর একটা নির্ধারিত সময়ে আমরা একটা খুবছুরত কুমারী মেয়েকে বলি দিয়ে থাকি, যার কারণে নীল নদের পানি প্রবাহিত হয়ে থাকে সারা বৎসর। সেহেতু আপনারা যদি বলি না দেন, এটা বন্ধ হয়ে যাবে। হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন যে, হে মিশরবাসী, এটাতো পবিত্র ইসলাম উনার খেলাফ, বদ রসম, কুফরী-শেরেকী, এটা নাজায়েয হারাম। এটা করা যাবে না। তিনি করলেন না। দেখা গেল সত্যিই পানি শুকিয়ে গেল। এত শুকালো যে, আশে পাশে জমিনগুলি চৌচির হয়ে গেল, ফেটে গেল। যার কারণে এলাকার লোকেরা পানির অভাবে বাড়ী-ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তিনি তখন চিন্তা করলেন, কি করা যায়? এলাকার লোকেরা বললো যে, হুযূর! আপনি একটা ফায়সালা করেন। তখন তিনি একটা চিঠি লিখলেন খলীফার কাছে। হে খলীফাতুল মুসলিমীন! আমীরুল মু’মিনীন! মিশরের অবস্থা খুব করুণ। নীল নদ শুকিয়ে গেছে, পানি নেই। তাদের একটা বদ রসম রয়েছে, আমি সেটা করিনি। এখন আমি কি করবো?
যখন চিঠি পেলেন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম, তিনি চিঠি লিখলেন যে, হে আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আপনি উত্তম কাজ করেছেন, আপনি বদ রসম, বদ প্রথা কুফরী-শেরেকীর পথ আপনি অবলম্বন করেননি। এটা আমাদের শরীয়ত উনার খেলাফ। এরপর তিনি লিখলেন যে, আপনি সব সময় হক্বের উপরে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের উপর কায়েম থাকবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার উপর রহমত-বরকত নাযিল করবেন। আমি একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি। আমি নীল নদের প্রতি একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি। তিনি লিখলেন, “খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনার তরফ থেকে নীল নদের প্রতি ফরমান, হে নীল নদ! যদি তুমি তোমার শক্তির দ্বারা প্রবাহিত হয়ে থাক, তোমার পানির আমাদের কোন জরুরত নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে ছাড়াও আমাদেরকে পানি দান করতে পারেন। আর যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে প্রবাহিত করান, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন প্রবাহিত করে দেন। আমাদের পানির জরুরত রয়েছে। ”
চিঠি লিখে তিনি হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যে চিঠিটা, তার মধ্যে ভরে দিলেন এবং লিখলেন, হে আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এই চিঠিটা পাওয়ার পরে আপনি কিছু এলাকাবাসীকে নিয়ে নীল নদে গিয়ে আমার চিঠিটা ফেলে দিয়েন, তারপর কি হয় সেটা লক্ষ্য করবেন। তিনি যখন চিঠি পেলেন, তখন সন্ধ্যা। তিনি কিছু এলাকাবাসীকে নিয়ে চিঠিটা নীল নদে নিক্ষেপ করলেন। দুইটা বর্ণনা আছে, তার মধ্যে একটা বর্ণনায় বলা হয়েছে, তিনি যখন চিঠিটা নিয়ে নীল নদে নিক্ষেপ করলেন, করে চলে আসলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত সকাল বেলা দেখেন সেই নীল নদের মধ্যে ষোলহাত পানি হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ!
আর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত তিনি যখন চিঠিটা নিয়ে নিক্ষেপ করলেন, চিঠিটা ছিল খুবই পাতলা। বাতাসে হেলতে-দুলতে দুলতে একপর্যায়ে যখন মাটিতে স্পর্শ করলো, স্পর্শ করার সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত! সাথে সাথে বিকট একটা শব্দ করে এক লাফে পানি ষোল হাত হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! এখন ফিকিরের বিষয়, মুসলমান তো ঐ ব্যক্তি, উনারাইতো মুসলমান ছিলেন। উনারাই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের উপর কায়েম ছিলেন। সেই জন্য উনারা সর্বক্ষেত্রে কামিয়াবী হাছিল করেছেন। উনারা যেদিকে গেছেন, সেদিকেই বিপদ-আপদ বাধা-বিপত্তি দূর হয়ে গেছে। আমরা তো পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের উপর নেই, আমাদের কামিয়াব আসবে কোথা থেকে। কাজেই আমাদের প্রত্যেকেরই মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত প্রতিটি অবস্থায় পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের উপর কায়েম থাকতে হবে।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৯)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
এক নযরে সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আলামীন, আফযালুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘আহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত পরিচিতি মুবারক
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরানী হুলিয়া মুবারক (৪র্থ পর্ব)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নসবনামাহ্ মুবারক
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৮)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার ইন্তিজামকারী বিনা হিসাবে সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করবেন
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানিকারীর একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে ‘মৃত্যুদন্ড’ (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুল ফাতাহ” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩১)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৭)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানিকারীর একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে ‘মৃত্যুদন্ড’ (৩)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












