মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই উনার পবিত্র কালাম শরীফ উনার হিফাযতকারী
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সমস্ত আয়াত শরীফ, শব্দ মুবারক, অক্ষর মুবারক এমনকি নুকতা মুবারক বা বিন্দুসমূহের মধ্যেও কোনরূপ হেরফের, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন নেই
, ১০ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৮ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি এবং আমিই উনার হিফাযতকারী।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করে যেভাবে “লওহে মাহ্ফূযে” রেখে দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই যমীনে নাযিল করেছেন এবং সেভাবেই অনাদি-অনন্তকাল পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, খলীফা মামুন তার শাহী দরবারে দিন ধার্য করে ইলমী মজলিসের ব্যবস্থা করতেন। সেই মজলিসে উপস্থিত থাকতেন তার সভাসদ, আলিম-উলামা, অন্যান্য জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গ। একদিন এক নতুন ব্যক্তি উক্ত মজলিসে উপস্থিত হলো। যে ছিল খৃষ্টান সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। সে ছিল একজন ভাষাবিদ, যে ভাষাই আলোচনা করা হতো সে ভাষায়ই সে বুঝতো ও আলোচনা করতো। এছাড়া সে তাওরাত শরীফ, যাবূর শরীফ, ইনজীল শরীফ ও পবিত্র কুরআন শরীফসহ সব আসমানী কিতাব সম্পর্কে খুব ভাল জ্ঞান রাখতো এবং সে ছিল একজন হস্ত লিখা বিশারদ। অর্থাৎ তার হাতের লিখা অত্যন্ত ভাল ছিল। এসব জেনে খলীফা মামুনের পক্ষ থেকে উক্ত ব্যক্তির নিকট প্রস্তাব পেশ করা হলো, সে যদি মুসলমান হয়ে তার দরবারে থাকে তবে তাকে বেশ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। প্রস্তাব শুনে উক্ত ব্যক্তি হ্যাঁ কিংবা না কোন জবাবই দিলনা। মজলিস শেষে তার অবস্থানে সে চলে গেল। দীর্ঘ এক বছর অনুপস্থিতির পর আবার সে উক্ত মজলিসে এসে উপস্থিত হলো। কিন্তু এবার সে খৃষ্টান নয় মুসলমান হয়ে এসেছে।
তাকে সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, “ইতোপূর্বে তোমাকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তুমি মুসলমান হয়ে খলীফার দরবারে থাকলে তোমাকে রাজকীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। কিন্তু তুমি সে প্রস্তাব ও সুযোগ গ্রহণ না করে চলে গেলে। অতঃপর কোন কারণে তুমি তোমার বাপ-দাদার খ্রিস্ট ধর্ম ছেড়ে অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ না করে একমাত্র সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হলে?” তার কি কারণ?
সে জবাব দিলো, খলীফা মামুনের পক্ষ হতে তাকে মুসলমান হয়ে তার দরবারে থাকার প্রস্তাব দেয়ার পর সে নিজ আবাসস্থলে চলে যায়। গিয়ে সে প্রতিটি আসমানী কিতাব- তাওরাত শরীফ, যাবূর শরীফ, ইনজীল শরীফ ও পবিত্র কুরআন শরীফ নিজ হাতে তিন কপি করে সুন্দর করে লিপিবদ্ধ করে এবং প্রতিটি কপির মধ্যে কিছু কাট-ছাট, সংযোজন-বিয়োজন, পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে; যার ফলে একটা কপির সাথে অন্য কপির হুবহু মিল নেই, তবে প্রতিটি কপির লেখা খুবই সুন্দর ও মনোরম।
সে তার লিখিত কপিগুলো নিয়ে স্ব স্ব সম্প্রদায়ের নিকট গেলো বিক্রির জন্য। অর্থাৎ প্রথমে তাওরাতের কপিগুলো নিয়ে ইহুদীদের নিকট উপস্থিত হলো। তারা কপিগুলোর সুন্দর মনোরম লিখা দেখে বেশি দামে ক্রয় করে নিল কিন্তু তার মধ্যে যে হেরফের করা হয়েছে, পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা হয়েছে তারা সেটা যাচাই-বাছাই করলোনা। একইভাবে খৃষ্টানরাও ইনজীল কিতাবের কপিগুলো সুন্দর মনোরম লিখা দেখে কোনরূপ যাচাই-বাছাই না করেই বেশি মূল্যে ক্রয় করে নিলো। যাবূর কিতাবের কপির ক্ষেত্রেও ঠিক একই অবস্থা। সেগুলোও বেশি মূল্যে বিক্রি হয়ে গেল।
কিন্তু যখন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কপিগুলো নিয়ে সে মুসলমানদের নিকট উপস্থিত হলো, তারা উনার মধ্যে হেরফের, পরিবর্তন-পরিবর্ধন, কাট-ছাট দেখে সেগুলো ক্রয় করা তো দূরের কথা তারা তাকে সাবধান বাণী শুনিয়ে দিল। তখন সে উপলব্ধি করলো যে, সত্যিই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন, কাট-ছাট করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অতঃপর সে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং তা যে ধর্মে তথা সম্মানিত দ্বীনে নাযিল হয়েছে অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সত্যতা বুঝতে পেরে মুসলমান হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, বর্তমানে আমাদের মধ্যে বা আমাদের নিকট যে পবিত্র কুরআন শরীফ রয়েছে, তা মাছহাফে উছমানী শরীফ উনারই অবিকল কপি বা নকল অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে হুবহু তাই। একটিমাত্র অক্ষরেরও বেশ-কম নেই। এমনকি তৎকালে মাছহাফে উছমানী শরীফ উনার মধ্যে যে কয়টি শব্দ মুবারক বর্তমান লিখন পদ্ধতির ব্যতিক্রমে লেখা হয়েছে, অদ্যাবধি তারই অনুকরণ করা হয়েছে। যেমন- “রহমত” শব্দ বর্তমান লিখন-পদ্ধতি অনুসারে গোল ‘তা’ দ্বারা رَحْمَة লেখা হয়। কিন্তু মাছহাফে উছমানী শরীফ উনার মধ্যে উহা চার স্থানে লম্বা “তা” দ্বারা رَحْمَت লেখা হয়েছে। এখনও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেও এরূপই রয়েছে। এরূপ আরো শব্দ মুবারকের উদাহরণ রয়েছে। পরে উমাইয়া খলীফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে হিজরী ৮৬ সনে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হরকত অর্থাৎ যের, যবর, পেশ ইত্যাদি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়, যাতে অনারবগণ পবিত্র কুরআন শরীফ ভুল না পড়েন। এতে কোন শব্দের আকার বা অর্থের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটেনি। অতঃপর কেউ কেউ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সমস্ত আয়াত শরীফ, শব্দ শরীফ, অক্ষর শরীফ এমনকি নুকতা শরীফ বা বিন্দুসমূহও পর্যন্ত গণনা করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! (আল ইতকান)
অতএব, পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ যা আছে হুবহু তাই নাযিল হয়েছে। এর উপরই ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর এর উপরই বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেকের জন্য ফরয।
-আহমদ সা’দ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পুরুষের জন্য কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












