মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া এবং অসংখ্য লোকের ঈমান গ্রহণ
, ১১ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১২ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
(হঠাৎ) উদ্দেশ্যহীন একটি গুলি খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত পরিবারের একজন খ্রীষ্টান মেয়ের মাথায় পড়ে। আর ঐ পরিবারটা ছিলো সেই শহরের মধ্যে সুপরিচিত। তখন এলাকাবাসী মেয়েটিকে দ্রুত ‘ডাক্তার গাস্সান হাম্মূদ হাসপাতালে’ নিয়ে যায়। কিন্তু ডাক্তাররা মেয়েটির অবস্থার ভয়াবহতা দেখে চিকিৎসার ব্যাপারে অপারগ হয়ে তার পরিবারকে বললো- ‘তোমরা অবিলম্বে তাকে বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করো।’ তাৎক্ষণিকভাবে মেয়েটিকে বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলো।
মেয়েটির চিকিৎসার জন্য আমেরিকান চিকিৎসা সংক্রান্ত স্টাফের সাথে লেবাননের প্রসিদ্ধ চিকিৎসকরা একত্রিত হলো। কিন্তু মাথার জখম ছিলো তাদের ধারণার থেকেও অধিকতর গুরুতর। (মাথায় গুলি লাগার কারণে, মেয়েটির মাথার মগজ এলোমেলো হয়ে গেছে। ফলে) রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ার পর থেকেই রক্তক্ষরণ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। (কোনো ক্রমেই তা কমানো সম্ভব হচ্ছিলো না।) শেষ পর্যন্ত সমস্ত চিকৎসকরা অপারগ হয়ে যায়। (তারা বলে যে, মেয়েটি নিশ্চিত মারা যাবে। কারণ তার মাথার জখম কখনও সাড়ানো সম্ভব নয় এবং তার রক্তক্ষরণও বন্ধ করা সম্ভব নয়।)
পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনরাও হতাশাগ্রস্ত হয়ে যায়। মেয়েটির মা ছিলো খ্রিষ্টান, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করে সে কেঁদে কেঁদে বলছিলো- ‘আপনি কোথায়? আপনাকে সম্মানিত মুসলমানদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে অভিহিত করা হয়- আপনি কোথায়? (দয়া করে) আসুন এবং প্রত্যক্ষ করুন, দেখুন- আপনার সম্মানিত উম্মত উনারা আমার মেয়ের সাথে কি আচরণ করেছেন।’ আর তার অবস্থা এরূপ ছিলো যে, তার দু’চোখ বেয়ে অবিরত ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো এবং সে বলছিলো- ‘আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক উনার সম্মানার্থে সম্মানিত মাহফিল মুবারক করার জন্য অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে সম্মানিত মাহফিল মুবারক করার জন্য সম্মানিত মুসলমানরা আমার মেয়েকে হত্যা করেছেন।’ (না‘ঊযুবিল্লাহ!)
একই মুহূর্তে চিকিৎসকরা কক্ষের ভিতরে মেয়েটির চিকিৎসা করছিলো। তাদের সকলের পরামর্শক্রমে একজন চিকিৎসক বাইরে গিয়ে মেয়েটির মাকে বললো- ‘তুমি প্রবেশ করে তোমার মেয়েকে শেষ দেখা দেখে বিদায় জানাও। কোনো উপায় নেই; তোমার মেয়ে মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে।’ (এটা শুনে) মায়ের শরীরে কাঁপুনি শুরু হলো। তার পা শরীরের ভার বহন করে (মেয়ের কাছে) ফিরে যেতে সক্ষম হচ্ছিলো না। সে অত্যন্ত ধীর গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলো। একজন মায়ের জন্য মেয়ের শেষ মুহূর্তের অবস্থা অত্যন্ত কঠিন। (মেয়েটির) মা কক্ষের দরজা খুলে বিস্মিত হলো (এ জন্য যে,) মেয়েটি কক্ষে তার খাটের উপর বসে চিৎকার করে বলছে- ‘মা! দরজা বন্ধ করুন। মা! দ্রুত আসুন। তিনি চলে যাচ্ছেন, উনাকে যেতে দিয়েন না। মা! তাড়াতাড়ি করুন। উনাকে ধরে রাখুন। তিনি চলে যাচ্ছেন, উনাকে যেতে দিয়েন না।’
পরিস্থিতি দেখে হতবাক হয়ে মা কথা বলা বন্ধ করে দিলো। (আর মনে মনে বলতে লাগলো-) এটা কি? কাকে উদ্দেশ্য করা হচ্ছে? মৃত্যুশয্যা থেকে সে কিভাবে সুস্থ হলো? আর সে কথাও বলছে? কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, সামান্য মুহূর্তের মধ্যে মায়ের মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো। মা বললো- ‘আমার মেয়ে! কে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন? আমি কাকে ধরে রাখবো? হে আমার মেয়ে! তুমি কার কথা বলছো?’ মেয়েটির জবাব এমন ছিলো, যা তার মা এবং উপস্থিত সবাইকে প্রভাবিত করে। (মেয়েটি বললো-)
اَنَّهٗ سَيِّدُنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا اُمِّىْ دَخَلَ سَيِّدُنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى غُرْفَتِىْ وَوَضَعَ يَدَهٗ عَلٰى رَأْسِىْ فَذَهَبَ الْجَرْحُ وَذَهَبَ الدَّمُ وَعِنْدَمَا فَتَحْتِى الْبَابَ خَرَجَ يَا اُمِّىْ
‘মা! নিশ্চয়ই তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার কক্ষে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিয়ে আমার মাথায় উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক) রাখলেন বা বুলিয়ে দিলেন, তৎক্ষণাৎ (আমার) ক্ষত সেরে গেলো এবং রক্ত বন্ধ হয়ে গেলো। মা! যখনই আপনি দরজা খুললেন, তখনই তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন।’ (তখন মেয়েটির মা ও ডাক্তারসহ সকলে মিলে দেখলো যে, মেয়েটির মাথায় ক্ষতের কোনো চিহ্নই নেই এবং রক্তক্ষরণেরও কোনো চিহ্ন নেই। সুবহানাল্লাহ!)
সাথে সাথেই মেয়েটির মা এবং ঐ সময় সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন সকলেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করে মুসলমান হয়ে যান। আর সিডন শহরের খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত সমস্ত পরিবার এবং আমেরিকান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ডাক্তারদের সমস্ত স্টাফ সকলেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যান। সুবহানাল্লাহ!
লেবাননের অধিকাংশ মানুষ এই ওয়াক্বেয়া সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ!
ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
فَاللهُ خَيْرٌ حٰفِظًا وَّهُوَ اَرْحَمُ الرّٰحِمِيْنَ
‘মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বোত্তম হিফাযতকারী এবং তিনি হচ্ছেন ‘আরহামুর রহিমীন’ অর্থাৎ সবচেয়ে বড় দয়ালু।’ (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইঊসুফ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)
এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর মুবারক হচ্ছেন,
فَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرٌ حٰفِظًا وَّهُوَ رَحْمَةٌ لِّلْعٰلَمِيْنَ
‘মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বোত্তম হিফাযতকারী এবং তিনি হচ্ছেন ‘রহমাতুল্লিল আলামীন’ অর্থাৎ সমস্ত আলমের জন্য রহমত মুবারক স্বরূপ।’ সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
এই ঘটনাসহ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঘটনা মুবারকগুলো থেকে সেই বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে যায়।” (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)
তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা সমস্ত সৃষ্টির জন্য কতো সীমাহীন বেমেছাল রহমত-বরকত, সাকীনাহ্, নেয়ামত, মাগফিরাত, নাজাত ও গাইবী মদদ মুবারক লাভের কারণ, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩২)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৭)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












