ইলমে তাছাউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১)
, ১৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২১ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
عن حضرت ابن عباس رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال الشيخ فى اهله كالنبى فى امته وفى رواية اخرى- الشيخ لقومه كالنبى فى امته- وفى جمع الجوامع- الشيخ فى بيته مثل النبى فى قومه- (الفردوس للديلمى والمقاصد الحسنة وتنزية الشريعة والميزان والجامع الصغير للسيوطى والدرر المنتشرة للسيوطى وغيرها.
তরজমা: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আহাল অর্থাৎ মুরীদের কাছে সেরূপ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মতের কাছে যেরূপ।
অপর এক বর্ণনায় আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মতের মাঝে যেমন অনুসরণীয়, মুর্শিদ ক্বিবলা উনার মুরীদের জন্য তেমনি অনুসরণীয়। জামউল জাওয়ামে নামক কিতাবে শব্দের পার্থক্য করে অনুরূপ একখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে। (আল ফিরদাউস লিদ দায়লামী, ওয়াল মাকাছিদুল হাসানাহ্, ওয়াত্ তানজিহুশ শরীয়াহ্, ওয়াল মিযান, ওয়াল জামিউছ ছগীর লিস সূয়ুতী, ওয়াদ দুরারুল মুনতাশারাতু লিস সুয়ুতী ইত্যাদি।)
তাশরীহুল হাদীছ: মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আলোচ্য হাদীছ শরীফে মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের মধ্যে কিরূপ সম্পর্ক হওয়া উচিত, শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি কতটুকু তাযীম-তাকরীম রক্ষা করা জরুরী এবং তিনি কতটুকু সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী তারই সুনিপুন চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।
মূলতঃ হক্কানী-রব্বানী আলিম অর্থাৎ মুর্শিদ ক্বিবলা উনারা হচ্ছেন নায়েবে নবী, “ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া” বা নবী আলাইহিমুস সালাম উনার উত্তরাধিকারী। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
العلماء ورثة الانبياء
অর্থ: “আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ উনারা হচ্ছেন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উত্তরাধিকারী।” তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
العلماء امتى كانبياء ينى اسرائيل
অর্থ: “আমার উম্মতের আলিম অর্থাৎ পীর মাশায়েখগণ বণী ইসরাঈলের নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের মত।”
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা উনাদের উম্মতের হিদায়েতের আলোক বর্তিকা। সরল-সঠিক পথ প্রদর্শনকারী। তেমনি উনাদের অবর্তমানে হক্কানী-রব্বানী আলিম অর্থাৎ পীর-মাশায়েখগণ উনাদের উত্তরসূরী হিসেবে দুনিয়াতে অবস্থান করেন। উনাদের পরশ পেয়ে মানুষ সঠিক ও সহজ-সরল পথের সন্ধান পায়। মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফত ও মুহব্বত মুবারক হাছিল করতে সক্ষম হয়। হক্কানী শায়েখ বা মুর্শিদগণ ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ দিয়ে মুরীদের বদ্ খাছলতগুলোকে দুরীভূত করেন। ফলে মুরীদ মা’রিফত-মুহব্বত প্রাপ্তির যোগ্যতা অর্জন করে। কাজেই পীর-মাশায়েখগণ হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের কায়িম মাকাম হিসাবে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী তা বলাই বাহুল্য। ইমাম দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে মারফু হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেন-
بجلوا المشائخ فان تبجيل المشائخ من اجلال الله عز و جل فمن لم يبجلهم فليس منا-
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা পীর মাশায়েখগণকে সম্মান করো, কেননা পীর মাশায়েখগণকে সম্মান করা মহান আল্লাহ পাক উনাকেই সম্মান করার নামান্তর। সুতরাং যে ব্যক্তি উনাদেরকে সম্মান করেনা, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আত্-তায্কিরাতু ফি আহাদিছীল মুন্তাশিরাহ্)
সুতরাং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা উনাদের উম্মতের কাছে যেরূপ সম্মানিত, তদ্রুপ পীর-মাশায়েখগণও উনাদের মুরীদের কাছে তেমনি সম্মানিত।
অতএব, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের প্রতি উনাদের হেদায়েতপ্রাপ্ত উম্মতগণ যেরূপ তা’যীম-তাকরীম করতঃ আদব রক্ষা করে চলতেন, সেরূপ পীর-মাশায়েখগণের প্রতি মুরীদগণকে তা’যীম-তাকরীম ও আদব বা শিষ্টাচার প্রদর্শন করতঃ সৌজন্যমূলক আচরণ করতে হবে। কেননা এর ব্যতিক্রম হলে বা উনাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দিলে মুরীদের উপর অর্পিত নিয়ামতসমূহ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ছিনিয়ে নিবেন। এবং সমস্ত নেক আমল বরবাদ করে দিবেন। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












