ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১১)
, ১৫ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১৫ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত বাবা ফরিদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি বললেন, আমি একটা কিতাবে পেয়েছি। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী ঠা-া মেজাজ, মৃদু মুচকি হাসি। উনি বললেন, কিতাবে পেয়েছি। যে কোথায় কিতাব নিয়ে আসেন, উনি খাদিমকে বললেন, যে আমার তাকের মধ্যে কিতাবটা রয়েছে, নিয়ে এসো তো। নিয়ে আসা হলো। উনার যারা মুরিদ-মুতাকিদ ছিলো সবাইকে দূরে সরিয়ে দিলেন, যে তোমরা দূরে সরে যাও। পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলেন। পৃষ্ঠা উল্টাতেছিলেন পৃষ্ঠা সব সাদা, লিখা নেই। মোল্লা সাহেব বললো, আপনার কিতাব তো খালি। উনি উল্টাতে উল্টাতে হঠাৎ একটা কাগজ বের হয়ে আসলো, যেই কাগজের মধ্যে লিখা ছিল সেই মোল্লা সাহেবের হাতে, আমার যিন্দেগীর সমস্ত নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, ইবাদত-বন্দেগী একটা রুটির বিনিময়ে আমি দিয়ে দিলাম। তার সিগনেচার রয়েছে, সেটা দেখে মোল্লা সাহেব একটা লাফ দিয়ে চিৎকার করে হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পায়ে পড়ে কান্নাকাটি করলো, ইস্তিগফার তওবা করলো, বাইয়াত হয়ে গেল। যে পরবর্তী জীবনে সে নির্বাক ছিল, কোন কথাবার্তা বলতো না। সে কোনদিন হাসেওনি এর পরে মৃত্যু পর্যন্ত। সেই কাগজটা দেখতে পেল হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে। যে আমার যিন্দেগীর সমস্ত নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, ইবাদত-বন্দেগী আমি রুটির বিনিময়ে দিয়ে দিলাম।
উনি বললেন, হে মাওলানা সাহেব! তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, কালিমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এর পাশাপাশি ইসলামের ষষ্ঠ বেনা হচ্ছে রুটি। রুটির বিনিময়ে যখন সব বিক্রি হয়ে যায়, তাহলে তো রুটিও একটা বেনা রয়েছে। সেটাই বলা হয়েছে-
مَنْ تَفَقَّهَ وَلَمْ يَتَصَوَّفْ فَقَدْ تَفَسَّقَ
যে ফেক্বাহ করলো, তাছাওউফ চর্চা করলো না, সে যত বড় আলিম দাবি করুক, সে ফাসিক। সে তার ঈমান বিক্রি করে দিবে দুনিয়ার জন্য। সে তার ঈমান বিক্রি করে দিবে দুনিয়ার জন্য। যেমন মোল্লা সাহেব বিক্রি করে দিয়েছে। সে বিশ্বখ্যাত আলিম ছিল, মাওলানা ছিল, মোল্লা ছিল। সে তার ঈমান বিক্রি করে দিল রুটির বিনিময়ে। সেই রুটি খাইয়েছিলেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি। প্রতি তিন দিন পর পর উনি নিজে ফেরিওয়ালা সেজে সে খাঞ্চা মাথায় করে নিয়ে তাকে খাওয়ায়ে আসতেন, পান করায়ে আসতেন। তার জীবন বাঁচানোর জন্য উনি সে কাজ করেছেন। কিন্তু সে মোল্লা সাহেব সেটা বুঝতে পারেনি। সে একবারের জন্য ফিকির করলো না, যে, সে যেখানে ছিলো জনমানবহীন, ঝোপ-ঝাড় জঙ্গল, পাহাড় ও সমুদ্রের পাড়ে। সেখানে ফেরিওয়ালা আসে কোথা থেকে?
যাই হোক, যখন সে কাগজ দেখলো সে বুঝতে পারলো, যে উনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী। উনি তো তাকে খাওয়ায়েছেন, পরিয়েছেন। উনি তো তাহলে সব জানেন। সে লাফ দিয়ে চিৎকার করে পায়ে পড়ে ইস্তিগফার করলো, কান্নাকাটি করলো, তওবা করলো, বাইয়াত হলো, আজীবনের জন্য উনার খাদিম হয়ে গেল। যে এর পরে সে নির্বাক ছিল। কখনো সহজে সে হাসতো না। তাকে কেউ হাসতে দেখেনি। প্রয়োজন ছাড়া সে কথা বলতো না।
অতএব মুরীদ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার যে কথা ও কাজের রহস্য বুঝতে পারবেনা, তাতে নিজের জ্ঞানের স্বল্পতা ও বিবেকের সংকীর্ণতা মনে করবে তাহলে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার মহব্বতের কোন বিঘœতা ঘটবেনা। কেননা মহব্বত কমে গেলে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ক্বল্ব্ মুবারক হতে মুরীদের ক্বল্বে ফয়েজ আসাও কমে যাবে। তাই কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে কোনরূপ বাদ-প্রতিবাদ করা যাবে না এমনকি অন্তরেও সন্দেহ পর্যন্ত করা যাবে না। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












