ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৩)
স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার জবান নিঃসৃত কথা মুবারক, আমল মুবারক, ব্যবহার, চলন মুবারক ইত্যাদি কোন বিষয়ে বিন্দু থেকে বিন্দুতম সংশয় বা সন্দেহকে অন্তরে স্থান দিবে না। যা মুরীদের কামিয়াবী হাছিলের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়
, ২৭ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৭, মে, ২০২৪ খ্রি:, ২৪ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইলমে তাছাউফ

“মা’দানুল মাআনী” কিতাবে বর্ণিত আছে, হযরত নাছীরুদ্দীন মাহমূদ চেরাগে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইন্তেকালের সময় নিকটবর্তী হলে শেখ রুকনুদ্দীন বেরুনী ও শেখ কামালুদ্দীনকে (উনার দুই ভাগিনা) ডেকে বললেন, চিশতীয়া খান্দানের পূর্বের যে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার যে সমস্ত নিয়ামত আমার নিকট গচ্ছিত ছিল, তা হতে যার যা প্রাপ্য ছিল আমি তা যথাযথ প্রদান করেছি। এখন তোমাদের প্রতি আমার নির্দেশ হলো, “আমার ইন্তেকালের পর আমাকে যখন কবরে রাখা হবে তখন আমার খেরকাটি আমার সীনার উপর, কাঠের পাত্রটি মাথার নীচে, তছবীহের ছড়াটি আমার আঙ্গুলের ফাঁকে, সেন্ডেল জোড়া এক পার্শ্বে এবং লাঠিটি অপরপার্শ্বে রেখে দিও। ” পরবর্তীতে উনার সেই দুই ভাগিনা উনারা ওসীয়ত পালন করলেন।
“মিরাআতুল আসরার” কিতাবের রচয়িতা বলেন, আমি দ্বিতীয়বার দিল্লী গমন করে ইয়াওমুল খমীস দিন, জুমুয়ার রাত হযরত নাছীরুদ্দীন মাহমূদ চেরাগে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফের নিকটে যাপন করলাম। সারা রাত যিকির-আযকার, তাছবীহ্-তাহলীল ও মুরাকাবা-মুশাহাদায় মশগুল থাকি এবং মাযার শরীফ হতে নানাবিধ সৌভাগ্য লাভ করি। হযরত নাছীরুদ্দীন চেরাগে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন রূহানীভাবে আমার সম্মুখে আত্মপ্রকাশ করলেন, তখন আমি সাহস সঞ্চয় করে উনার খিদমতে আরজ করলাম, হযরত! আপনার পরবর্তী যারা ছিলেন, উনাদের মধ্যে অনেকেই তো উচ্চ মর্যাদাশীল বুযূর্গ ব্যক্তি ছিলেন। উনাদের কাউকে আপনি খিলাফতের খিরকা প্রদান না করার কারণ আমি বুঝতে পারছি না। আমার এ আবেদন শুনে তিনি বললেন হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ, আমার পরবর্তী যারা ছিলো, তারা অনেকে যোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলো। কিন্তু তাদের মধ্যে কিঞ্চিৎ পরিমাণ পক্ষপাতমূলক মনোভাব বিদ্যমান থাকায় আমি তাদের মধ্যে খিরকার মর্যাদা রক্ষার যোগ্যতার অভাব মনে করেছি। কাজেই তাদের কাউকে আমার পূর্ববর্তী মুর্শিদ বা শায়েখ উনার নিকট হতে প্রাপ্ত নিয়ামত প্রদান করিনি।
এদিকে হযরত আঁখি সিরাজুদ্দীন উছমান আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন উনার তুলনায় অত্যন্ত অল্প বয়সের। কিন্তু জ্ঞান, গরিমা, ইলিম, আমল, তাক্বওয়া, পরহেযগারীতে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। সর্বোপরি নিজ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি তিনি ছিলেন ফানা-বাক্বা, বিশুদ্ধ হুস্নে যন, অকুন্ঠচিত্ত মুহব্বত, সিমাহীন বিনয় ও জানবাযী রাখতে পারদর্শী। উনার সম্মানিত শায়েখ মাহবুবে ইলাহী, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোন আমল, কথা-বার্তা ও ব্যবহারের প্রতি কোনরূপ সন্দিহান ছিলেন না। নিজ শায়েখের সমস্ত আমলকে সর্বদিক থেকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিতেন এবং যথাযথ তা’যীম-তাকরীম ও মুহব্বতের সাথে দায়িত্ব পালন করতেন।
বলাবাহুল্য যে, হযরত আঁখি সিরাজুদ্দীন উছমান আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মানসপটে ইহা গভীরভাবে বদ্ধমূল ছিল যে, নিজ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আমল, আখলাক বা অন্য কোন ব্যাপারে অগ্রগামী হওয়া বা সে সম্পর্কে কোন প্রকার চূ-চেরা করা মুরীদের জন্য চরম আদবের খিলাফ।
পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيِ اللهِ وَرَسُولِهٖ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অগ্রগামী হয়ো না। ” (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ, ০১)
আর হক্কানী, রব্বানী, মাশায়িখ, আলিম উলামাগণ উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দীদার মুবারকে তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর উনারই ক্বায়িম-মাক্বাম হিসেবে হিদায়েতের কাজ করে থাকেন। কাজেই হযরত আঁখি সিরাজুদ্দীন উছমান আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যথারীতি সামার মজলিসসহ অন্যান্য হিদায়েতী কাজে নিজ মুর্শিদ ক্বিবলা উনার হুবহু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন। যার কারণে মাহবুবে ইলাহী, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক পূর্ণমাত্রায় হাছিল করে সমস্ত নিয়ামত লাভ করেন।
হযরত আঁখি সিরাজুদ্দীন উছমান আওদাহী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কামিয়াবীর উজ্জ্বল ভবিষ্যত এবং উনার মাধ্যমে চিশতীয়া খান্দানের তরীক্বা সারা বিশ্বে পরিব্যাপ্তির বহিঃপ্রকাশ উনার ছাত্র জীবনেই ফুটে উঠে।
সেক্ষেত্রে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার সম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত-মুহব্বত ও নিসবত-কুরবত মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে সুলত্বানুল মাশায়িখ, মাহবুবে ইলাহী, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমত মুবারকে নিজেকে সপে দিলেন। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতে তাছাউফ চর্চা
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ইলমে ফিক্বাহ ও পবিত্র ইলমে তাছাউফ অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
০৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪১)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪০)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৯)
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৮)
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৪)
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুহলিকাত তথা বদ স্বভাবসমূহ
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মুনজিয়াত উনার বিবরণ
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবতে যাওয়া ব্যতীত কারো পক্ষে প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১২)
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)