ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৩)
, ১৮ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৩ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৬ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইলমে তাছাউফ
কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
কাজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে কোন অবস্থার সম্মুখীন হলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করতেন।
অনুরূপভাবে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা নিজ নিজ কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার খেদমতে উনাদের “হাল” পেশ করতেন। এবং এ ব্যাপারে সমাধান করতেন।
উল্লেখ্য যে, হাল বা অবস্থা হচ্ছে ইলমে তাছাউফের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, তরীক্বতপন্থীদের অমূল্য সম্পদ, সালিকের সফলতা লাভের সোপান। সালিক বা মুরীদ যখন মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে পাওয়ার আশায় বিভোর হয়ে যায়, দুনিয়ার মুহব্বত ছিন্ন করে কামিল শায়েখ উনার নির্দেশিত যিকির-ফিকির, মুরাকাবা-মুশাহাদায় মশগুল হয় তখনই সে বিভিন্ন প্রকার হালের সম্মুখীন হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এমনি এক পর্যায়ে উপনীত হয় যে, তখন বাহ্যিকভাবে শরীয়তের খিলাফ বাক্য তার জবান থেকে বের হয়ে আসে। সেক্ষেত্রে তখন স্বীয় কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট হাজির হওয়া আবশ্যক।
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে সে হাল সম্পর্কে অবহিত করলে তিনি ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ বা সঠিক নির্দেশনা দিয়ে সে হাল পরিবর্তন করেন। অন্যথায় সে ব্যক্তির হালে পরাস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে শায়েখ উনাকে অবহিত করা এবং উনার নির্দেশ মুতাবিক আমল করা। যা সম্মানিত শায়েখ উনার সাথে মুরীদের আলাদা নিসবত হাছিলের কারণ।
মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত-মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভের ক্ষেত্রে জজবা বা কুওওয়াত আবশ্যক। হাল ও জজবা ব্যতীত এ পথের কোন স্বার্থকতা নেই।
ক্বইয়ূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মাকতুবাত শরীফে” উল্লেখ আছে, “একবার উনার বিশিষ্ট মুরীদ হযরত খাজা মুহম্মদ আশরাফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার হাল تصور شيخ (তাছাওউরে শায়েখ) তথা স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আকৃতি ধ্যানের প্রাবল্যের বিষয়টি নিজ শায়েখ হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে অবহিত করে লিখেছেন যে, উহা এমন আধিক্য লাভ করেছে যে, নামাযের মধ্যে উহাকে স্বীয় সিজদাকৃত বলে অনুভব হচ্ছে এবং প্রত্যক্ষ করছে যদিও তা নিবারণ করার চেষ্টা করা যায় কিন্তু তাতে নির্বাপিত হয় না।
উল্লেখ্য যে, কোন মহান বুযূর্গ বা নিজ মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আকৃতি ও চেহারা মুবারকের ধ্যান হাছিল করাকে تصور شيخ (তাছাওউরে শায়েখ) বলে। (তালক্বীনে মুর্শিদ)
জবাবে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, “উল্লিখিত সৌভাগ্য সালিক বা মুরীদগণের কাঙ্খিত বস্তু। হাজারের মধ্যে একজন তা লাভ করে থাকে। এ প্রকার সালিক স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে পূর্ণ সম্পর্কের যোগ্যতা সম্পন্ন। অল্প দিনের মধ্যে সে স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার যাবতীয় নিয়ামত তথা পূর্ণতা আহরণে সক্ষম হয়ে উঠে। কাজেই আপনি উক্ত বিশেষ নিয়ামত তাছাওউরে শায়েখ বা রাবেতাকে নিবারণ করেন কেন? উনার দিকে সিজদা করা হয় বটে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উনাকে সিজদা করা হয় না। কেননা যদি তাই হয় তবে মসজিদের মেহরাব সমূহকে নিবারণ করা হয় না কেন? (কারণ মেহরাব সামনে রেখেই তো মানুষ সিজদা করে?)
জেনে রাখুন, উক্ত প্রকারের দৌলতের আবির্ভাব সৌভাগ্যবানগণের ভাগ্যেই লাভ হয়ে থাকে। উনারা সর্বদাই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে স্বীয় মধ্যস্থতা স্বরূপ মনে করেন এবং সবসময় উনার প্রতি মনোযোগী থাকেন। আর উনারা ঐ সকল হতভাগাদের মত নন, যারা নিজেদেরকে অমুখাপেক্ষী বলে ধারণা করে নিজ লক্ষ্য নিজ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা হতে অন্যের প্রতি ফিরিয়ে নেয় এবং নিজের আত্মিক অবস্থার মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। ”
একবার হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ছাহেবযাদাহ হযরত মুহম্মদ ছাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রেরিত “আত্মিক অবস্থার বর্ণনা সম্বলিত” একখানা পত্র পান। পত্রের মাধ্যমে উনার হাল বা অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হয়ে লিখেন, হে বৎস! “বেলায়েতে মুহম্মদী” উনার সাথে আপনার সম্পর্ক ঘটেছে। এ জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আমি অনেক দিন যাবৎ আাপনার এ সৌভাগ্য লাভের আশাবাদী ছিলাম। আপনার হালের উন্নতিতে সৌভাগ্যের স্থলে আকর্ষণ করে নেয়ার প্রতি যখন মনোনিবেশ করলাম তখনই আপনাকে “বেলায়েতে মূসাউয়ী”-এর অন্তর্ভুক্ত পেলাম। তৎপর তথা হতে আকর্ষণ করে “বেলায়েতে খাছ্ছাহ”-এর (বিশেষ নৈকট্য) আওতাভুক্ত করলাম।
তার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রশংসা ও অনুগ্রহ প্রকাশ করছি। আপনাকে বলপূর্বক এ বেলায়েতে উপনীত করানো হয়েছে। এ নিসবত আত্মিক সম্বন্ধের দুর্বলতা হেতু মনে হয়, আপনি তা উপলব্ধি করতে পারেননি। এখন যখন তা শক্তিশালী হয়েছে তখন আশা করি আপনিও বুঝতে পেরেছেন। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৬)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৪)
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৩) শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর:
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












