ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৫)
কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইলমে তাছাউফ
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, বৎস! তুমি লিখেছো যে, “আপনার সাথে নিসবত বা সম্বন্ধের ইতোপূর্বে যেরূপ তাছীর ছিল এখন তদ্রুপ নেই। ” মনে রেখো, দৈহিক তাছীর বা ক্রিয়া নেই বটে; কিন্তু রূহানী বা আত্মিক তাছীর বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য সবাই সব সময় তা অনুভব করতে পারে না। কি করবো তুমি তো এ ফকীরের সংশ্রবে অতি অল্পকাল অবস্থান করেছিলে তাই বিশেষ বিশেষ ইলমে মা’রিফাতসমূহ তোমার উপস্থিতিতে অতি অল্পই বর্ণিত হয়েছে। কাজেই মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি পুনরায় তোমাকে আমার সাক্ষাত দান করেন এবং কিছুদিন আমরা একত্রে অবস্থান করি তবে বুঝতে পারবে। অনুরূপভাবে আরো বর্ণিত আছে যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অপর একজন বিশিষ্ট মুরীদ হযরত হাজী মুহম্মদ ফরক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্বীয় হাল তথা “কব্য্” (সংকোচন) এবং “বস্ত্” (সম্প্রসারণ) সম্পর্কে অবহিত করে পত্র লিখেন।
উল্লেখ্য যে, “বস্ত্” হচ্ছে অন্তরের প্রশান্ত অবস্থা। যে অবস্থায় ইবাদত-বন্দেগীর দিকে অন্তর রুজু হয়। এবং তাতে স্বাদ ও আনন্দ পাওয়া যায়। আর “কব্য্” হচ্ছে তার বিপরীত। অর্থাৎ মনের মধ্যে কোন প্রশান্তি থাকে না, ইবাদত-বন্দেগীতে মন বসতে চায় না এবং তাতে কোন স্বাদ ও আনন্দ পাওয়া যায় না।
তিনি আরো লিখেছেন, “কব্য্” এবং “বস্ত্” মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার প্রিয় হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেজামন্দী হাছিলের পথে উদীয়মান হওয়ার জন্য দু’টি পাখা বা ডানাস্বরূপ। অতএব “কব্য্” এর অবস্থায় মনক্ষুণœ হবে না এবং “বস্ত্” এর অবস্থায়ও উৎফুল্ল হবে না। বরং সর্বাবস্থায় আশাধারী থাকবে অর্থাৎ উভয় অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত-সন্তুষ্টি ও দীদার মুবারক লাভের প্রত্যাশায় চেষ্টা-কোশেশ অব্যাহত রাখবে। স্মরণ রাখবে, মহান আল্লাহ পাক উনার মক্ববুল বান্দা হলেন ঐ ব্যক্তি, যে স্বীয় মালিকের (মহান আল্লাহ পাক উনার) প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। কাজেই যে ব্যক্তি স্বীয় ইচ্ছা বা সন্তুষ্টির অনুগামী সে নিজেরই গোলাম বা দাস। যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি কারো গলদেশে ছুরিকাঘাত করেন তখনও যেন সে সন্তুষ্ট ও প্রফুল্লচিত্ত থাকে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন, যদি তার কার্যের প্রতি ঘৃণার উদ্রেক হয় এবং সীনা সংকুচিত করে, তবে সে দাসত্বের গন্ডি হতে বের হয়ে যায় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার প্রিয় হাবীব সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি বা নৈকট্য হতে বঞ্চিত হবে। (মাকতুবাত শরীফ)
উল্লেখ্য যে, নৈকট্য ও রেজামন্দীর ক্ষেত্রে “কব্য্” এবং “বস্ত্” এমন দু’টি সম্পৃক্ত অবস্থা যা সালিকগণের মৃত্যু পর্যন্ত সংঘটিত হতে থাকে। “কব্য্” অবস্থায় ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা কঠিন বটে; কিন্তু ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার বিরাট একটি নিয়ামত, তবে যদি বুঝতে পারে। কেননা এর মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার অনেক হিকমত নিহিত আছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি এর মাধ্যমে বান্দাকে পরীক্ষা করেন যে, বান্দা মনের আনন্দ-উৎফুল্লতাবশতঃ ইবাদত-বন্দেগী করে? নাকি মনের নানা প্রকার বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই ইবাদতে লিপ্ত থাকে। যা কিছুই হোক, মনে রাখা উচিত; ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ নিয়ামতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ “কব্যের” অবস্থায় সালিক নিজেকে হীন, তুচ্ছ, বরবাদ, বেকার বিবেচনা করে। ফলে হিংসা-বিদ্বেষ পরশ্রীকাতরতাসহ নানা প্রকার কু-স্বভাবরূপী রোগের প্রতিকার এমনিই হয়ে যায়। তদুপরি এ সময়ে নিজ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি অন্তর থাকে অধিক রুজু। কাজেই একমাত্র শায়েখ উনার ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ্কে উসীলা বা মাধ্যম মনে করে উনারই খেদমতে আত্মনিয়োগ করে থাকে।
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা কাশ্ফ দ্বারা মুরীদের অবস্থা জ্ঞাত হচ্ছেন এটা না ভেবে উনার নিকট নিজ হাল জানাবে।
উল্লেখ্য, ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার হাল বা অবস্থা প্রতিনিয়ত নিজ শায়েখ হযরত খাজা বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে অবগত করতেন।
একবার তিনি উনার শায়েখ হযরত খাজা বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে লিখেন, আরশের উপর যে মাকাম ছিল আরোহী অবস্থায় নিজ রূহ বা আত্মাকে সেখানে পেলাম। উক্ত মাকাম হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নক্শবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে বৈশিষ্ট্য রাখে। কিছুদিন পর এ ভৌতিক দেহকেও উক্ত মাকামে পেলাম। তখন আমার ধারণা হলো যে, ভৌতিক ও অন্তরীক্ষ জগৎ নিম্নে পতিত হলো এবং তার যেন কোন চিহ্নই থাকল না। সেখানে কতিপয় হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ছাড়া আর কেউই ছিলেন না। সমস্ত জগতকে আমার সাথে একই মাকামে সম্মিলিত পেয়েছি তাই বিচলিত হলাম। কেননা উনারা আমার সাথে সম্পর্কহীন অথচ আমি উনাদেরই সঙ্গী। যার ফলে মাঝে মধ্যে আমার যেরূপ অবস্থা ঘটেছিল তাতে নিজেকে পেতাম না, বিশ্বজগৎ ও অন্যান্য কোন বস্তুকেও দেখতাম না, জানতাম না এবং বুঝতাম না। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৬)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৪)
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৩) শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর:
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












