ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৬)
কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ৮ই রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ৯ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ২২ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইলমে তাছাউফ

ইদানিং উক্ত হালত স্থায়ীভাবে চলছে যেন সৃষ্টি জগত আমার জ্ঞান ও দৃষ্টির বাইরে। তারপর উক্ত মাকামে একটি উচ্চ গৃহ প্রকাশ পেল। সেখানে সোপান বা সিঁড়ি সন্নিবেশিত ছিল। আমি সেখানে উপনীত হলাম পরে সেটাও পূর্ববৎ ধীরে ধীরে নিম্নে চলে গেল এবং নিজেকে প্রতি মুহূর্তে আরোহী অবস্থায় পাচ্ছিলাম। তাহিয়াতুল ওযূর নামায আদায় করছিলাম। ইতোমধ্যে একটি উঁচু মাকাম দৃষ্টি গোচর হলো। নক্শবন্দীয়া তরীকার বুযূর্গ ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত তরীকত, ইমামুছ ছিদ্দীকীন, সুলত্বানুল আউলিয়া, হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নক্শবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, কুতুবুল আলম, কামরূছ্ ছূফীয়া খাজা মুহম্মদ পারছা রহমতুল্লাহি আলাইহি, শাম্সুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ খাজা আলাউদ্দীন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমীরুশ শরীয়ত, মাহতাবে তরীকত, ইমামুছ্ ছালেহীন, খাজা উবায়দুল্লাহ আহরার রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদেরকে সেখানে দেখতে পেলাম এবং সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা, হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার মত আরো কতিপয় বুযূর্গ ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কোন কোন মাশায়েখে ইজাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে উক্ত মাকামের উপরিভাগে দেখলাম উনারা তার স্তম্ভ বা খুঁটি ধরে বসে আছেন। আর কেউ কেউ নিম্নে ছিলেন। অবশ্য উনাদের মধ্যেও কিছু তারতম্য ছিল। কিন্তু আমি নিজেকে উক্ত মাকাম হতে বহুদূর নিম্নে পেলাম। মনে হলো যেন উহার সাথে আমার কোন সম্পর্কই নেই।
এ ঘটনার পর হতে আমার অস্থিরতা এতো বৃদ্ধি পেল যে, আমি পাগল প্রায় হয়ে গেলাম। অতিরিক্ত চিন্তা-পেরেশানি হেতু মনে হতো যে, স্বীয় দেহ শুন্য করি। কিছুদিন এভাবে অতিবাহিত হলো। অবশেষে আপনার পবিত্র তাওয়াজ্জুহ উনার বরকতে এর অবসান ঘটলো ফলে মাকামের সাথে আমার সম্পর্ক হলো। প্রথমে নিজের মাথা উক্ত মাকামের সম্মুখীন পেলাম, পরে ধীরে ধীরে উক্ত মাকামের উপর উঠে উপবিষ্ট হলাম। আর এতে মনোযোগী হয়ে বুঝতে পেলাম যে, উক্ত মাকাম অন্যকে পূর্ণরূপে পূর্ণত্ব দানের মাকাম যেখানে সালিকগণ সায়ের সুলূক বা আত্মীক ভ্রমণ শেষ হওয়ার পর উপনীত হন। যে ব্যক্তি শুধু মাজ্জুব বা মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক আকর্ষিত এবং সুলূক বা আত্মীক ভ্রমন শেষ করেনি সে ব্যক্তি উক্ত মাকামের কিছুই লাভ করতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে ইহাও বুঝতে বাকী থাকলো না যে, আপনার পবিত্র খিদমতে থাকাকালীন দেখেছিলাম, “হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বললেন, আপনাকে আসমান ও জমিনের ইলিম শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছি। ” তাই এ মাকামে উপনীত হওয়া তারই ফল। বিশেষ চিন্তা করে অবগত হতে পারলাম যে, হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে “হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মাকাম একান্ত নিজস্ব। অতঃপর দেখতে পেলাম যে, নিজের অসৎ চরিত্রাবলী প্রতি মুহূর্তে যেন দেহ হতে অপসারিত হচ্ছে। কখনও বা সুত্রবৎ আবার কখনও ধুয়া যা বহির্গত হচ্ছে। কখনও মনে হয় যে, সব কিছুই বের হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর দেখি আরো কিছু বের হচ্ছে। (মাকতুবাত শরীফ)
উল্লেখ্য যে, সালিক বা মুরীদ সুলূকের পথে এরূপ শত সহস্র হাল বা অবস্থার সম্মুখীন হয়ে থাকে। বিভিন্ন মাকাম অতিক্রম করাকালীন বিভিন্ন হাল প্রকাশ পায়। তবে এ সমস্ত হাল বা অবস্থাকে হাকীকী নৈকট্য লাভ বা পূর্ণতা প্রাপ্তি বলে পরিতুষ্ট হওয়া, গর্বিত হওয়া কিংবা হাকীকী কামালত লাভ হয়েছে বলে মনে করা নিতান্ত বোকামীর নামান্তর। কেননা এগুলো হাল বা অবস্থা যা দর্শন মাত্র। সালিকের দর্শন উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি বা দীদার মুবারক লাভ। সেই দীদার মুবারক প্রাপ্তি বা সন্তুষ্টি লাভের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত। কাজেই যদি কোন সালিক সে সমস্ত হাল বা অবস্থা দর্শনে লিপ্ত হয়ে তাতেই পরিতুষ্ট ও সন্তুষ্ট থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় তবে পূর্ণতা লাভ করা কস্মিনকালেও সম্ভব হবে না। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
২৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
২১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১)
২০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৫)
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৪)
০৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩২)
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: ইলমে তাছাউফ উনার দৃষ্টিতে বাইয়াত হওয়া সম্পর্কে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইলমে তাছাউফ
২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)