ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৯)
কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ২৭ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ হাদি আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রি:, ১৩ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইলমে তাছাউফ

উল্লেখ্য যে, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য ও প্রধানতম শত্রু। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
অর্থ: “নিশ্চয়ই সে (শয়তান) তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। ” আরো বর্ণিত আছে-
إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا
অর্থ: “নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু। তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। ”
কাজেই মুরীদের সুলূকের পথে হাল বা বিভিন্ন অবস্থার পাশাপাশি শয়তানের ধোঁকাও আসতে পারে। অতএব, কোনটি হাক্বীক্বী হাল এবং কোনটি শয়তানের ধোঁকা সেটা শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট থেকে জেনে যাচাই-বাছাই করা দায়িত্ব-কর্তব্য। আর না বুঝলে বারবার জিজ্ঞাসা করে জেনে নেয়া সালিকগণের কর্তব্য। কেননা তা উপলব্ধি করতে না পারলে হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সেই দরবেশ মুরীদের মত শয়তানের ধোঁকায় পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই দরবেশ চিন্তাই করতে পারেনি, সে শয়তানের ধোঁকায় পড়েছে, যখন শায়েখ তাকে নেক-দৃষ্টি দিয়ে উদ্ধার করলেন তখন সে বুঝতে পেরেছে। সুতরাং এ সকল অবস্থা যেমন উন্নতি লাভের সহায়ক, তেমনি ক্ষতির কারণও বটে। তাই সালিক বা মুরীদ যদি সর্বাবস্থায় স্বীয় কামিল শায়েখ উনার প্রতি নিসবত ঠিক রাখে, হাল বা অবস্থাকে চেপে না রেখে উনাকে অবহিত করে উনার নির্দেশ মুবারক মুতাবিক নিজেকে পরিচালনা করার কোশেশ করে, তাহলে শয়তানের ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এতে মকছুদে মঞ্জিলে পৌঁছার পথেও যেমন বিপদমুক্ত হওয়া যায় তেমনি আত্মার পরিবর্তনেও অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কামিয়াবী হাছিল হয়।
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, ইমামুশ শরীয়ত, ওয়াত ত্বরীকত, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একজন মুরীদ, আবু আমর রহমতুল্লাহি আলাইহি (যিনি ছিলেন হাফেজে কুরআন) একবার মসজিদে বসে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। ঘটনাক্রমে ছাত্রদের মধ্য হতে একজন সুশ্রী বালকের প্রতি উনার কু-দৃষ্টি পতিত হয়। ফলে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ একেবারে ভুলে গেলেন এবং উনার সর্বশরীরে দাহ আরম্ভ হলো। তিনি অন্যায় বুঝতে পেরে মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে এবং অনুশোচনায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে তৎক্ষনাৎ ইমামুশ শরীয়ত, ওয়াত ত্বরীকত, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে ছুটে গেলেন এবং উনার কাছে আনুপুর্বক ঘটনা বিবৃত করলেন। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শুনে বললেন, এখন হজ্জের সময় আমার হাতে অনেক কাজ, তুমি এক কাজ করো। অমুক স্থানে “হানীফ” নামক একটি মসজিদ আছে। সেখানে এক বুযূর্গ লোককে দেখতে পাবে। সুযোগ মত উনার কাছে ঘটনা বর্ণনা করে দোয়া প্রার্থনা করবে।
উনার উপদেশ অনুযায়ী সেই মুরীদ বহু দূরবর্তী “মসজিদে হানীফে” উপস্থিত হলেন। দেখতে পেলেন সত্যিই এক মহান ব্যক্তি বহু লোক পরিবেষ্টিত অবস্থায় মসজিদের অভ্যন্তরে ওয়াজ নছীহত করছেন। একটু পরেই সাদা পোশাক পরিহিত অন্য একজন দরবেশ উনার কাছে এসে আলাপ আলোচনা শুরু করলেন। হাফেজে কুরআন ব্যক্তিটি মসজিদের এক কোনায় বসে বুযূর্গ ব্যক্তির সাথে আলাপ করার জন্য অধীর আগ্রহে সুযোগের অপেক্ষা করছেন। আছরের নামাযের পর মুছল্লীগণ ও আগন্তুক দরবেশ ঐ বুযূর্গ ব্যক্তির সাথে আরো কিছু কথোপকথন করে বিদায় হয়ে গেলেন। মসজিদে তখন আর অন্য কোন লোক ছিলো না। সুযোগ মনে করে উক্ত লোকটি বুযূর্গ ব্যক্তির কাছে নিজের আদ্যোপান্ত ঘটনা বলে উনার কাছে দোয়ার জন্য প্রার্থনা করলেন। এ কথা শুনে বুযূর্গ ব্যক্তি অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করলেন। অতঃপর আসমানের দিকে দৃষ্টি করে দোয়া করলেন।
দোয়াপ্রার্থী আবু আমর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, ঐ বুযূর্গ ব্যক্তি আমার জন্য দোয়া করে আসমানের দিক হতে দৃষ্টি নামিয়ে আমার দিকে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ আমার অন্তরে এসে গেলো। সুবহানাল্লাহ! আমি আমার হারানো বিষয় আবার ফিরে পেলাম। আনন্দের আবেগে আমি বুযূর্গের পদতলে লুটে পড়লাম। বুযূর্গ ব্যক্তি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কার কাছে আমার পরিচয় জানলে?” আমি বললাম, “আমার পীর ছাহেব, ইমামুশ শরীয়ত, ওয়াত ত্বরীকত, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। ” এ কথা শুনে তিনি বললেন, “তাহলে হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এভাবে আমার ভেদ খুলে দিয়েছেন! যাক আমিও এবার উনার রহস্য উদঘাটন করে দিবো। ” আচ্ছা কিছুক্ষণ পূর্বে সাদা পোশাক পরিহিত যে ব্যক্তি আমার সাথে কথা-বার্তা বলে বিদায় হয়ে গেলেন, উনাকে তুমি চিনো? আমি বললাম, “না হুযূর, আমি উনাকে চিনতে পারিনি। ” তিনি বললেন, “তিনিই তো তোমার শায়েখ, ইমামুশ শরীয়ত, ওয়াত ত্বরীকত, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। প্রতিদিন অপরাহ্নে বছরা থেকে এখানে আগমন করে আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা-বার্তা বলে আবার বছরা গমন করে আছরের নামায আদায় করেন। ” এমন যোগ্য ব্যক্তি বছরায় বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তুমি আমার নিকট দোয়ার জন্য এলে কেন?
মূলতঃ তিনি উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার কথার কারণেই এসেছিলেন এবং কোন চু-চেরা না করে হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা পালনের প্রেক্ষিতে নিয়ামতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতে তাছাউফ চর্চা
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ইলমে ফিক্বাহ ও পবিত্র ইলমে তাছাউফ অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
০৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪১)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪০)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৮)
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৪)
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুহলিকাত তথা বদ স্বভাবসমূহ
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মুনজিয়াত উনার বিবরণ
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবতে যাওয়া ব্যতীত কারো পক্ষে প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১২)
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)