ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪১)
কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ০১ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০১ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রি:, ১৭ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইলমে তাছাউফ

অনুরূপভাবে মাহবুবে ইলাহী, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তা’লীম-তরবীয়ত তথা ইলমে শরীয়ত হাছিল করার পর মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীক্বী মা’রিফাত ও মুহব্বত হাছিলের লক্ষ্যে ইলমে তাছাওউফ বা ইলমে মা’রিফাত শিক্ষায় আত্মনিয়োগ করলেন। সেক্ষেত্রে যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাতে কঠোর হলেন; কিন্তু ইলিম হাছিলের প্রবণতা পূর্ববত প্রবল রয়ে গেলো।
উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত ও মুহব্বত মুবারক হাছিলের ক্ষেত্রে ইলিম হাছিলের চেয়ে যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাতকেই প্রাধান্য দিতে হবে। অন্যথায় উদ্দেশ্য ও লক্ষে পৌঁছা কঠিন। তাই মাহবুবে ইলাহী, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ বা মুর্শিদ হযরত বাবা ফরিদুদ্দীন মাসউদ গন্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিজের হাল বা অবস্থা অবহিত করে বললেন, “আপনার আদেশ মুবারক পেলে আমি ইলিম চর্চা হতে বিরত থাকতে পারি। ” জবাবে হযরত ফরিদুদ্দীন মাসউদ গন্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আমি ইলিম শিক্ষা করতে কাউকে কখনও নিষেধ করি না। কাজেই আপনি উভয় কাজই করতে থাকুন। অর্থাৎ ইলিম শিক্ষা করতে থাকুন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভের জন্য যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাতে মশগুল থাকুন। অতঃপর এ দু’য়ের মধ্যে যেটি প্রাধান্য পাবে, সেটাই থেকে যাবে। ”
পরবর্তীতে মাহবুবে ইলাহী, হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তাই করতে থাকলেন। এমনিভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হলে তিনি লক্ষ্য করলেন মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাতে মশগুল থাকা উনার মধ্যে প্রাধান্য পেয়েছে। আর তিনিও একান্তভাবে মুহব্বত-মা’রিফত মুবারক হাছিলের কোশেশে মশগুল হয়ে পড়লেন। ফলে শিক্ষকতা বা শিক্ষা গ্রহণের কাজ বন্ধ হয়ে গেলো। (তাযকিরাতুল আউলিয়া)
আরো উল্লেখ আছে যে, একবার এক ব্যক্তি তাজুল আরিফীন, হযরত আবু ইয়াকুব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফে উপস্থিত হয়ে বললেন, হুযূর! মনে হয় আমার হৃদয় অত্যন্ত কঠিন হয়ে গিয়েছে। এর প্রতিকারের জন্য আমি অমুক অমুক পীর ছাহেব উনাদের দরবার শরীফে গমন করেছি এবং উনাদের কাছে এর প্রতিকারের জন্য পরামর্শ চেয়েছি। কেউ কেউ আমাকে রোযা রাখতে বলেছেন, কেউ কেউ আবার দেশ ভ্রমণের পরামর্শ দিয়েছেন। আমি সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছি, কিন্তু কোনই ফায়দা হয়নি। উনার কথা শুনে হযরত আবু ইয়াকুব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “উনারা সকলেই তোমাকে ভুল পথ দেখিয়েছেন। তোমার রোগের চিকিৎসা হলো, রাতে যখন সবাই নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তখন নীরবে মসজিদে গমন করে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কান্নাকাটি করবে, আর দোয়া করতে থাকবে, আয় মহান আল্লাহ পাক! আমি আপনার কুদরতে দিশেহারা, আপনি আমাকে সাহায্য করুন। ” লোকটি পরবর্তীতে বলেছেন যে, আমি হুযূরের পরামর্শ মত কাজ করে ফল পেয়েছি। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে আমার অন্তর রোগের সুচিকিৎসার ফলে অভাবিত উপকার সাধিত হয়েছে। ”
মূলত: আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা হচ্ছেন মানুষের আত্মার অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আত্মার নানা প্রকার কঠিন রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। কোন প্রকার রোগের জন্য কোন পন্থা অবলম্বন করতে হবে তার সঠিক সমাধান দিয়ে থাকেন।
উল্লেখ্য, পথহারা, আত্মভোলা লোকদেরকে ছোহবতে রেখে ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ প্রদানপূর্বক তাদের অন্তরের রোগের চিকিৎসা করে মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ করে দিবেন, এ মহান দায়িত্ব দিয়েই মহান আল্লাহ পাক তিনি আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে পাঠিয়েছেন। আর উনারা সে দায়িত্বটুকুই পালন করে থাকেন। কাজেই কামিল পীর ছাহেব তথা উলিল আমরগণ উনাদের ছোহবত লাভ করা, উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা কত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ তা জ্ঞানী ব্যক্তিগণই উপলব্ধি করতে পারেন, বুঝতে পারেন আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবত মুবারকের হাক্বীক্বত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ করো, অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছেন উনাদেরও অনুগত হও, অনুসরণ-অনুকরণ করো। ” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
অতএব, উলিল আমর তথা কামিল শায়েখ উনার অনুগত হওয়া, উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ অনুকরণ করা যেমন ফরজ-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত তেমনি উনাদের কাছে নিজ হাল প্রকাশ করা এবং সেক্ষেত্রে উনাদের নির্দেশ মুতাবিক নিজেকে পরিচালনা করার কোশেশ করা সর্বক্ষেত্রে মুরীদের জন্য ফায়দাজনক।
وَاللهُ اَعْلَمُ بِالصَّوَابِ
(অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতে তাছাউফ চর্চা
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র ইলমে ফিক্বাহ ও পবিত্র ইলমে তাছাউফ অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
০৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪০)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৯)
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৮)
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৪)
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুহলিকাত তথা বদ স্বভাবসমূহ
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মুনজিয়াত উনার বিবরণ
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবতে যাওয়া ব্যতীত কারো পক্ষে প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১২)
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)