ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮)
, ০৯ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ০৯ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
اِتَّقُوا فِرَاسَةَ الْمُؤْمِنِ فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللهِ
অর্থ: আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা মু’মিনের অর্ন্তদৃষ্টিকে ভয় করো, কেননা তিনি মহান রব তা’আলা উনার নূর দ্বারা সবকিছুই অবলোকন করে থাকেন।” (তিরমিযী শরীফ, মুজামুল কবীর-৮/১২১, ফাত্হুল বারী-১২/৩৮৮, কাশফুল খেপা-১/৪২, তানজীহুশ শরীয়াহ-২/৩০৫)
স্মর্তব্য, শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি মুরীদের কাজ-কর্ম, ভাল-মন্দ হাক্বীক্বীভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার সঠিক সমাধান প্রদান করেন। যদিও কখনো তা বাহ্যিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি একটি ওয়াক্বিয়া আমাদেরকে নছীহত দানের উদ্দেশ্যে বর্ণনা করেছেন। নিম্নে উনার নূরুস সালাম মুবারক থেকে বর্ণিত ওয়াক্বিয়া খানা উল্লেখ করা হলো-
কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত সুলত্বানুল হিন্দ খাজা গরীব নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, বেমেছাল ব্যক্তিত্ব। উনার সিলসিলার উনার প্রধান খলীফা হচ্ছেন হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি। যার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যিনি প্রতিদিন এক দৃষ্টিতে চল্লিশজন লোককে আবদালের দরজায় পৌঁছে দিতেন। সুবহানাল্লাহ! সেই হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রধান খলীফা হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি শাইখুল ইসলাম, শাইখুল আলম যার লক্বব। বেমেছাল ব্যক্তিত্ব। উনার ফযীলত বুযুর্গী রয়েছে। উনি একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। যে-
مَنْ تَفَقَّهَ وَلَمْ يَتَصَوَّفْ فَقَدْ تَفَسَّقَ.
যে ফিক্বাহ শিখলো কিন্তু তাছাওউফকে গুরুত্ব দিলো না, সে একটা ফাসিক, একটা গুনাহগার। তাদের শানে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক বলেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اٰمِنُوْا
হে ঈমানদাররা ঈমান আন। তুমি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করেছ, তুমি তো তাকমীলে পৌঁছতে পারনি। তুমি ইলমে তাছাওউফ চর্চা করো। তাহলে তুমি তাকমীলে পৌঁছতে পারবে। সেটাই-
لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا
শরীয়ত দেয়া হয়েছে, তাছাওউফও দেয়া হয়েছে। শুধু শরীয়ত নিয়ে থাকবে, তাহলে পূর্ণতায় পৌঁছতে পারবে না।
যে হযরত শাইখুল আলম, শাইখুল ইসলাম বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি বর্ণনা করেন, মূলত উনার যে বর্ণনা করেছেন উনার প্রধান খলীফা মাহবূবে ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি বর্ণনা করছেন ঘটনাটা, উনার পীর ছাহিব থেকে জেনে। উনিও সেটা দেখেছেন। যে উনি বর্ণনা করেন, হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার অনেক মুরীদ মু’তাকিদ ছিল, আলিম উলামা ছূফী দরবেশ অনেক ছিল। উনার আমল আখলাক্ব সীরত ছূরত দেখে সারা বিশ্বে নানান স্থান থেকে অনেক লোক এসে বাইয়াত হয়েছে। উনার বাড়ির নিকট এক ব্যক্তি ছিল, মোল্লা সাহেব নামে মশহূর, মোল্লাহ সাহেব। সে উনার দরবারে মাঝে মধ্যে আসা-যাওয়া করত। একদিন হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আচ্ছা, মোল্লাহ সাহেব! আপনি তো অনেক পড়াশোনা করছেন, যে হ্যাঁ, অনেক পড়াশোনা করেছি। ইসলামের ভিত্তি কয়টা? উনি বললেন, কেন হাদীছ শরীফে রয়েছে, ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে পাঁচটা।
بُنِيَ الْإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ.
ইসলামের ভিত্তি ৫টা বিষয়ের উপর। কালিমা, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত।
হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি বললেন, মোল্লা সাহেব! আমি তো এক জায়গায় পড়েছিলাম, ইসলামের ভিত্তি ৬টা। কালিমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ও রুটি।
এ কথা শুনে সে মোল্লা সাহেব তো উত্তেজিত হয়ে গেল। বলেন কি আপনি? যে আপনারা এই পীর ফকীর যারা রয়েছেন, ইলিম নেই কালাম নেই। মনগড়া কথা বলেন। হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি ধৈর্য্যধারণ করলেন। উনি আবার বললেন, যে আমি তো কিতাবে দেখেছি। সে খুব উত্তেজিত হয়ে গেল। যে ষষ্ঠ ইসলামের আবার বেনা কোথায় রয়েছে? কুরআন, হাদীছ, ইজমা, ক্বিয়াসে ফিক্বাহ ফতওয়ায় কোথাও নেই। এই বিষয়টা নিয়ে যখন হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, সেই লোক উত্তেজিত হয়ে চলে গেল। যে এইজন্যই আমি পীর ফকীর যারা রয়েছে এদেরকে পছন্দ করি না, তাদের ইলিম নেই, আমল নেই, যেটা জানেনা সেটা নিয়ে তারা বাড়াবাড়ি করে থাকে। হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি আর কিছুই বললেন না। আরো কয়েকদিন সে আসলো। একইভাবে উনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে একই জবাব দিল। শেষ বারে সে যখন একথা বললো, যে এদের ইলিম নেই, কালাম নেই, তখন সে কুরআন শরীফ উনার একটা আয়াতও তিলাওয়াত করলো, যে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক বলেছেন-
فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَىٰ مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
যে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, যারা যালিম তাদেরকে নছীহত করার পরও যদি তারা না শোনে তাদেরকে কাছে বসোনা। এটা বলে সেই মোল্লা সাহেব উঠে চলে গেল। বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হলো। হঠাৎ সেই মোল্লাহ সাহেব হজ্জে যাবে। আসলো সাক্ষাত করার জন্য। যে আপনার সাথে দেখা করতে আসলাম। আমি এখন তো হজ্জে যাবো, কত দিন থাকি না থাকি। সে যামানায় তো হজ্জে যেতে হলে পায়ে হেটে বা সাওয়ারীতে বাহনে চড়ে যেতে হতো। অনেক সময় লাগতো। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইহুদী ও মুশরিকরা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৫৬)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অকাট্য দলীল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে “গান-বাজনা” হারাম সাব্যস্ত হয়েছে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)