ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৯)
, ১০ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৭ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১০ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সে লোক যখন একথা বললো, উনি পুনরায় তাকে সে কথাটাই জিজ্ঞাসা করলেন, যে আচ্ছা মোল্লা সাহেব আপনি তো চলে যাচ্ছেন এখন এ মাসয়ালাটা কাকে জিজ্ঞাসা করি আপনাকেই আবার জিজ্ঞাসা করার দরকার। এটা একটা তাহক্বীক্ব করার দরকার রয়েছে। ইসলামের ভিত্তি কয়টা? সে তো আবার একই কথা বললো, কেন? আমি তো বলেছি আগেই দলীল আদিল্লাহ দিয়ে ৫টি ইসলামের ভিত্তি। কালিমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত। তো উনি বললেন, আমি তো একটা কিতাবে পড়েছিলাম ইসলামের ভিত্তি ৬টা। সে আবার উত্তেজিত হয়ে গেল। হয়ে বললো, এজন্যই আপনাদের পীর ফকীর যারা রয়েছেন, তাদের কাছে আমি আসি না, তারা যা জানে না সেটা নিয়ে বাড়া বাড়ি করে। তাদের ইলিম নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি একটু মুচকি মুচকি হাসতেছিলেন তার কথা শুনে। সে উত্তেজিত হয়ে এসমস্ত কথা বলে সে চলে গেল, সে আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে-
فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ
চলে গেল উনি আর কিছু বললেন না। সে হজ্জ করলো সাত বার। সাত বছর সে সেখানে অবস্থান করলো। যখন সে মোল্লা সাহেব হজ্জ করে ফিরতেছিল, জাহাজে করে আসতো হিন্দুস্তানে। চারদিন চলার পর জাহাজটা তুফানে পড়ে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়। মোল্লা সাহেব একটা কাঠ ধরে, একটা বড় তক্তা ধরে কোনরকম সমুদ্রের পারে আশ্রয় পেল। সে গিয়ে যখন পারে উঠলো, উঠে দেখলো সেখানে ঝোপ ঝাড় জঙ্গল আর পাহাড় পর্বত। জন মানবহীন, পশু-পাখি নেই, কিছুই নেই। গুহা রয়েছে। পাহাড়-পর্বত। ভয়ানক জায়গা। খাদ্য পানীয় কিছুই নেই। সমুদ্রের পানি লবণাক্ত সেটাও খাওয়া যায় না। একাধারা তিন দিন হয়ে গেল, খাওয়া নেই, পরা নেই। খাদ্য এবং পানীয় এর অভাবে সে মোল্লা সাহেব কাতর। হঠাৎ দেখতে পেল এক ব্যক্তি ঘোষণা করতেছে, যে রুটি! পানি! রুটি! পানি! বলে চিৎকার করে। এক ফেরিওয়ালা এগিয়ে আসছেন, কারো খাদ্য-পানীয়র দরকার রয়েছে কি? ঘোষণা করতে করতে সে মোল্লা সাহেবের সামনে এসে উপস্থিত হয়ে গেল। মোল্লা সাহেব দেখে খুব খুশি হলো। যে বাবা ঠিক আছে আপনি এসেছেন, আমি তো ক্ষুধার্ত তিন দিন ধরে। আমাকে কিছু খাদ্য দিন। ফেরিওয়ালা যিনি উনি বললেন, এটা কি করে সম্ভব যে তোমাকে আমি খাদ্য দিব। আমি তো ব্যবসা করে থাকি। পয়সার বিনিময় ছাড়া তো দিতে পারবো না। সেই মোল্লা সাহেব কুরআন হাদীছ থেকে বুঝালো। যে আমি ৭ বার হজ্জ করেছি। ৭ বার রওযা শরীফ যিয়ারত করেছি। আমি একজন আলিম। কাজেই, আমাকে খাওয়ালে তোমার ফযীলত হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ক্ষুধার্ত, আমি ইন্তিকাল করবো। মানুষকে বাঁচানো ফরয। অনেক দলীল আদিল্লাহ সে পেশ করলো। যিনি ফেরিওয়ালা উনি বললেন, যে দেখুন আপনার এ সমস্ত ব্যাপার তো আমার জানা রয়েছে, তো আপনাকে যদি আমি খাওয়াই তাহলে প্রকৃতপক্ষে আমার পুজি শেষ হয়ে যাবে, আমি নিজেই না খেয়ে থাকবো। এটা কি করে সম্ভব? আমি তো বিনিময় ছাড়া দিতে পারবো না। তো সেই মোল্লা সাহেব বললেন, যে দেখুন আমি তো প্রায় ৭ বার হজ্জ করেছি। আপনি দয়া করে আমার প্রতি একটু ইহসান করুন। তখন সেই যিনি ফেরিওয়ালা উনি বললেন, তাহলে এক কাজ করা যেতে পারে। আপনি ৭ বার হজ্জ করেছেন, তাহলে আপনি ঠিক আছে মুখে বলুন, যে ৭ বার যে হজ্জের ছওয়াব সেটা আপনি আমাকে দিয়ে দিবেন তাহলে আপনাকে আমি রুটি এবং পানি দিব। মোল্লা সাহেব মনে মনে চিন্তা করলো, মুখে বলে দিব তাতে কি হয়েছে, এতে কি আমার নেকি কমে যাবে? আগে খেয়ে নিই পরে ফায়ছালা হবে। ঠিক আছে, রুটির বিনিময়ে আমার ৭ বারের হজ্জ যা রয়েছে, সব আপনাকে দিয়ে দিলাম, আমাকে তবু খাদ্য-পানীয় দান করুন। তখন সেই যিনি ফেরিওয়ালা তিনি খাদ্য-পানীয় দিলেন, সে পেট ভরে খেল। খেয়ে জিজ্ঞাসা করলো আপনি কোথায় থাকেন? বললেন, কাছেই আমি থাকি। মোল্লা সাহেব পিছন পিছনে আসলেন, সেই ফেরিওয়ালা উনি কোথায় থাকেন, জানার জন্য, উনি একটা পাহাড়ের বাঁক ঘুরে উনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। অদৃশ্য হয়ে গেলেন। মোল্লা সাহেব আর ধরতে পারলো না কোথায় উনি গেলেন।
আবার একইভাবে তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। খাদ্য-পানীয়ের কারণে সে ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত শ্রান্ত, কাহিল। ঠিক ঐ সময় আবার সেই ঐ পূর্বের ফেরিওয়ালা যিনি ছিলেন, তিনি রুটি-পানি বলে এগিয়ে এলেন। উনি আবার সেই খাদ্য-পানীয় এনে বললেন, যে কারো খাদ্য-পানীয় দরকার রয়েছে কি? মোল্লা সাহেব বের হয়ে বললেন, যে আমারই খাদ্যের দরকার রয়েছে, পানীয় দরকার রয়েছে, আমি তো ক্ষুধার্ত, পিপাসিত। ৩ দিন ধরে না খাওয়া। সেই ফেরিওয়ালা উনি বললেন, যে কি করে আপনাকে খাওয়া দেওয়া যাবে, আপনার তো পয়সা নেই। আপনি গতবার হজ্জ দিয়ে দিলেন, এবার তাহলে কি দিবেন? ঠিক আছে তাহলে এক কাজ করতে পারেন, আপনার সারা জীবনের যত রোযা রেখেছেন, সেই ছওয়াবটা আমাকে দিয়ে দেন। তাহলে আমি রুটি দিব। মোল্লা সাহেব বললো, ঠিক আছে, আমার সারা জীবনে আমি যা রোযা রেখেছি, এটার যে নেকী সেটা আপনাকে আমি দিয়ে দিলাম। সেই ফেরিওয়ালা যিনি উনি তাকে খাদ্য পানীয় দিয়ে দিলেন। মোল্লা সাহেব খেয়ে তৃপ্ত হলো। ঠিক পূর্বের মত উনি সব উনার যা ছিল সেটা গুটিয়ে নিয়ে রওয়ানা হলেন, সেই ফেরিওয়ালা উনি দ্রুত হাঁটতে লাগলেন। সেই মোল্লা সাহেব পিছন পিছন হাঁটতে লাগলো উনাকে ধরার জন্য। কিন্তু উনি আগের বারের মত আবার একটা বাঁক ঘুরে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। মোল্লা সাহেব আর খুঁজে পেলো না। সে নিরাশ হয়ে ফিরে আসলো। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের সঙ্গে কখনই মুহব্বত করা ও সাদৃশ্য রাখা যাবে না
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অন্যায়কে ঘৃণা না করলে ঈমানদার থাকা যায় না
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তা’বীয ও ঝাড় ফুঁক সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা (৪)
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)