মুসলমানগণ কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ঐক্যবদ্ধ হবেন (১)
, ১৩ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১০ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ৯ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ২৫ আষাঢ়, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বর্তমান দুনিয়ায় মুসলিম জাতি এক গভীর সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। ফিলিস্তিন থেকে কাশ্মীর, সিরিয়া থেকে সুদান যেদিকে তাকানো যায়, দেখা যায় মুসলমানরা নির্যাতিত, নিপীড়িত, ভঙ্গুর ও বিভক্ত। এ সময় মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটি কথার বহুল প্রচার দেখা যাচ্ছে-‘মুসলমানদের আজ ঐক্যবদ্ধ হওয়া একান্ত জরুরী। ’
এই আহ্বান অবশ্যই সঠিক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কিসের ভিত্তিতে এই ঐক্য গঠিত হবে? অনেকে বলে, ‘তাওহীদের ভিত্তিতে ঐক্য হতে হবে। ’ কিন্তু এই ধারণাটি কতটুকু সঠিক এবং শরীয়ত সম্মত? তা নিয়েও পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এই বিষয়েই আলোচনা করা হবে চলমান প্রবন্ধে।
মুসলমানদের ঐক্য কার সাথে হবে। অবশ্যই অপর মুসলমান ভাইয়ের সাথে হতে হবে। কাফিরদের সাথে মুসলমানদের কখনো ঐক্য হতে পারে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মু’মিন ব্যতীত কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (পবিত্র সূরা নিসা : আয়াত শরীফ ১৪৪) অর্থাৎ কাফিরদের সাথে মুসলমানদের কখনোই ঐক্য করা, একাত্বতা প্রকাশ করা যাবে না। অপরদিকে মুসলমানদেরকে যমীন থেকে মিটিয়ে দিতে সমস্ত কাফিররা একতাবদ্ধ। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ
অর্থ: কাফিররা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। (পবিত্র সূরা আনফাল : আয়াত শরীফ ৭৩)
তাহলে কথা হচ্ছে মু’মিন কারা? মু’মিন হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে পবিত্র কালিমা শরীফ-
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই পবিত্র কালিমা শরীফ উনার প্রতি ঈমান আনা, বিশ্বাস স্থাপন করা। কেউ যদি এই পবিত্র কালিমা শরীফ স্বীকার না করে তাহলে সে কখনোই ঈমানদার হতে পারবে না। আবার কেউ যদি এই পবিত্র কালিমা শরীফ উনার প্রথম অংশ (لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ) এতটুকু বিশ্বাস করে। কিন্তু পরবর্তী অংশ (مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) বিশ্বাস না করে তাহলে সে ব্যক্তি ক্বিয়ামত পর্যন্তও ঈমানদার হতে পারবে না। এ বিষয়ে ইজমা হয়ে গেছে। যেমন কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
كَلِمَةُ الْاِيْـمَانِ وَهِـىَ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْاِجْـمَاعِ عَلـٰى اَنَّهٗ لَا يَعْتَدُّ فِـى الْاِسْلَامِ بِـتِلْكَ وَحْدِهَا
অর্থ: কালিমাতুল ঈমান বা সম্মানিত ঈমান মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালিমা শরীফ হচ্ছেন- لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। এই বিষয়ে সমস্ত উম্মতের ইজমা’ হয়েছে যে, কেউ যদি শুধু لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ বলে, তাহলে সে কস্মিনকালেও ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ না বলবে। সুবহানাল্লাহ! (মির‘আতুল মাফাতীহ ৬/৫৮)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন-
وَلَوْ اَنَّ عَبْدًا عَبَدَ اللهَ وَصَدَّقَهٗ فِـىْ كُلِّ شَىْءٍ وَّلَـمْ يَشْهَدْ اَنَّ مُـحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمْ يـَنْتَفِعْ بِشَىْءٍ وَّكَانَ كَافِرًا
অর্থ: যদি কোনো ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করে এবং উনার যাবতীয় বিষয় বিশ্বাস করে, তারপরেও সে এক যাররা পরিমাণ ফায়দা লাভ করতে পারবে না এবং নিঃসন্দেহে সে কাফির; যদি সে সাক্ষ্য না দেয়,
اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে বাগভী ৮/৪৬৩)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্টই বুঝা গেলো, কোনো মানুষ যদি শুধু মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্বীকার করে কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অস্বীকার করে তাহলে সে কখনোই ঈমানদার, মু’মিন, মুসলমান হিসেবে গণ্য হবে না। সে কাফিরই থেকে যাবে। (অসমাপ্ত)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খরচ করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৫)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (১)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিজাতীয় বিধর্মী তথা ইহুদী-নাছারাদেরকে অনুসরণ করা ইসলামী শরীয়তে হারাম-নাজায়িয
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৬)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












