মুসলমানদের বিজ্ঞানে অবদানসমূহ চুরি করে অমুসলিমদের বিজ্ঞানী সাজা নিউটনের চৌর্যবৃত্তির স্বরূপ উন্মোচন: পদার্থবিজ্ঞানের ৩টি গতিসূত্র, ভরবেগ ও জড়তার ধারণা সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেছিলেন ইবনে সীনা ও অন্যান্য মুসলিম বিজ্ঞানীগণ, যেগুলো নিউটন নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছিলো
, ২০ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৮ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৭ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ০৩ আষাঢ়, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করেছে যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো, তার প্রত্যেকটিই মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, স্পেন হস্তচ্যুত হওয়ার আগে ইউরোপের ইতিহাসে কোন খ্রিস্টান বিজ্ঞানীর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কারণটি খুবই সোজা, তা হলো স্পেন হস্তচ্যুত হওয়ার পর সেখানে মুসলমান উনাদের লাইব্রেরীগুলো ইহুদী-খ্রিস্টানদের দখলে আসে। মুসলমান উনাদের কিতাবে যেসব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উল্লেখ করা ছিল, সেগুলো নিজেদের নামে চালিয়ে দিয়েই খ্রিস্টানরা বিজ্ঞানী সেজেছিল।
বিশেষ করে কথিত বিজ্ঞানী আইজাক নিউটনের নামে প্রচলিত প্রত্যেকটি বৈজ্ঞানিক সূত্রই যে পূর্ববর্তী মুসলিম বিজ্ঞানী উনাদের আবিষ্কৃত, তা আধুনিককালের বিভিন্ন গবেষণায় উন্মোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে নিউটনের নামে প্রচলিত ৩টি গতিসূত্র ও গতিবিদ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট ধারণাগুলো সবই পূর্ববর্তী মুসলিম বিজ্ঞানী উনাদের আবিষ্কৃত। নি¤েœ তা আলোচনা করা হলো-
১) গতিবিদ্যার প্রথম সূত্র:
গতিবিদ্যার প্রথম সূত্রটি হচ্ছে, “বাহ্যিক বলপ্রয়োগ ব্যতীত স্থির বস্তু স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তুর গতির কোন পরিবর্তন হবে না। ”
এই সূত্রটি নিউটনের আবিষ্কার বলে দাবি করা হয়ে থাকে। অথচ নিউটনেরও ৬০০ বছর পূর্বে মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সীনা, যিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানেরও জনক হিসেবে পরিচিত, তিনি উনার রচিত ‘ইশারাত ওয়াত তানবীহাত’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন-
“যদি কোন বস্তুতে বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করা হয়, তাহলে তা যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। ”
পূর্বে অ্যারিস্টোটলসহ কথিত গ্রীক বিজ্ঞানীরা মনে করতো যে, কোন বস্তুর ওপর বলপ্রয়োগ ব্যতীত তা গতিশীল থাকতে পারে না। কিন্তু ইবনে সীনা সর্বপ্রথম তাদের এই ভুল ধারণা খ-ন করে উনার কিতাবে উল্লেখ করেছিলেন যে, “কোন গতিশীল বস্তুকে যদি বায়ুশূন্য স্থানে বাতাসের বাধা এবং ঘর্ষণবলের আওতার বাইরে রাখা যায়, তাহলে তার গতির কোন পরিবর্তন ঘটবে না। ”
আধুনিক যুগেও গতির প্রথম সূত্র ব্যাখ্যা করতে ইবনে সীনার প্রণীত এই বায়ুশূন্য কিংবা ঘর্ষণশূন্য স্থানের উদাহরণই শিক্ষার্থীদের নিকট তুলে ধরা হয়। ইবনে সীনা শুধু গতির প্রথম সূত্রই আবিষ্কার করেন নি, তিনি গতিবিদ্যার প্রধান স্তম্ভ ‘জড়তা’ ও ‘ভরবেগ’ এর ধারণাও প্রদান করেছেন। ‘জড়তা’ হচ্ছে বস্তুর অবস্থা অপরিবর্তনীয় থাকার ধর্ম। যে বস্তুর ‘জড়তা’ যতো বেশি, তার অবস্থার পরিবর্তন করতে ততো বেশি বলের প্রয়োজন হবে।
ইবনে সীনা উনার ‘কিতাবুশ শিফা’য় এই ‘জড়তা’র ব্যাখায় উল্লেখ করেছেন যে, বস্তুর ভর ও বেগের গুণফল তথা ‘ভরবেগ’ যতো বেশি হবে, বস্তুর ‘জড়তা’ও ততো বেশি হবে। অর্থাৎ ‘জড়তা’র পরিমাপ হচ্ছে ‘ভরবেগ’। এই ধারণাগুলোই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের মূল ভিত্তি।
২) গতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র:
গতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রে বলা হয়েছে, “বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকেই ঘটে। ”
গতির প্রথম সূত্রে বলা হয়েছে যে, বাহ্যিক বল প্রয়োগ ব্যতীত বস্তুর অবস্থা তথা ‘জড়তা’র কোন পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ উল্টোভাবে বললে, বল প্রয়োগে বস্তুর জড়তার পরিবর্তন হবে। এখন ইবনে সীনা যেহেতু উনার কিতাবে এই ‘জড়তা’র পরিমাপক হিসেবে ‘ভরবেগ’কে উল্লেখ করেছেন, সেহেতু ইবনে সীনা উনার আবিষ্কৃত প্রথম সূত্র ও ভরবেগের ধারণাকে একত্রিত করে বলা যায় যে, “বল প্রয়োগে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন হবে। ”
অর্থাৎ ইবনে সীনা গতির প্রথম সূত্র আবিষ্কারের সাথে সাথে দ্বিতীয় সূত্রটিও আবিষ্কার করেছেন, যার প্রতিফলন আমরা আধুনিক যুগে এসেও পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে দেখতে পাই। আমাদের দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে পদার্থবিজ্ঞানের একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো, “গতির দ্বিতীয় সূত্র থেকে প্রথম সূত্র প্রতিপাদন করো”, যেহেতু ইবনে সীনার আবিষ্কার অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্রের মূলকথা একই। গতির দ্বিতীয় সূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায় অন্যান্য মুসলিম বিজ্ঞানী উনাদের রচিত কিতাবেও। মুসলিম বিজ্ঞানী হিবাতুল্লাহ আবুল বারাকাত আল বাগদাদী নিউটনের ৫৫০ বছর পূর্বে ‘কিতাবুল মু’তাবার’-এ উল্লেখ করেছেন-“বল যতো বেশি প্রয়োগ করা হবে, বস্তু ততো দ্রুত বেগে চলবে এবং ততো কম সময়ে দুরত্ব অতিক্রম করবে। ”
বল প্রয়োগের ফলে সময়ের সাথে বস্তুর বেগের এই বৃদ্ধিকেই পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘ত্বরণ’। অর্থাৎ মুসলিম বিজ্ঞানী উনারাই গতির দ্বিতীয় সূত্রের আবিষ্কারক, যা নিউটন চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছে।
৩) গতিবিদ্যার তৃতীয় সূত্র
গতিবিদ্যার তৃতীয় সূত্রটি হলো, “প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ”
নিউটনের নামে প্রচলিত এ থিওরীর আবিষ্কারকও মুসলিম বিজ্ঞানীগণ। গতির তৃতীয় সূত্রে ক্রিয়ার বিপরীতে সমান প্রতিক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এই ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া একে অপরকে প্রভাবিত করে না। এ বিষয়টি নিউটনের ৫৫০ বছর আগেই উল্লেখ করেছেন মুসলিম বিজ্ঞানী হিবাতুল্লাহ আবুল বারাকাত আল বাগদাদী, উনার রচিত ‘আল মু’তাবার ফিল হিকমাহ’ কিতাবে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, “কুস্তির ময়দানে একে অন্যের উপর বল প্রয়োগ করে। যদি একজনের প্রদত্ত বলের কারণে অপরজন পিছু হটে যায়, তাহলে তার মানে এই নয় যে, দ্বিতীয় ব্যক্তির বলের (অর্থাৎ প্রতিক্রিয়ার) অস্তিত্ব নেই বরং দ্বিতীয় বলটি প্রথম বলের ওপর প্রভাব বিস্তার করে না। ”
গতির তৃতীয় সূত্র ব্যাখা করতে পাঠ্যপুস্তকে একটি সাধারণ উদাহরণ তুলে ধরা হয়, যেখানে দেখানো হয় যে একটি বস্তু একটি দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রতিক্রিয়ার কারণে পেছনে ফিরে আসছে। এই উদাহরণটির উল্লেখ রয়েছে মুসলিম বিজ্ঞানী হাসান ইবনে হাইছাম উনার রচিত ‘আল মানাযির’ (ঞযব ঝপবহবং) কিতাবে, যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, “যদি চলমান বস্তু কোন প্রতিবন্ধকতা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং বলের অস্তিত্ব থাকে তাহলে প্রতিবন্ধকের প্রতিক্রিয়ার কারণে চলমান বস্তুটি সমবেগে বিপরীত দিকে ফিরে আসে। ”
অর্থাৎ আইজাক নিউটন চোর, মিথ্যাবাদী ও প্রতারক, সে আবিষ্কারক নয়। বরং মুসলিম বিজ্ঞানী উনারাই জড়তা, ভরবেগসহ গতিবিদ্যার যাবতীয় ধারণা থেকে শুরু করে গতির ৩টি সূত্রের আবিষ্কারক, যার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান। মূলত পূর্ববর্তী মুসলমান উনারাই বিজ্ঞানের জন্মদাতা, যার ধারাবাহিকতা পরবর্তী মুসলমানরা ধরে রাখতে পারেনি। সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি এ প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক করেন, “বিজ্ঞানের যা কিছু আবিষ্কার করার, যা কিতাব লেখার তা পূর্বের মুসলমানগণই করে গিয়েছেন। পরবর্তীতে কাফির-মুশরিকরা ঐসব কিতাব চুরি করে আবিষ্কারগুলো নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছে, সাথে সাথে মুসলমানদেরকেও খালি করে দিয়ে গিয়েছে। বর্তমান সময়ের মুসলমানদেরও কোন আগ্রহ নেই তাদের পূর্ববর্তীদের ঐসব কিতাবগুলো সংগ্রহ করার এবং মুসলিম সমাজে জ্ঞানচর্চার ধারা ফিরিয়ে আনার। বর্তমান মুসলমানরা হচ্ছে প্রথমত গাফিল, দ্বিতীয়ত অলস এবং তৃতীয়ত দুনিয়াদার। যার ফলে বর্তমান মুসলমানরা কাফিরের গোলামিতে লিপ্ত হয়েছে এবং জ্ঞানচর্চার ধারা থেকে দূরে সরে গিয়েছে। ” নাউযুবিল্লাহ!
-ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ আদনান মারুফ
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
১১ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১১ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশী বেশী মূর্তি তৈরি করতে বলেছে এবং বেশী বেশী পূজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (৪১)
১১ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
স্বচ্ছলতা নিয়ে আম জনতার বিভ্রান্তির অপনোদন
১১ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১১ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১০ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
৩টি বিশেষ নেক কাজ, যা ইন্তেকালের পরও জারি থাকে
০৯ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬৭)
০৯ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (৩)
০৯ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম (১৪)
০৯ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)