বিজ্ঞান
মুসলমানরা আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা: পদার্থ বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান
, ৩০ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৭ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৬ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ১২ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) বিজ্ঞান মুসলমান উনাদেরই অবদান
পদার্থ বিজ্ঞানে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই যার নাম মুবারক আসে উনি হচ্ছেন হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম ইমাম, ইমামুস সাদিস হযরত ইমাম জাফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম (৯৬ হিজরী ১৭ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইছনাইনিল আযীম শরীফ থেকে ১৪৮ হিজরীর ১৪ই রজবুল হারাম ইছনাইনিল আযীম শরীফ)। মূলত: তিনি শুধু পদার্থ বিজ্ঞানই নয় বরং আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার প্রতিটি বিষয়ের তিনি মূলভিত্তি রচনা করেছেন।
পদার্থ ও এর গঠন:
ইমামুস সাদিস হযরত ইমাম জাফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ১২ বছর বয়স মুবারকে অ্যারিস্টোটলের চার মৌলিক পদার্থের তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং সেটাকে ভুল বলে প্রমাণিত করেন। এই চারটি মৌলিক পদার্থের তত্ত্বটি ১০০০ বছর ধরে পদার্থ বিজ্ঞানের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছিলো। উনি বলেন, পৃথিবীও কোন মৌলিক পদার্থ নয় বরং এটি অনেক মৌলিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। এছাড়াও তিনি প্রমাণ করেন যে- পানি, বাতাস এবং আগুন এগুলো একটিও মৌলিক পদার্থ নয় বরং বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের সংমিশ্রণ।
এর প্রায় ১১০০ বছর পর ইউরোপের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে যে, বাতাস কোন মৌলিক পদার্থ নয়। ইমামুস সাদিস হযরত ইমাম জাফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেছিলেন, বাতাসের মধ্যে এমন অনেক মৌলিক পদার্থ আছে যা আমাদের নিঃশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয়। এর প্রায় ১০০০ বছর পর অক্সিজেন আবিষ্কার হওয়ার পর উনার এই তত্ত্বটি মানুষ বুঝতে সক্ষম হয়।
গতিশীলতা:
এছাড়াও তিনি বলেছিলেন, “পৃথিবীর সবকিছুই, এমনকি জড় বস্তুগুলো গতিশীল যদিও আমরা তা দেখতে পাই না। কোন কিছুই গতিবিহীন নয়। ”
স্বচ্ছ ও অস্বচ্ছ বস্তু:
ইমামুস সাদিস হযরত ইমাম জাফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেছিলেন, যে সব বস্তু কঠিন এবং আলো শোষণ করে, সেগুলো অস্বচ্ছ এবং যে সব বস্তু কঠিন এবং আলো প্রতিফলন করে সেগুলো কম বেশী স্বচ্ছ”। যখন উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, একটি অস্বচ্ছ বস্তু কি শোষণ করে? উনি উত্তর দিয়েছিলেন- “তাপ”।
উড্ডয়ণ:
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُسَبِّحُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَالطَّيْرُ صَافَّاتٍ كُلٌّ قَدْ عَلِمَ صَلَاتَهُ وَتَسْبِيحَهُ وَاللهُ عَلِيمٌ بِـمَا يَفْعَلُونَ.
অর্থ: “আপনি কি দেখেননি যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে তারা এবং পাখা বিস্তার করা উড়ন্ত পাখি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার তাসবীহ পাঠ করতে। প্রত্যেকেই উনার ছলাত তাসবীহ পাঠের পদ্ধতি জানে। তারা যা করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। ” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১)
মুসলিম বিজ্ঞানী আব্বাস ইবনে ফিরনাস (১৯৪-২৭৩ হিজরী, ৮১০-৮৮৭ খৃষ্টাব্দ) সর্বপ্রথম পাখার সাহায্যে উড়ার চেষ্টা করেন। উড্ডয়নের ইতিহাসে ইবনে ফিরনাসের গ্লাইডার বিমানকে সর্বপ্রথম প্রচেষ্টা ধরা হয়।
মৌলিক কিতাবাদি:
মুসলিম বিজ্ঞানীগণ পদার্থবিদ্যার উপর অগনিত কিতাব রচনা করেছেন। তন্মধ্যে ইবনে আল-নাদিমের মতে আল-কিন্দি কমপক্ষে ২৬০টি বই লেখেন যার মধ্যে ১২টি বই পদার্থ বিজ্ঞান সম্পর্কে। তিনি তার বই ঙহ জধুং (ফব জধফররং)-এ তাপীয় অবস্থা (ঐবধঃরহম, ঈড়ড়ষরহম, ঠরব,ি অংঃৎধষ ওহভষঁবহপব), শীতলীকরণ, দর্শন, নক্ষত্রের প্রভাব ইত্যাদিকে জ্যামিতিক পদ্ধতির সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছিলেন। জার্মান পদার্থবিদ রজার বেকন তার জ্যামিতিক এবং শরীরবৃত্তীয় আলোকবিজ্ঞানের উপর লিখিত বইগুলো থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছিলো।
বলবিদ্যা, মহাকর্ষ, অভিকর্ষ:
হিজরী ৪র্থ শতকে (খৃষ্টাব্দ ১০ম শতকে) বিজ্ঞানী ইবনুল হাইছাম পদার্থ বিজ্ঞানের অনেক মৌলিক সূত্র ও তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। যেগুলোকে বর্তমানে নিউটনের অবদান হিসেবে বলা হয়। যেমন তিনি রিসালা ফিল-মাকান (ঞৎবধঃরংব ড়হ চষধপব) গ্রন্থে বস্তুর গতির (জড়তা) সূত্র আলোচনা করেন। যা মূলত নিউটনের গতির ১ম স্ত্রূ নামে পরিচিত। তিনি ভরবেগের ধারনা উপস্থাপন করেন যা নিউটনের গতির ২য় সূত্রের মূল তত্ত্ব।
তিনি মাকালা ফিল-কারাসতুন (ঃৎবধঃরংব ড়হ পবহঃৎবং ড়ভ মৎধারঃু) গ্রন্থে, পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে বস্তুর দূরত্ব পরিবর্তনের সাথে সাথে বস্তুর ওজন পরিবর্তনের একটি সূত্র বর্ণনা করেন। এটিই মূলত মধ্যাকর্ষণ শক্তি যা আমাদেরকে নিউটনের অবদান বলা হয়। এছাড়া তিনি মিযান আল হিকমাহ (ইধষধহপব ড়ভ ডরংফড়স) গ্রন্থে বিভিন্ন ভরের মধ্যে আকর্ষণের সূত্র আলোচনা করেন যা মূলত মহাকর্ষ শক্তি নামে পরিচিত।
আল-কানুন আল মাসুদী:
হিজরী ৪র্থ শতকের বিজ্ঞানী আল বিরুনীকে জিওডেসির জনক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি পৃথিবীর পরিধি সঠিকভাবে পরিমাপের জন্য একটি জটিল জিওডিক সমীকরণ সমাধান করেন। তিনি উনার বিখ্যাত এনসাইক্লোপেডিয়া “কিতাব আল-কানুন আল মাসুদী” (গধংঁফরপ ঈধহড়হ)-তে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ ৬,৩৩৯.৯ কি.মি. বলে উল্লেখ করেন যা পৃথিবীর আধুনিক পরিমাপকৃত ব্যাসার্ধ (৬,৩৫৯.৭ কি.মি.) থেকে মাত্র ১৬.৮ কি.মি. কম।
তিনি ত্রিকোনমিতিক গণনার সাহায্যে পৃথিবীর পরিধি অধিকতর সঠিকভাবে পরিমাপের জন্য একটি নতুন পদ্ধতি বের করেন। তিনি পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ব্যাখ্যা করেন ‘সব জিনিসই পৃথিবীর কেন্দ্রের প্রতি আকর্ষিত’।
তিনিই আবিষ্কার করেন যে, আকাশের বস্তুগুলোর মধ্যেও অভিকর্ষ শক্তি রয়েছে। তিনি প্রথম অনুভব করেন ত্বরণ এবং পরিবর্তনশীল গতি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তিনি “কিতাব আল-কানুন আল মাসুদী”তে সূর্য, চন্দ্র এবং গ্রহের গতির বিভিন্ন সূত্র সম্পর্কে আলোচনা করেন। এছাড়া তিনি উনার আরেকটি প্রসিদ্ধ বই আল আথহার আল বাকিয়াতে (ধষ-অঃযধৎ ধষ-ইধয়রধ) পৃথিবীর ঘূর্ণন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বিভিন্ন স্থানের অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের সঠিক তথ্য উল্লেখ করেন।
এছাড়া তিনি কিতাব আল জহির (ইড়ড়শ ড়ভ চৎবপরড়ঁং ঝঃড়হবং) গ্রন্থে ১৮টি বিভিন্ন পাথরের ঘনত্ব সঠিকভাবে পরিমাপ করেন।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুসলমানরা আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা: কৃষিতে মুসলমানদের অবদান
২৭ আগস্ট, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমানদের সমস্ত কিছু চুরি করেই কাফির-মুশরিকরা আজ বিজ্ঞানী সেজেছে
২২ আগস্ট, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলিম স্বর্ণালী যুগের লাইব্রেরির ধরণ ও পরিচালনা
২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম স্বর্ণালী যুগের লাইব্রেরির ধরণ ও পরিচালনা
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আর্দ্রতার সাথে গরম ঠান্ডা অনুভূতি
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম স্বর্ণালী যুগের লাইব্রেরির ধরণ ও পরিচালনা
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্বিতীয় আল হাকামের গ্রন্থাগার
২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ প্রভূত ক্ষেত্রে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করণ (২)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ প্রভূত ক্ষেত্রে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করণ (১)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত মুকুটস্বরূপ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কায়রোর ‘দারুল হিকমাহ’
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত মুকুটস্বরূপ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












