সুওয়াল-জাওয়াব
যাকাত
, ২৬ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৩ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ১১ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৬ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সূরা তওবা শরীফ ৬০নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত “ওয়াল মুয়াল্লাফাতি ক্বুলূবুহুম” আয়াতাংশের বরাত দিয়ে কেউ কেউ বলে থাকে যে, যেসব অমুসলিম দ্বীন ইসলামের প্রতি আগ্রহী তাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে। এ বক্তব্য কতটুকু শুদ্ধ?
জাওয়াব:
উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধ হয়েছে। কেননা যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি ফরয ও ওয়াজিব ছদক্বা, কোন অমুসলিমকে দেয়া জায়িয নেই। আর সূরা তওবা শরীফ উনার উক্ত আয়াতাংশ মুবারক উনার অর্থ ‘মন জয় করার জন্য যাদেরকে ছদক্বা প্রদান করা হবে’ অর্থাৎ এর দ্বারা নও মুসলিম উদ্দেশ্য; যারা অন্য ধর্ম পরিত্যাগ করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। এ সমস্ত অভাবগ্রস্ত নও মুসলিমদেরকে সাহায্য করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি সূদৃঢ় রাখার কাজে সাহায্য করা। মোটকথা, আয়াতে উল্লেখিত হুকুমটি শুধুমাত্র মুসলমান মুওয়াল্লাফাতিল ক্বুলূব উনাদের সাথে সম্পৃক্ত। অমুসলিম মুওয়াল্লাফাতিল ক্বুলূব উক্ত আয়াত শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত নয়। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো কোন অমুসলিমকে যাকাত প্রদান করেননি। বরং অমুসলিমদের মধ্যে যেসকল ব্যক্তি অচিরেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করবেন বলে তিনি মনে করেছিলেন এমন ব্যক্তিদেরকে তিনি মালে গণীমতের খুমুস (এক পঞ্চমাংশ) অংশ থেকে কিছু প্রদান করেছিলেন। যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য নির্দিষ্ট ছিল। বায়হাক্বী এবং ইবনে কাছীরও ঐ কথা বলেছেন।
অতএব প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যে দান করেছিলেন তা সম্মানিত যাকাতের সম্পদ ছিল না বরং তা ছিল গণিমতের মালের অন্তর্ভুক্ত।
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই যখন যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি ফরয ওয়াজিব ছদকা থেকে কোন অমুসলিমকে দেয়া হয়নি তখন পরবর্তী সময়ে এবং বর্তমান সময়ে যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে বিজয়ী করেছেন তখন অমুসলিমদেরকে ছদকা দানের মাধ্যমে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি আকৃষ্ট করার প্রয়োজন মোটেও নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
الحق من ربكم فمن شاء فليؤمن ومن شاء فليكفر
অর্থ: তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে সত্য (দ্বীন ইসলাম) এসেছে। এখন যার ইচ্ছা হয় সে গ্রহণ করবে আর যার ইচ্ছা হয় গ্রহণ করবে না।”
এ আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতের সময় উনার কাছে হযরত উয়াইনিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আকরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা একটি জমি চেয়েছিলেন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উনাদেরকে জমির দলীল লিখে দিলেন। কিন্তু হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত দলীলখানা হাতে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এরকম দান করতেন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপরে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। এখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং মুসলমান উনাদেরকে করেছেন অমুখাপেক্ষী। এখন যদি আপনারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে কায়িম থাকেন তবে উত্তম। অন্যথায় ফায়সালা হবে তলোয়ারের মাধ্যমে। হযরত উয়াইনিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আকরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা তখন বললেন, হে খলীফাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! খলীফা কে? আপনি না তিনি? হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তিনি যদি ইচ্ছা করেন তিনিই খলীফা। এ কথা বলে তিনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সিদ্ধান্তকেই বহাল রাখেন। কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা এই সিদ্ধান্তটিকে অস্বীকার করেননি।
প্রতিভাত হলো, কোন অমুসলিমকে যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি কোন ফরয ওয়াজিব ছদকা তো দেয়া যাবেইনা এমনকি বর্তমানে কোন রকমেরই দান খয়রাত দেয়াই জায়িয নেই। (সমূহ ফিক্বাহ ও ফতওয়া শরীফের কিতাব দ্রষ্টব্য। এছাড়া তাফসীর শরীফেও বর্ণিত রয়েছে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৪)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৬)
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৫)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পুরুষ-মহিলা নামায আদায়ের ছহীহ পদ্ধতি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৪)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১০)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ডন
২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












