সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার মহামূল্যবান নছীহত মুবারক:
শয়তান মানুষকে নেক ছূরতে ধোঁকা দেয়
, ০৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৪ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৩ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ২০ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
أَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ
অর্থ: তোমরা কি কিতাব উনার কিছু অংশ মানবে, আর কিছু অস্বীকার করবে? (পবিত্র সূরা বাক্বারা : আায়াত শরীফ-৮৫)
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
اُدْخُلُوْا فِى السِّلْمِ كَافَّةً
অর্থ: তোমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো।
(পবিত্র সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ-২০৮)
উপরোক্ত মহাসম্মানিত আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানদারদেরকে মাথার তালু থেকে পায়ের তলা এবং হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত অর্থাৎ দায়েমীভাবে সম্মানিত শরীয়ত মোতাবেক চলার জন্য নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। উনার এই নির্দেশ মুবারক পালন করা সকলের জন্য ফরয। কেননা, ঈমানদার কখনও তার নিজের মত অনুযায়ী চলতে পারে না। তাহলে সে কখনোই ঈমানদার থাকতে পারবেনা।
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنِ الْمِقْدَادِ ابْنِ مَعْدِيْكَرَبَ رَضِىَ اللّهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَاْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَنْفَعُ فِيْهِ اِلَّا الدِّيْنَارُ وَالدِّرْهَمُ . (رواه احمد)
অর্থ: হযরত মিক¦দাদ ইবনে মা’দীকারাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আখেরী যামানায় এমন একটা সময় আসবে, যখন মানুষ দিনার-দিরহাম ছাড়া ফায়দা লাভ করতে পারবে না। ”
বর্তমান যামানায় এই মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার বরাত দিয়ে মানুষ নেক ছূরতে ইবলিসের ধোঁকায় পড়ে দিনার-দিরহাম হাছিলের জন্য দুনিয়ার দিকে রুজু হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম অমান্য করে মহামূল্যবান ঈমান বিক্রি করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
কিভাবে দুনিয়ার দিকে রুজু হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম অমান্য করে মহামূল্যবান ঈমান বিক্রি করে দিচ্ছে সে বিষয়টি ফিকিরের জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে নিম্নে তুলে ধরা হলো:
যেমন: মানুষ মনে করে দিনার-দিরহাম তথা টাকা-পয়সা উপার্জন করে দ্বীন-ইসলাম পালন করবে অর্থাৎ নেক কাজে খরচ করবে। অথচ নেক ছুরতে ইবলিস তাকে ধোঁকা দিচ্ছে, যে বিষয়টি সে উপলব্ধি করতে পারছে না।
আসলে, হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ উনাদের নেক ছোহবত ইখতিয়ার ব্যতীত ইবলিসের এই ধোঁকা বুঝা বা উপলব্ধি করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। এজন্য সম্মানিত দ্বীন-ইসলাম উনার যারা ধারক-বাহক ছিলেন উনাদের দিকে লক্ষ্য করলে বিষয়গুলি উপলব্ধি করা এবং ইবরত-নছিহত হাছিল করা সহজ-সম্ভব হবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সার্বিক বিষয়ে হাক্বীক্বী উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তথা শিক্ষাদানকারী। সেই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিনি মূল মধ্যমণি সইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনি এবং উনার পরিবার-পরিজন সেই মহাসম্মানিত কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করে সমস্ত কুল-কায়িনাতবাসীকে শিক্ষা দিয়ে গেলেন কিভাবে সম্মানিত দ্বীন-ইসলাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে, কোন অবস্থাতেই বাতিলের কাছে মাথা নত করা যাবে না এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম থেকে পিছপা হওয়া যাবে না, সর্বাবস্থায় হক্বের উপর ইস্তেকামত থাকতে হবে। এই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের এই কারবালার প্রান্তরে সুমহান নজীরবিহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দ্বীন ইসলাম লাভ করেছি তথা আমাদেরকে উনারা হাদিয়া করে গিয়েছেন। তাই এই গোটা কুল কায়িনাতবাসী আমরা যারা নিজেদের ঈমানদার হিসেবে দাবি করি, মুসলমান হিসেবে দাবী করে থাকি, আমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে উনাদের এই সুমহান আদর্শ মুবারককে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা। তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা যাবে। আরো নছিহত হাছিলের লক্ষ্যে আমরা যদি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দিকে লক্ষ্য করি যারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিটি বিষয় মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে লাভ করেছেন এবং পরবর্তীতে তাবেঈ-তাবেঈন, ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের মাধ্যমে সমস্ত মুসলিম উম্মাহ এই নিয়ামত মুবারক লাভ করেছেন। সেই মহাসম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ও মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উনারা প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি কথা, রীতি-নীতি, তর্জ-ত্বরিকায় দায়েমীভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাব্বত মুবারকে গরক থেকে গোলামীতে আন্জাম দিয়েছেন। যার ফলে উনারা যমীনে থাকতেই “মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের উপর সন্তুষ্ট” এই সুসংবাদ মুবারক প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এখানে প্রত্যেকের জন্য বিষয়টি ফিকিরের, এই সুসংবাদ প্রাপ্ত মহাসম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উনারা ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে সর্বশ্রেষ্ট উম্মত এবং উনাদের যুগ ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ। মূলত: উনাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তারাই হিদায়েত প্রাপ্ত হয়ে যাবে।
সুতরাং আমাদের সকলের জন্য ইবরত-নছিহতের বিষয় হচ্ছে, উনারা কি কোন দুনিয়াবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ অর্জন করেছিলেন নাকি দিনার-দিরহাম হাছিলের জন্য কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরী নিয়েছিলেন? এমনকি তাবিঈ-তাবেঈন, ইমাম-মুজতাহিদ উনারাও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সুক্ষ¥াতিসুক্ষ¥ অনুসরণ করেছেন। যার ফলে উনাদের জীবনী মুবারকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, উনারা দুনিয়াবী সনদ লাভের জন্য কোন প্রতিষ্ঠানে পড়া-শুনা করেছেন এবং দিনার-দিরহাম তথা টাকা-পয়সা হাছিল করার জন্য কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেছেন। বরং উনারা সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক, তাওয়াল্লুক-নিসবত মুবারক, কুরবত মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে মশগুল থাকতেন। যার কারণে উনারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কালেই সম্মানিত। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা হুজুরাত শরীফ উনার ১৩নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقَاكُمْ
অর্থ মুবারক: নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী পরহেযগার সেই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট বেশি সম্মানিত।
এই মহাসম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইবরত-নছিহতের বিষয় হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সম্মানিত হতে হলে তাক্বওয়া অর্জন করতে হবে। তাক্বওয়া অর্জন করার জন্য রুহানী কুওওয়াত হাছিল করা আবশ্যক।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












