সমসাময়িক সকল ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সকলের মুখে সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আ’যম, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রশংসা মুবারক
, ২৪ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২১ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

মানুষ উনাকে প্রশ্ন করলো, “হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী! আপনি কখন থেকে বুঝতে পারলেন যে, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু? তিনি বললেন, “দশ বৎসর বয়স থেকে। যখন আমি মাদরাসায় ইলিম হাছিলের জন্য যেতাম, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সারি আমাকে বেষ্টন করে নিতেন। মাদরাসায় পৌঁছলে ফেরেশতারা মাদরাসায় ছোট ছোট বাচ্চাদিগকে উদ্দেশ্য করে বলতেন, “হে বাচ্চারা! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীর জন্য স্বতন্ত্র জায়গা করে দাও। ”
তিনি বলেন, “একবার আমি এমন এক লোককে দেখলাম, যাকে ইতিপূর্বে আর কখনো দেখিনি। সে লোক এক হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন- কে এই শিশু? যাঁকে আপনি এত তা’যীম-তাকরীম করলেন? প্রত্যুত্তরে হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এই ভাগ্যবান শিশু, মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী। মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে যার একদিন উচ্চ মর্তবা হবে। ”
সে ব্যক্তি বললো, “কালক্রমে এই ভাগ্যবান শিশু পর্দা ছিন্ন ব্যতিরেকেই অশেষ ক্ষমতার অধিকারী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অধিক নৈকট্যলাভে ধন্য হবেন। ” হযরত গাউসুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “চল্লিশ বৎসর পর আমি বুঝতে পারলাম যে, ঐ ব্যক্তি তিনি উনার সময়কালের আবদাল ছিলেন। ”
তিনি আরো বলেন, “যখন আমি ছোট ছিলাম, একদিন পবিত্র আ’রাফার দিন শহর থেকে বাইরে আসলাম এবং জমিন চাষের জন্য একটি গাভী নিয়ে মাঠের দিকে বেরিয়ে গেলাম। এমন সময় আমার গাভীটি পশ্চাদমুখী হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো- “হে হযরত আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি! এ কাজের জন্য আপনাকে সৃষ্টি করা হয়নি এবং আপনাকে এ কাজের জন্য তাক্বীদও করা হয়নি। ” এ আওয়াজ শুনে আমি ভয়ে ভীত অবস্থায় বাড়ী ফিরলাম এবং বাড়ীর ছাদের উপরে উঠে আ’রাফাতের বিশাল জনতার ভীড় দেখতে লাগলাম। তারপর আমার সম্মানিত মাতার নিকট এসে বললাম, “আপনি আমাকে দ্বীনি ইলিম শিক্ষার এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবত ও সাক্ষাত লাভের জন্য বাগদাদ যাবার অনুমতি প্রদান করুন। ”
তিনি আরো বলেন, “ছোটবেলা একবার যখন আমি আমার সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলার ইচ্ছা করলাম, তখন এই আওয়াজ শুনতে পেতাম, “হে মুবারকময় শিশু! আমার নিকট আসুন। ” এ আওয়াজ শুনামাত্র আমি ভয় পেয়ে যেতাম এবং সাথে সাথে আমার আম্মাজানের কোলে এসে নিজেকে লুকিয়ে রাখতাম। নীরব-নির্জনে একাকী অবস্থানকালে আমার মনে হয়, আমি যেন এখনো সেই আওয়াজ শুনতে পাই। ”
হযরত শায়খ আলী বিন হাইতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন যে, আমি আমার যামানায় উনার চাইতে এত অধিক কারামত সম্পন্ন বুযুর্গ দেখিনি। যখনই কারো ইচ্ছা হতো, সে উনার কারামত দেখতে পেতো। এ কারামতগুলো কখনো হযরত গাউসুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজের মধ্যে, কখনো বা উনার দ্বারা প্রকাশ পেতো।
হযরত শায়খ আবু মাসউদ ও আহমদ বিন আবি বকর খুযমী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং শায়খ আবু ওমর যারনাফনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত শায়খ আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কারামতগুলো ঐ মালার মত, যার মধ্যে মণি-মুক্তাগুলো ক্রমানুযায়ী সাজানো থাকে। আমাদের মধ্যে কারো যদি অভিপ্রায় হতো উনার কারামতগুলো সংখ্যা হিসেবে গণনা করার ব্যাপারে, তবে তা সম্ভব ছিল।
ইমাম আব্দুল্লাহ ইয়াফেয়ীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা মতে- হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কারামত এত অধিক সংখ্যক যে, যা গণনার বাইরে চলে গেছে এবং সকলেরই এ ব্যাপারে কম-বেশি জ্ঞান বা ইলিম আছে যে, উনার যামানায় পৃথিবীর আর কোন ওলীআল্লাহ উনার মধ্যে এত বেশি কারামত প্রকাশ পায়নি।
অর্থাৎ উনার দ্বারা অগণিত, সীমাহীন কারামতসমূহ জাহির হয়েছে। মাখলুকাতের জাহির-বাতিনের তাসারুফ করা, জ্বিন-ইনসানের মধ্যে হুকুমত জারী করা, মানুষের গোপন গুপ্তভেদ রহস্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া, ফেরেশতা জগতের গুপ্ত রহস্য, আলমে জাবারুতের মূল হাক্বীক্বত এবং আলমে লাহুতের গুপ্তভেদ সম্পর্কিত ইলিম মহান আল্লাহ পাক উনাকে দান করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে যুগের বিবিধ ঘটনা, সমস্যার সমাধান, পরিবর্তন ও তৈরি করার ব্যাপারে অন্ধ ঘুমন্তদেরকে জাগানো, অসুস্থদের সুস্থতা, রোগীদের সেবা দান, সালেকীনদের মাকামসমূহ অতিক্রমে সহায়তা করা, আসমান-যমীনে নির্দেশাবলী জারি রাখা, পানিতে হাটা, বাতাসে উড়া, মানুষের সন্দেহ, ধারণায় পরিবর্তন, বস্তুর স্বভাব বদলিয়ে দেয়া, গায়েব হতে হাযত প্রার্থনা, বর্তমান, ভবিষ্যতের সম্পর্কে অগ্রিম সংবাদ প্রদান এবং এ ধরণের অন্য আরো কারামতসমূহ, যা কিনা ক্রমান্বয়ে সবসময় সাধারণ ও খাছ লোকদের মধ্যে উনার ইচ্ছা এরাদা অনুযায়ী যে প্রকাশ পেতো, তা নয় বরং যা অকাট্য চির সত্য, তা যেভাবে প্রকাশ হবার কথা সেভাবেই হয়েছে। উনার উল্লেখযোগ্য কারামতগুলোর বর্ণনা ও হেকায়েত এত বেশি প্রসিদ্ধ যে জবান ও কলম এ ব্যাপারে বর্ণনা করতে অক্ষম, অপারগ।
মাশায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহিম এ সম্বন্ধে অনেক কিতাব লিখেছেন। কিন্তু হযরত ইমাম আল্লামা আব্দুল্লাহ ইয়ামেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব এদিক দিয়ে সবচেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য। হযরত আম্বিয়া আলাইহিস সালাম থেকে মুজি’যা মুবারকসমূহ এবং আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকে কারামত প্রকাশ হয়ে থাকে। কিন্তু উলামাদের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী পীর-বুযুর্গ এবং উঁচুস্তরের ওলী হওয়ার জন্য শরীয়ত উনার সুক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুসরণ এবং মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ণ তাবেদারী করা শর্ত। কেবল সাধারণ লোকেরাই কারামত দেখে ওলীআল্লাহগণ উনাদেরকে চিনে, বিশেষ খাছ উনারা, উনারা এর হিতে বিপরীত। হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আসল বুযুর্গী মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ণ আনুগত্যতার মাঝে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হওয়ার মধ্যেই নিহিত ছিল।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৭)
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র শবে বরাত উনার রোযা নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১১)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১১)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ঈমান বা আক্বায়িদ সম্পর্কিত পবিত্র কালিমা শরীফসমূহ
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই শবে বরাত প্রমাণিত (৪)
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)