সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (২৭)
, ২৭ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ০৪ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ২০ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত অভিযানে কুপোকাত হলো পারস্য শাসক রুস্তম পাহলোয়ান
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারককালে পারস্য বিজয়ের জন্য যে অভিযান পরিচালিত হয়, উনার অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন দ্বীন ইসলামের বীর সিপাহসালার হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সে সময় পারস্য শাসক ছিল ইয়াযদ্গিরদ এবং তার সেনাপ্রধান ছিল কথিত মহাবীর রুস্তম। হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজ বাহিনী নিয়ে রওয়ানা হলেন এবং কাদেসিয়া নামক স্থানে অবস্থান নিলেন। সেখান থেকে তিনি হযরত আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম উনার দিক নির্দেশনা মুতাবিক পারস্য শাসক এবং তার সেনাপ্রধান রুস্তমের কাছে সম্মানিত ইসলামের আহ্বান নিয়ে একটি প্রতিনিধি দলকে পাঠালেন।
শাসক পূর্ব থেকে নিজের শান শওকত প্রভাব প্রতিপত্তি এবং শক্তিমত্তার দ্বারা প্রতিনিধি দলকে প্রভাবান্বিত করতে চাইলো। এমনকি অনেক ধন-সম্পদের লোভ দেখিয়ে বললো, আপনারা এসব নিয়ে স্বদেশে চলে যান। মুসলিম প্রতিনিধি দল শাসকের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে বললেন, আপনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করুন অথবা জিযিয়া মেনে নিন, নতুবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
পারস্য শাসক এমন দ্ব্যর্থহীন প্রস্তাব শুনে গোস্সায় ফেটে পড়লো। এবং বললো, আমি আপনাদের কোন শর্তই মানি না, আমার সেনাপ্রধান রুস্তম পাহলোয়ান আসছে, সে আপনাদের সকলকে কাদেসিয়ার রণাঙ্গনে পরিখার মধ্যে দাফন করে দিবে। নাঊযুবিল্লাহ!
মুসলিম প্রতিনিধি দল ফিরে এসে হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বিস্তারিত খুলে বললে তিনি মুসলিম বাহিনীকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন এবং অত্যন্ত জালাময়ী খুৎবা প্রদান করলেন। উনার ঈমানদীপ্ত খুৎবায় মুসলিম বাহিনীর ঈমানী কুওওয়াত প্রলয় আকার ধারণ করলো।
‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুসলিম বাহিনী বীরদর্পে পারস্য বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিন্তু পারস্য বাহিনী এত অধিক হাতির পাল নিয়ে এসেছে যাতে করে প্রথম দিন মুসলিম বাহিনীর যথেষ্ট ক্ষতি সাধন হয়েছিল। পরদিন হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নির্দেশনা মুতাবিক মুসলিম বাহিনী বিশেষ হিকমত অবলম্বন করলেন। মুসলিম বাহিনীর উটগুলোকে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলা হলো। এতে করে উটগুলো হাতির চেয়ে বিশাল বড় আজব ভয়ঙ্কর আকৃতিতে রূপান্তরিত হলো। পারস্য বাহিনীর সমুদয় হাতিগুলো মুসলিম বাহিনীর মাঝে এমন আজব প্রাণী দেখে প্রাণভয়ে দিকবিদিক পালাতে থাকে। তৃতীয় দিন হস্তিবাহিনী নিয়ে পারস্য বাহিনী ফের অগ্রসর হয়। এদিন হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঘোষণা করে দিলেন, ‘যে করেই হোক এই হস্তিবাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। তাহলেই বিজয়ের পতাকা আমাদের হাতে এসে পৌঁছবে। ’ তিনি বিশিষ্ট তিন বীর মুজাহিদকে এ কাজের জন্য বিশেষভাবে নিযুক্ত করলেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে উনাদেরই একজন বীর বিক্রমে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে শ্বেতবর্ণের একটি হাতির শুঁড়ের উপর এমনভাবে তরবারীর আঘাত হানলেন যাতে হাতিটির শুঁড় ছিন্ন হয়ে গেল। বিকট আর্তনাদ করে হাতিটি পলায়ন করলো। তার দেখাদেখি বাকি সব হাতিগুলো একযোগে পালিয়ে গেল। এতে মুসলিম বাহিনীর শক্তি নব উদ্যমে জেগে উঠলো। মুজাহিদদের মুহুর্মূহু তাকবীর ধ্বনিতে কাদেসিয়ার রণপ্রান্তর কেঁপে উঠলো। পারস্য পাহলোয়ান রুস্তম মোকাবিলা করতে গিয়ে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করতে লাগলো। এ সময় সে একটি পরিখার মধ্যে লাফিয়ে পড়লো, যাতে সাঁতরিয়ে পালাতে পারে। কিন্তু একজন হাল্কা পাতলা মুজাহিদ লাফিয়ে পড়ে রুস্তমের পা টানতে টানতে উঠিয়ে নিলেন এবং তরবারীর প্রচ- আঘাতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করলেন। রুস্তমের মৃত্যুর সাথে সাথে পারস্য বাহিনী পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে পালাতে শুরু করলো। অবশেষে কাদেসিয়ার ময়দানে পারস্য শাসকের অহংকার, বাহাদুরী শ্রেষ্ঠত্বের কবর রচিত হলো। সুবহানাল্লাহ!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
মহান আল্লাহ পাক উনার কি কুদরত! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অপূর্ব ইহসান! পারস্য শাসক তার দম্ভ রুস্তমের মাধ্যমে চেয়েছিল মুসলিম বাহিনীকে কাদেসিয়ার পরীখায় পরাজিত করতে। অথচ মুসলমানদের হাতেই তার সকল শক্তির সমাপ্তি ঘটলো। এমন ঘটনা প্রসঙ্গেই পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘তাদের দুঃখে না আকাশ কেঁদেছে, না পৃথিবী কেঁদেছে। আর তাদের কোন সুযোগ দেয়া হয়নি। ’ (পবিত্র সূরা দুখান শরীফ)
বিজয়ী বেশে পারস্য শাসকের রাজপ্রাসাদে প্রবেশের মুহূর্তে হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চক্ষু মুবারক থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে এবং উচ্চারিত হচ্ছিল কুরআন শরীফের উপরোক্ত আয়াত শরীফটি। এভাবেই তিনি অনাগত কালের উম্মাহর জন্য রেখে যান দ্বীন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব, খলীফার আনুগত্য, সুশৃঙ্খল বাহিনীর দৃষ্টান্ত এবং বাতিলের প্রতিরোধে ঈমানদীপ্ত নির্ভীকতা। আজ বিশ্বব্যাপী ৩০০ কোটিরও বেশি মুসলিম উম্মাহ থাকা সত্ত্বেও তথাকথিত মহাসন্ত্রাসী ইহুদী নাছারাদের চলছে একচেটিয়া কর্তৃত্ব। যখন তখন তারা নানা অজুহাতে বিভিন্ন মুসলিম দেশের উপর অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন, দমন পীড়ন হত্যা সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে বাধা দেয়ার জন্য, প্রতিরোধের নিমিত্তে প্রয়োজন হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার মত ঈমানদীপ্ত মুসলমান। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনিই পারেন ছাহাবা রঙ্গের এমন ঈমানদীপ্ত মুসলমান জাগাতে। আর এ কারণেই প্রয়োজন মুসলিম উম্মাহর জন্য উনার বরকতময় নেক ছোহবত। মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকেই কবুল করুন। আমীন।
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












