সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (২)
, ২৮শে জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৩ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَانَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوْا.
অর্থ: “তোমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের জন্য যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা তোমরা আঁকড়িয়ে ধরো। আর তোমাদেরকে যা থেকে বারণ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো। ” (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَةْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখবে, সে ব্যক্তি তাদেরই দলভুক্ত হবে। অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। (আবূ দাঊদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল শরীফ)
আবার হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
كُلُّ مُـحْدَثَتٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
অর্থ: “প্রত্যেক নতুন কথাই বিদয়াত (যদিও হাসানা হয়। ) আর প্রত্যেক বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ গোমরাহী। ” (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
তাই পোশাকের ব্যাপারে দ্বীন ইসলাম উনার যেমন নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে তেমনি এ ব্যাপারে কাফির-মুশরিকদেরও অনুসরণ করা যাবে না আবার বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহরও উৎপত্তি ঘটানো যাবে না।
ক্বমীছ বা কোর্তা বা জামা:
“তিরমিযী শরীফ, “আবূ দাউদ শরীফ, শামায়িলুত তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ” উনার ‘লিবাস’ অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتنَا السادِسَة عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ اَحَبُّ الثِّيَابِ اِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْقَمِيْصَ.
অর্থ: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় পোশাক ছিল ক্বমীছ বা কোর্তা। ”
‘আবূ দাঊদ শরীফ’ উনার বিশ্ববিখ্যাত শরাহ ‘আউনুল মা’বূদ’ উনার ‘কিতাবুল লিবাস’ উনার ‘ক্বমীছ বা কোর্তার আলোচনা’ পর্বে উল্লেখ রয়েছে-
وجه احبية القميص اليه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انه استر للاعضاء عن الازار والرداء ولانه اقل مؤنة واخف على البدن ولابسه اكثر تواصعا.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্বমীছ বা কোর্তা সবচেয়ে পছন্দনীয় হওয়ার কারণ হলো ইযার বা লুঙ্গি ও রিদা বা চাদর অপেক্ষা ক্বমীছ সতরকে পরিপূর্ণভাবে ঢাকে। অথচ ক্বমীছ অল্প খরচে হয়, শরীরের জন্য হালকা এবং এটা পরিধানে অধিক বিনয়-নম্রতা প্রকাশ পায়। ” (অনুরূপ ‘জামউল ওয়াসায়িল’ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে)
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় হতে বুঝা যায় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সতরকে আবৃত করার জন্য ক্বমীছ মুবারক পরিধান করেছেন। অর্থাৎ উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সতরকে আবৃত করার জন্য ক্বমীছ পরিধান করা সুন্নত। আর যেহেতু কাফির-মুশরিকদের অনুসরণ করা হারাম তাই সতরকে আবৃত করার জন্য শার্ট বা এ জাতীয় পোশাক পরিধান করাও হারাম।
‘ক্বমীছ’ উনার বৈশিষ্ট্য:
আস্তিন: ‘ক্বমীছ’ আস্তিন বিশিষ্ট হওয়া খাছ সুন্নত। যা ঢিলে-ঢালা ও কব্জি পর্যন্ত বিলম্বিত হওয়াও খাছ সুন্নত। আর আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত বিলম্বিত হওয়া জায়িয।
আবূ দাউদ শরীফ, শামায়িলুত তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ উনার ‘লিবাস’ অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَةْ اَسْـمَاءَ بِنْتِ يَزِيْد رَضِىَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْها قَالَتْ كَانَتْ يَدُ كُلُّ قَمِيْصِ رَسُّوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلَى الرُّسْغِ.
অর্থ: “হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারক উনার আস্তিন মুবারক হাত মুবারক উনাদের কব্জি মুবারক পর্যন্ত ছিলো। ”
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “আউনুল মা’বূদ শরহে আবূ দাউদ” কিতাব উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, رُسْغِ ‘রুসগ’ তথা কব্জি হলো যা হাতের তালু ও হাতের বাহুকে পৃথককারী। অর্থাৎ কব্জির নিচে হাতের তালু আর উপরে হাতের বাহু। (অনুরূপ বযলুল মাজহুদ, জামউল ওয়াসায়িল, শরহুল মানাবী, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, শরহুত ত্বীবী, মিরকাত ইত্যাদি কিতাবে আছে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে নিজে পর্দা করে না ও অধীনস্তদের পর্দা করায় না সে দাইয়ুস
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকারী, কটাক্ষকারী, অবমাননাকারীদেরকে শরঈ শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)