সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৬)
, ২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সোনা-চান্দি ও নগদ টাকার সম্মানিত যাকাত
সাধারণভাবে স্বর্ণ, চান্দি ও টাকা-পয়সা ইত্যাদি নিছাব পরিমাণ এক বছর কারো মালিকানাধীনে থাকলে, তার উপর যাকাত ফরয হয়।
বর্তমানে সোনা ও রূপায় কোনটি নিছাব হিসেবে উত্তম : সম্মানিত যাকাত যে সময়ে ফরয হয় সে সময়ে সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণের মূল্য সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মূল্যের সমান ছিল বিধায় সোনা ও রূপা উভয়টিই নিছাবের মূল সূত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাই এ সূত্রানুসারে উভয়ের যে কোন একটির মূল্য ধরলেই চলবে। তবে বর্তমানে যেহেতু রূপার মূল্য সোনার মূল্য অপেক্ষা অনেক কম। তাই সতর্কতা ও পরহেযগারী হলো কম মূল্যটি অনুযায়ী নিছাব গ্রহণ করা। অর্থাৎ সোনা ও রূপা উভয়টির মধ্যে যেটাকে নিছাব হিসেবে গ্রহণ করলে গরীবের উপকার হয় সেটাকেই নিছাব হিসেবে গ্রহণ করা উত্তম ও তাক্বওয়ার অন্তর্ভুক্ত। এতে একদিকে যেমন সম্মানিত যাকাতদাতার (ইবাদাতকারীর) সংখ্যা বাড়বে অন্যদিকে গরীবের বেশি উপকার হবে; যা সম্মানিত যাকাত, ছদাকাত ও ইনফাকের মৌলিক চাহিদা। এটাই ইমাম ও মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের গ্রহণযোগ্য মত। (মুখতাছরুল কুদূরী, আল হিদায়া)
খাদযুক্ত সোনা-চান্দির সম্মানিত যাকাত আদায়ের বিধান : সোনা-চান্দির মধ্যে খাদ থাকলে এবং সোনা-চান্দির পরিমাণ বেশি হলে উহাকে সোনা-চান্দি হিসাবেই যাকাত দিতে হবে, যদি উহা নিছাব পরিমাণ হয়।
আর যদি নিছাব পরিমাণ না হয়, তবে উহার মূল্য হিসাব করে অন্যান্য মালের সাথে মিলিয়ে নিছাব পূর্ণ হলে যাকাত আদায় করতে হবে।
যদি সোনা-চান্দি কম হয় ও খাদ বেশি হয় এবং উভয় মিলে যদি এক নিছাব বা তার চেয়ে বেশি হয়, তবুও যাকাত দিতে হবে।
খাদযুক্ত সোনা-চান্দি এত কম হয় যে, উভয় মিলেও এক নিছাব হয়না কিন্তু উহার দ্বারা ব্যবসা করা হয়, তবে উহা ব্যবসার মালের নিছাব হিসাবে হলে যাকাত দিতে হবে। অন্যথায় যাকাত দিতে হবেনা। (দুররুল মুখতার)
বিভিন্ন ক্যারেটের স্বর্ণের সম্মানিত যাকাত আদায়ের বিধান : যাকাত দাতার নিকট যে ক্যারেটের স্বর্ণ রয়েছে, সে ক্যারেটের স্বর্ণের মূল্য অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে। একাধিক ক্যারেটের স্বর্ণ থাকলে সে অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে যাকাত আদায় করতে হবে।
আহলিয়ার সম্পদ বা অলঙ্কারের যাকাত কে দিবে?
আহাল-আহলিয়ার সম্পদ একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হলেও মালিকানা যদি ভিন্ন হয় তাহলে অবশ্যই প্রত্যেককে তা পৃথকভাবে সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে। আহলিয়ার যদি অলঙ্কারও হয়। তা থেকেই তাকে সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاَقِمْنَ الصَّلٰوةَ وَاٰتِينَ الزَّكٰوةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ ۚ
অর্থ : “আর আপনারা (মহিলারা) সম্মানিত নামায কায়িম করুন ও সম্মানিত যাকাত আদায় করুন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের আনুগত্য করুন। ” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
তবে আহলিয়ার অলঙ্কার ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ না থাকলে সেক্ষেত্রে আহালের পক্ষ থেকে আহলিয়াকে প্রদানকৃত হাত খরচের টাকা থেকে বাঁচিয়ে বা কিছু অলঙ্কার বিক্রি করে হলেও সম্মানিত যাকাত আদায় করতে হবে। স্ত্রীর অলঙ্কারের যাকাত আহলিয়ার পক্ষ থেকে আহাল আদায় করলেও সম্মানিত যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
বিভিন্ন সঞ্চয়ী ফান্ডের টাকার সম্মানিত যাকাত আদায়ের বিধান : যারা সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা চাকরীজীবি তাদের বেতন-ভাতা থেকে কর্তিত টাকা সরকারীভাবে এই ফান্ডে জমা থাকে। তাই উক্ত সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা চাকরীজীবিরাই এই জমাকৃত টাকার মালিক। তাদেরকে এককালীন সুবিধা দেয়ার জন্যে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ টাকা যখন প্রয়োজন তখনই তোলা না গেলেও এ টাকার মালিকানা কিন্তু বাদ যায় না। এ টাকার মালিক সে নিজেই থাকে। এটা অনেকটা (সুদমুক্ত) সেভিংস একাউন্টের মতো। সেভিংস একাউন্ট থেকে কারেন্ট বা চলতি একাউন্টের মতো যখন ইচ্ছা তখন টাকা উত্তোলন করা যায় না। নির্দিষ্ট সময়ে টাকা উত্তোলন করতে হয়। এর আরো একটা উদাহরণ হলো, পাওনা টাকার মতো। পাওনাদারের কাছে টাকা পাওনা থাকা সত্ত্বেও, যখন তখন টাকা পাওয়া যায় না। তাই বলে কি পাওনা টাকার যাকাত দিতে হবে না? অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। যদি নিছাব পূর্ণ হয় এবং বছর পূর্ণ হয়।
কাজেই, মালিকানা যেহেতু বাদ যায় না; বরং টাকা যেহেতু যে মালিক তারই থাকে। সুতরাং এ টাকা নিছাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর অতিবাহিত হলে অবশ্যই এ টাকার যাকাত দিতে হবে।
ঠিক একইভাবে, এফডিআর, এপিএস, ডিপিএস অর্থাৎ ফিক্সড ডিপোজিট বা যে কোনো ধরনের মেয়াদ ভিত্তিক সঞ্চয় হলে সেটা নিছাব পরিমাণ হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হলেই সেটার উপর যাকাত ফরয হবে এবং তা আদায় করতে হবে। সেটা উত্তোলন করা যাক বা না যাক। কেননা যাকাত ফরয হওয়ার জন্যে মালিকানা শর্ত। যেহেতু মালিকানা রহিত হয়ে যাচ্ছে না, তাই নিছাব পূর্ণ হলে ও এ অবস্থায় এক বছর অতিবাহিত হলেই উক্ত টাকার উপর যাকাত ফরয হবে এবং তা আদায় করতে হবে।
আবার যেহেতু সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা চাকরীজীবিকে তাদের চাকুরী শেষে এককালীন সুবিধা দেয়ার জন্যে জিপিএফ অর্থাৎ প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন কেউ যদি কোনো প্রয়োজনে সেখান থেকে আগে টাকা নেয়, সেজন্যে তাকে তা আবার কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। এ নিয়ম এজন্যে করা হয়েছে যেন তাকে চাকরী শেষে যে পরিমাণ সুবিধা দেয়ার কথা সেটা পুরা করা যায়।
আসলে শরয়ী অর্থনীতি ব্যবস্থা চালু না থাকার কারণে একেক সরকার একেক নিয়ম চালু করে থাকে। কিন্তু কথা হলো, যদিও চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে টাকা নেয়ায় শর্ত হিসেবে তাকে পূর্বের উত্তোলনকৃত টাকা কিস্তিতে জমা দিতে হচ্ছে, এতে কিন্তু তার জমাকৃত টাকার মালিকানা রহিত হচ্ছে না; বরং জমাকৃত টাকার মালিকানা তারই থাকছে, যা চাকুরী শেষে সে প্রাপ্ত হবে।
কাজেই, প্রভিডেন্ট ফান্ডে প্রতি মাসে জমাকৃত কিংবা উত্তোলনকৃত টাকা কিস্তিতে জমাকৃত টাকার পরিমাণ নিছাব পরিমাণ হলে তার যাকাত আদায় করতে হবে।
একইভাবে বীমার প্রীমিয়ামের উপরও যাকাত হবে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত কিংবা পোষ্যের নামে বীমায় জমাকৃত মোট প্রিমিয়ামের যাকাত আদায় করতে হবে যদি নিছাব পূর্ণ হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হয়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












