সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৯)
, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ছদাক্বাতুল ফিতর শব্দের অর্থ
ছদাক্বাতুল ফিতর (صَدَقَةُ الْفِطْرِ) আরবী শব্দ। এখানে صدقة শব্দের অর্থ দান করা। আর الفطر শব্দের অর্থ ভঙ্গ করা। সুতরাং ছদাক্বাতুল ফিতরের সম্মিলিত অর্থ হল ভঙ্গ করার দান। যাকে যাকাতুল ফিতর বলেও উল্লেখ করা হয়।
পারিভাষিক অর্থে দীর্ঘ একমাস রোযার রাখার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন মালিকে নিছাবের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ২ জনের জন্যে এক ছা’ আটা বা তার মূল্য পরিমাণ যে সম্পদ গরীবকে প্রদান করা হয় তাকে ছদাক্বাতুল ফিতর বলে।
ছদাক্বাতুল ফিতর কে দিবেন
ছদাক্বাতুল ফিতর প্রদান করা ধনীদের জন্যে ওয়াজিব। দ্বিতীয় হিজরীর শা’বান মাসে ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়। পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন ছুবহে ছাদিকের পূর্বে ছ¦াহিবে নিছাব তথা নিছাব পরিমাণ মালের মালিক হলে তার উপর ছদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।
ছোট-বড়, স্বাধীন-গোলাম, পুরুষ ও মহিলা প্রত্যেকের জন্যই ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ اَبِـىْ صُعَيْرٍ عَنْ اَبِيهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صِلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَاعٌ مِنْ بُرّ اَوْ قَمْحٍ عَلٰى كُلّ اثْنَيْنِ صَغِيْرٍ اَوْ كَبِيْرٍ حُرّ اَوْ عَبْدٍ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى اَمَّا غَنِيُّكُمْ فَيُزَكّيْهِ اللهُ وَاَمَّا فَقِيْرُكُمْ فَيَرُدُّ اللهُ عَلَيْهِ اَكْثَرَ مِـمَّا اَعْطَاهُ.
অর্থ : “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবূ ছু’আইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। উনার পিতা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছোট-বড়, স্বাধীন-গোলাম, পুরুষ অথবা মহিলা প্রত্যেক দুইজনের উপর এক ছা’ গম (ফিতরাহ) নির্ধারিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের ধনীদেরকে এ দ্বারা পবিত্র করবেন এবং তোমাদের দরিদ্রদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের দানের চাইতে অধিক দিবেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ১৬১৯)
এমনকি গোলামের উপরও ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ فِى الْعَبْدِ صَدَقَةٌ اِلَّا صَدَقَةُ الْفِطْرِ.
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছদাক্বাতুল ফিতর ছাড়া গোলামের কোন ছদক্বা নেই। (মুসলিম শরীফ : কিতাবুয যাকাত : বাবু লা যাকাতা ‘আলাল মুসলিমি ফী আব্দিহি ওয়া ফারাসিহি : হাদীছ শরীফ নং ৯৮২)
ছদাক্বাতুল ফিতর কতটুকু দিবেন
যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব অর্থাৎ পবিত্র ঈদের দিন ছুবহি ছাদিক্বের সময় যাদের নিকট নিছাব পরিমাণ (সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য) সম্পদ থাকে তাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ এলাকা অনুযায়ী দুই মুদ (আধা ছা’) গম যা বর্তমান মেট্রিক পদ্ধতির হিসেবে অনুযায়ী ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা এর সমপরিমাণ মূল্য দান করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবূ ছু’আইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ ছাড়া আরো অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে-
كنا نؤدى زكوة الفطر على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم مدين من قمح، بالـمد الذى تقتاتون به.
অর্থ : “হযরত আসমা বিনতে আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বলেন, যে মুদ (পাত্র) দ্বারা তোমরা খাদ্যবস্তু গ্রহণ করে থাক এমন দুই মুদ (অর্ধ ছা’) আটা আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় ছদকাতুল ফিতর আদায় করতাম।” (মুসনাদে আহমদ ৬/৩৪৬)
ان النبي صلى الله عليه وسلم بعث مناديا ينادى فى فجاج مكة : الا ان صدقة الفطر واجب على كل مسلم، ذكر او انثى، حر او عبد، صغير او كبير، مدان من قمح، او صاع مـما سواه من الطعام.
অর্থ : “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন তিনি যেন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার পথে পথে এ ঘোষণা করেন যে- জেনে রেখো! প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ-মহিলা, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় প্রত্যেকের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব। দুই মুদ (আধা ছা’) গম কিংবা এক ছা’ অন্য খাদ্যবস্তু।” (জামে তিরমিযী ১/৮৫)
বস্তুত সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে, আটা বা তার মূল্য ব্যতীত অন্য কিছু যেমন- চাল, খেজুর ইত্যাদি দিয়ে ফিতরা দেয়া জায়িয নেই।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পুরুষের জন্য কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












